মানবতাবোধই পারে সমাজের রূপ বদলে দিতে: ইঞ্জি.জসীম উদ্দীন

 

এস আর শাহ আলমঃ

কেমন আছেন পাশের বাড়ির মানুষটি? এমন প্রশ্ন করার মতো সময়ও আমাদের নেই। ক্রমেই আমরা যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছি, এতে সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আমাদের চিন্তার পরিবর্তর জরুরি।

একটি কথা মনে রাখা ভালো- সমাজ নিয়ে ভাবনার বয়স লাগে না, প্রয়োজন চিন্তা ও মানসিকতা। শুধু নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকলে সমাজের কোন পরির্তন আসবে না। ভাবতে হবে চারপাশের মানুষ নিয়ে। পরিবর্তন ছাড়া সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। যখন সমাজের পরিবর্তন হয়, তখন কুসংস্কার সমাজ থেকে দূরিভূত হয়। শিক্ষা, সেবা, কমর্সংস্থান ও উন্নয়ন নিয়ে যখন ভাবেন কেউ তখন সমাজ আদি সমাজ ব্যবস্থার কুসংস্কার ছেড়ে নতুন সত্য, সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন সংস্কারমূলক সমাজ সৃষ্টির পথ আলোকিত হয়। সকল পরিবর্তনের জন্য প্রথমে প্রয়োজন তারুণ্য। যখন আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব পুরো সমাজের জন্য ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনছে, তখনই কিছু তরুণ কল্যাণমুখী কাজে নিয়োজিত করছেন, সমাজ, দেশ ও রাজনীতির ইতিবাচক পরিবর্তন করার জন্য অদম্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

অদম্য এক মানুষ ইঞ্জিনিয়ার মোঃ জসীম উদ্দিন প্রধান। জন্ম চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার পাথৈর ইউনিয়নের মালিগাঁও গ্রামে। তিনি নিঃস্বার্থভাবে সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে আশপাশের মানুষদের জন্য কিছু করতে সচেষ্ট হন। এমন মনোভাব নিয়েই গড়ে তুলেছেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ ইঞ্জিনিয়ার জসীম উদ্দিন সমাজকল্যাণ ফাউন্ডেশন।’ যে সংগঠন সামাজিক বৈষম্য কমিয়ে আনার জন্য কাজ করছে। ইঞ্জিনিয়ার মোঃ জসীম উদ্দিন আত্মকেন্দ্রিক না থেকে সমাজ কিংবা দেশের জন্য সমৃদ্ধি বয়ে আনার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। তার সঙ্গে কথা হলো নানা বিষয়ে।

আপনার স্বপ্ন সম্পর্কে জানতে চাইঃ

আমাদের সমাজের দিকে তাকালে প্রতিনিয়ত আমরা দেখতে পাই বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য, যা অতি দুঃখের হলেও সত্য। আজকের আধুনিক বিশ্বের ছোঁয়া সত্ত্বেও আমরা সেকালের সমাজ ব্যবস্থা হতে বেরিয়ে আসতে পারিনি। প্রাচীন সমাজ ব্যবস্থার কুসংস্কার, বৈষম্য ও অবমূল্যায়ন আমাদেরকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। শ্রেণি বৈষম্যের দিকে তাকালে দেখা যায় সমাজের একটি গরিব লোক শিক্ষিত, মেধাবী এবং নেতৃত্ব দেবার মত যোগ্যতা রাখলেও আমাদের গনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা এই লোকটিকে সুযোগ না দিয়ে তাকে অবমূল্যায়ন করে পিছনে ফেলে রাখে যা আমাদের জাতিকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়। পক্ষান্তরে, একজন সম্পদশালী ব্যাক্তি মেধা ও নেতৃত্বের যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও সমাজ তাকে নেতৃত্বের ভার দেয় যা আমাদের সমাজ ব্যবস্থার জন্য হুমকি স্বরূপ। এই সমাজ নিয়ে আমাদেরই ভাবতে হবে। স্বপ্ন দেখতে হবে সমাজ নিয়ে।

এছাড়া নারী পুরুষের বৈষম্য, জাতিগত বৈষম্যসহ নানান স্তর ও মাত্রার বৈষম্যে ছেঁয়ে গেছে আমাদের সমাজ। তাই আমি এই আধুনিকতার যুগে দাঁড়িয়ে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে আহ্বান জানাচ্ছি যে, আসুন আমরা সকলের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলে এমন একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার অঙ্গীকার করি যে, সমাজ আমাদের নিয়ে যাবে উন্নতির চরম শিখরে।

সমাজের পরিবর্তন কিভাবে আসতে পারে?

