মাজহারুল রাসেল : সোনারগাঁও থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে সুস্বাদু আতা ফল। মিষ্টি রসে যেন প্রাণ জুড়িয়ে যায়। এজন্যই কবি বলেছেন, আতা গাছে তোতা পাখি/ডালিম গাছে মৌ/এত ডাকি তবু কথা/ কও না কেন বউ? ফুল, ফল আর ফসলে ভরা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। এ দেশের প্রকৃতিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানা গাছ গাছালি। প্রকৃতির শোভাবর্ধনকারী এসব বৃক্ষরাজির সৌন্দর্য আমাদেরকে যেমন আকৃষ্ট করে তেমনি রয়েছে এর নানা উপকারিতা।
বর্তমানে নানা কারণে প্রকৃতির মাঝ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে দেশীয় মুল্যবান এসকল উদ্ভিদরাজি। তেমনি একটি দেশীয় বৃক্ষ হচ্ছে আতাগাছ। আর এ আতা গাছেই জন্মে সুস্বাদু ফল ‘আতা’। দেশীয় ফল আতার আরেক নাম শরীফা। নোনা নামেও এটি পরিচিত। তবে আতা নামেই এ ফলটি সারা দেশে বেশি পরিচিত। আমাদের দেশে বসত বাড়ির আঙ্গিনায় ও ঝোপ জঙ্গলে আতা গাছ জন্মে।
উপকারী এই আতা গাছ সোনারগাঁও থেকে প্রায় বিলুপ্তির পথে। আগে বিভিন্ন রাস্তায়, মহাসড়কে, বাড়ির আঙ্গিনায়, পুকুর পাড়ে দেখা মিলতো আতা গাছের; কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এখন আতা গাছ রোপণ না করায় গাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে । বিগত দিনগুলোতে কিছু মানুষ আতাফল বিক্রি করে দৈনিক আয় করতেন। আতা ফলের ভিতরে ছোট ছোট কোষ থাকে। প্রতিটি কোষের ভিতরে একটি করে বীজ থাকে। বীজের পাশের রসালো ও নরম অংশই খেতে হয়। কাঁচা ফলের বীজ সাদা হয় ও পাকা ফলের বীজ কালো রঙের হয়। তবে এই বীজ বিষাক্ত। ফলটি লালচে ও সবুজ বর্ণের হয়ে থাকে। এ ফলটিতে রয়েছে নানা পুষ্টি ও ঔষুধি গুণাগুণ।
জানা গেছে, প্রতি ১০০ গ্রামে আতা ফলে রয়েছে- শর্করা ২৫ গ্রাম, জল ৭২ গ্রাম, প্রোটিন ১.৭ গ্রাম, ভিটামিন এ ৩৩ আইইউ, ভিটামিন সি ১৯২ মিলিগ্রাম, থিয়ামিন ০.১ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাবিন ০.১ মিলিগ্রাম, নিয়াসিয়ান ০.৫ মিলিগ্রাম, প্যানটোথেনিক অ্যাসিড ০.১ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩০ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৭ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১৮ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২১ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৩৮২ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৪ মিলিগ্রাম।
পুষ্টিবিদদের মতে, আতা ফল আমাদের দেহ গঠনের জন্য খুব উপকারি। আতা ফলে রয়েছে খাদ্যআঁশ যা হজমশক্তি বৃদ্ধি করে ও পেটের সমস্যা দূর করে। আতাফলে রিবোফ্লাভিন ও ভিটামিন সি আছে। আর এই ভিটামিন উপস্থিতির কারণে দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়। যাদের চোখের সমস্যা তারা আতা ফল খেলে চোখের ভালো উপকার পাবেন। এতে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম। শরীরের হাড় গঠন ও মজবুত রাখার জন্য এফল কার্যকর। আতা ফলের ম্যাগনেসিয়াম মাংসপেশির জড়তা দূর করে এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
অন্যদিকে আতাফলে থাকা উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। দুরারোগ্য ব্যাধিকে দূর করে শরীরকে সুস্থ রাখতেও সাহায্য করে।দেশীয় প্রজাতির আতা ফল গাছটিকে আমাদের নিজেদের প্রয়োজনেই রক্ষা করা প্রয়োজন বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।