বিএনপি নেতা রিগ্যান প্রতারণার তিনশ কোটি টাকা নিয়ে সুইজার ল্যান্ডে পলায়ন 

মো.মজিবুর রহমান রনিঃ
বিলাস বহুল ডুপ্লেক্স বাড়ি আর মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি এবং  ঠিকাদারী ব্যবসায় চমক দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে প্রায় তিনশত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে দুবাই হয়ে সুইজারল্যান্ডে হাজীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক  সম্পাদক ও ৫নং হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পশ্চিম শাখা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইসমাইল হোসেন রিগ্যান পালিয়ে যাওয়ার  অভিযোগ উঠেছে।
এমন অভিনব প্রতারণার কথা শুনলে রীতিমত যে কেউ চমকে উঠবে। বড় বড় ব্যবসায়ী, সরকারী কর্মকর্তা, প্রবাসী, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ রিগ্যানের প্রতারণা থেকে কেউ রেহায় পায়নি।
অভিনব কায়দায় কয়েকশ’ মানুষের তিনশ’ কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছে এ প্রতারক।
চট্টগ্রামের খুলশীর অভিজাত ফ্ল্যাটে বসবাস এবং আলিশান বাড়িতে অফিস স্থাপন করে প্রতারণার ডালপালা বিস্তার করে ব্যবসায়িক পাটনার করার কথা বলে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা ইসমাইল হোসেন রিগ্যান নামে ওই প্রতারক।
সে হাজীগঞ্জ উপজেলার ৫নং হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের অলিপুর পাটওয়ারী বাড়ির মফিজুল ইসলামের ছেলে।
এ ভয়ংকর প্রতারণক রিগ্যান চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়ন ছাত্রদলের আহবায়ক এবং উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহবায়ক হিসেবে পরিচিতি পায়। তার চাচা হাজীঞ্জ উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও হাজীগঞ্জ সদর পশ্চিম ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আনিসুর রহমান কানু পাটওয়ারীর হাত ধরে রাজনীতিতে অংশ নিয়ে ভংয়কর প্রতারক বনে যায় রিগ্যান।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, চাচা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও ৫নং সদর ইউনিয়ন পশ্চিম শাখা বিএনপির সভাপতি অনিছুর রহমান কানু পাটওয়ারীর সান্নিধ্যে উপজেলা ও সদর ইউনিয়ন পশ্চিম শাখা বিএনপির কমিটিতে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে পদ-পদবীতে স্থান পায় রিগ্যান।
প্রতারণক রিগ্যান তার চাচা উপজেলা বিএনপির প্রভাবশালী নেতা আনিছুর রহমান কানু পাটওয়ারীর সহায়তায় চাঁদপুর এবং হাজীগঞ্জে যেসব ব্যক্তির কাছ থেকে ব্যবসায়িক পাটনার করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। বিএনপির কমিটিতে চাচার সাথে ভাতিজা প্রতারক রিগ্যানও মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে স্থান করে দেওয়া হয় বলে বিশ^স্ত সূত্রে জানা গেছে।
রাজনীতিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ঠিকাদারী এবং মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি শো-রুমের ব্যবসা দেখিয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলার ১১নং হাটিলা পশ্চিম ইউনিয়নের ধড্ডা গ্রামের ফারুকের ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা, হাজীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবায়েদুর রহমান খোকন বলির ১৯ লক্ষ টাকা, একই উপজেলার ৫নং হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের কৈয়ারপুর এলাকার রোকন তালুকদারের ৪৬ লক্ষ টাকা, হাজীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী শরীফের ৭লক্ষ টাকা, চাঁদপুরের জামাল সুমনেরা ৮৫ লক্ষ টাকা, হোসাইন সবুজের ৩৩ লক্ষ টাকা, সালাউদ্দিনের ৩৩ লক্ষ টাকা। এছাড়াও  বিভিন্ন ব্যবসায়ী, প্রবাসী এবং রাজনৈতিক নেতাসহ প্রাপ্ত তালিকা অনুযায়ী প্রায় ৪৪জনের কাছ থেকে ব্যবসায়িক পাটনার করার কথা বলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
হাজীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী, প্রবাসী, রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে ব্যবসায়র প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েশ কোটি টাকা। অনেককে মাসিক হারে ব্যবসার মুনাফা দিয়ে লোভ দেখায়। আবার অনেকে লাভের টাকাও পুনরায় রিগ্যানের ব্যবসায় বিনিয়োগ করে।
রিগ্যান আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর বহু আর্থিক লেনদেনের খবর বের হতে শুনা যায়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
প্রতারক রিগ্যান তার চাচা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান কানু পাটওয়ারীর আর্শিবাদে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রতারণার জাল বুনে। হঠাৎ করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যায় রিগ্যান।
তার গ্রামের বাড়িতে ৫ কোটি টাকা মূল্যেও বিলাস বহুল ডুপ্লেক্স ভবন, দামী দামী ব্রান্ডের রেন্ট-এ কার বা ভাড়ায় গাড়ি লাগানো, সড়ক ও জনপথ বিভাগের ঠিকাদারীসহ নানা ব্যবসার নামে মানুষের বিশ্বাস অর্জনের পর বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গা ঢাকা দেন।
ভাড়ায় চালানোর নাম করে নেয়া একেকটি গাড়ি ৪/৫ জনের কাছেও বিক্রি করেছেন। যে ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন সেই বাড়ির অপর এক ফ্ল্যাটের এক বাসিন্দার মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি বিক্রি করে দেন পানির দরে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এখন ইসমাইল হোসেন রিগ্যানের খুলশীর বাসায় ভিড় করছে।
শত শত মানুষের টাকা মেরে দিয়ে পরিবার পরিজনসহ রিগ্যান প্রথমে দুবাই পাড়ি দেয় সেখান থেকে সুইজার ল্যান্ডে পালিয়ে যায় বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
রিগ্যান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আ.জ.ম নাছিরের সাথে সুম্পর্ক আছে এমন পরিচয় দিয়ে সিটি কর্পোরেশনের বড় বড় প্রজেক্টের ঠিকাদারী, পাহাড়ী অঞ্চলে সড়ক নির্মাণ, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেল এবং মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন প্রকল্প, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ চট্টগ্রামে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ঠিকাদারের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকল্পের পাশাপাশি চট্টগ্রাম ইপিজেডের বিদেশী কোম্পানিগুলোতেও গাড়ি সাপ্লাই দিতেন বলে প্রচার করেন। গ্লোবাল কর্পোরেশন নামের কোম্পানি গঠন করে ব্যবসা কার্যক্রম চালু করেন।
দামী দামী ব্রান্ডের গাড়ি ভাড়া নিয়ে তা একাধিক ব্যক্তির কাছে নকল কাগজপত্র তৈরি করে বিক্রয় করাসহ প্রতারণার বহু তথ্য রয়েছে।
তার এ প্রতারণার শিকার হয়ে ডাক্তার, পুলিশ, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে অসংখ্য মানুষ মাসিকভিত্তিতে ভাড়ায় গাড়ি দিতে থাকে। প্রতি মাসের নির্দিষ্ট তারিখে ভাড়ার টাকা ব্যাংকে বা নগদে পেয়ে যাওয়ায় বহু গাড়ি মালিক এক বছরেও তার গাড়ির চেহারা দেখেননি। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন রিগ্যান শহরের বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে ১৪২টি কার ও জিপ গাড়ি নিয়ে ভাড়ায় পরিচালনা করছিলেন।
এ ভাবে বিভিন্নজনের বহু গাড়ি রিগ্যান একাধিক মানুষের কাছে বিক্রি করে দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আজকের দিন-তারিখ
  • বৃহস্পতিবার (রাত ৩:২৩)
  • ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০