মানবতাবোধই পারে সমাজের রূপ বদলে দিতে, তাই আমাদের সবার মধ্যে মানবতাবোধ জাগাতে হবে। একজন মানুষ সঠিক শিক্ষাগ্রহণ না করলে তার প্রভাব সমাজের ওপর পড়ে। সে কারণে আমাদের সঠিক শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে।

মানুষের পাশে কিভাবে দাঁড়াতে চান?

আমি সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। এখানে গুরুত্ব পায় ইচ্ছা এবং কাজ করার স্পৃহা। যেখানে থাকি যেভাবেই থাকি যে পেশায়ই থাকি মানুষের পাশে থেকে কাজ করতে চাই সবসময়। আমি যা করি গরীব দুঃখী মানুষদের ভালোবেসেই করি। এ ধরণের কাজ করে আমি আনন্দ পাই। সেজন্য বর্তমান ডিজিটাল মিডিয়াকে, সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সবাইকে একসুতোতে বাঁধতেই গড়ে তুলেছি ইঞ্জিনিয়ার জসীম উদ্দিন সমাজকল্যাণ ফাউন্ডেশন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কল্যাণমূলক কাজ করে যাচ্ছি।একটি সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মানে সরকারকে সাহায্য করতে চাই। আমরা ফাউন্ডেশন ব্যানার থেকে ইতিমধ্য অনেক কাজ করেছি। সামনে অনেকগুলো কাজের বাস্তবায়ন খুব শীঘ্রই হবে।

দেশের রাজনীতি আপনি কিভাবে দেখছেন?

জাতির জনক বঙ্গবন্ধর সুযোগ্য কন্যা, দেশমাতা শেখ হাসিনার অধীনে স্বাধীনতার ৫১ বছর পরে দেশ আজ অনেকদূর এগিয়েছে এটা এক নির্মোহ সত্য। এমনকি বিরোধীরাও আজ একথা স্বীকার করতে বাধ্য। শিক্ষা,স্বাস্থ্য, কৃষি,প্রযুক্তি সহ সকল খাতে, জিডিপি বৃদ্ধি, প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় ঈর্ষণীয়। তবে রাজনীতিতে অতিকথন (কথা চালাচালির রাজনীতি), সমতা, অধিকার, দুর্নীতি, শ্রেণিবৈষম্য আজ রাজনীতিকে বিষাক্ত করেছে। আমাদের ছোটবেলার স্বপ্নের দেশ কিংবা ভাবনার দেশটাকে অদৃশ্যভাবে অনেক দূর পিছিয়েছে। মানবিকতার রাজনীতি আজ অনুপস্থিত। স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও সোনার বাংলাদেশ কোন অবস্থানে আছে তা সবাই অনুভব করতে পারছে।

দেশ নিয়ে আপনার ভাবনা কি?

স্বাধীনতার ৫১ বছর অতিক্রম করেছে দেশ। একটি দেশের জন্য এই সময় খুব কম না হলেও অনেক বেশিও না। নানাবিধ সমস্যা মোকাবিলা করে বিগত ৫১ বছরে আমাদের অর্জন ঈর্ষণীয়। বর্তমানে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ। এ দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি প্রযুক্তি, শিল্প, সাহিত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। সব উন্নয়নের মূলে রয়েছে আমাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়ন। শিক্ষার হার বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে শিক্ষার মান। শিক্ষার্থীরা আজ শুধু পাঠ্যপুস্তকে সীমাবদ্ধ না থেকে করছে ইন্টারনেটভিত্তিক জ্ঞানচর্চা। স্বাধীনতার এই ৫১ বছরে আজ আমার প্রত্যাশা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে উন্নয়নের যে জোয়ার বইছে, সেই জোয়ারে যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে। মেলে ধরতে চাই আমাদের বাংলাকে, বাংলাদেশকে বিশ্বের মানচিত্রে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আজকের দিন-তারিখ
  • বৃহস্পতিবার (সকাল ৬:২২)
  • ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০