চাঁদপুরের নারী উদ্যোক্তা সীমা খান এর “বিজয়ী” হওয়ার গল্প

 

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

পৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’। নারী ও পুরুষকে এভাবেই দেখেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বর্তমানে নারীরা কোনো কাজেই পিছিয়ে নেই। তারা তাদের নিজ যোগ্যতায় এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ঘরে বাইরে সব পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করছে। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা। অনলাইন ব্যবসায়ের প্রবর্তনের ফলে নারীরা আরও বেশি পরিমাণে সফল উদ্যোক্তায় পরিণত হচ্ছে। তেমনি একজন সীমা খান।” Chandpur Make up World  এবং Fashion House “নামক একটি ব্রান্ড প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসা করছেন নারী উদ্যোক্তা সীমা খান।

সীমা খান সম্প্রতি মুখোমুখি হয়েছেন গ্রীন বাংলা নিউজের প্রতিনিধির।শুনিয়েছেন তার সফলতার গল্প। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন গ্রীন বাংলা নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক।

প্রতিবেদক : আপনার বিজয়ী নারী উদ্যোক্তা হওয়ার এর শুরুর গল্পটা জানতে চাই-

উত্তরঃ–আসসালামু অলাইকুম, আমি সীমা খান চাঁদপুর এর মেয়ে কাজ করছি বিউটি প্রোডাক্ট এবং থ্রি পিছ নিয়ে।  আমি চাঁদপুর সরকারী কলেজ থেকে এম এ কমপিলিট্ করেছি কিন্তু বিয়ে সংসার আর বাচ্চা নিয়ে আমার চাকুরী টা করা হলো না, বিয়ের পরও অনেক অনেক ইচ্ছে ছিলো চাকুরী করবো, নিজের একটা আলাদা পরিচয় গড়বো কিন্তু হয়ে উঠলো না।


মানসিক ভাবে অনেক টা ভেঙে পড়েছিলাম এতো কষ্ট করে লেখা পড়া করে জীবনে কিছু করতে পারলাম না, মনে মনে অনেক কষ্ট পেতাম। একদম হাজবেন্ড এর টাকার উপর নির্ভরশীল হয়ে আছি। জানি এটা স্বাভাবিক, কিন্ত আমার কাছে ভালো লাগতো না। যখন এমন নয় ছয় ভাবছি সেই মুহূর্তে আমার মা অনেক টা আশার আলো হয়ে উঠল। মায়ের অনেক ইচ্ছে ছিলো মেয়ে জীবনে বড় কিছু হোক, কিন্ত যখন দেখলো সেই সময় শেষ তখন ভাবলো ছোট খাটো অনলাইন বিজনেস শুরু করা যায়। আমার হাজবেন্ড আবার এটা চাইতো না, কিন্ত অনেক খড়কুটো পোড়ানোর পড় অবশেষে রাজী হলো। বিজনেস এর জন্য সর্ব প্রথম টাকা টা আমার মাই দিলো। মাত্র ২০০০০টাকা নিয়ে মায়ের দোয়া আর হাজবেন্ড এর সাপোর্ট নিয়ে আমার যাত্রা শুরু।

প্রতিবেদকঃ আপনার পন্য সম্পর্কে বলুন-

উত্তর- বিউটি প্রোডাক্ট এবং থ্রি পিছ।

প্রতিবেদকঃ আপনার ব্যবসায়িক অবস্থান কীভাবে বেড়েছে, ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি-

আমি অল্প পুঁজি নিয়ে নেমে ছিলাম, মাত্র ২০০০০টাকা নিয়ে আমার যাত্রা শুরু। অল্প কিছু প্রডাক্ট উঠালাম, আল্লাহর রহমতে ভালো সেল হলো মোটামুটি ভালো রেসপন্স পেয়েছি, ভেজাল এর ভীড়ে সবাই অরজিনাল পন্য পেয়ে অনেক খুশি, যাক আলহামদুলিল্লাহ সব কিছু র জন্যে। ভাবলাম এই বার কিছু থ্রি পিছ নিয়ে কাজ করি, মাশাআল্লাহ অনেক ভালো রেসপন্স এই বারও পেলাম।

আমি আগে থেকেই বিজনেস করতাম কিন্তু বিজয়ীতে যাওয়ার পর আমার পরিচিতি আরও বাড়লো আমাকে সবাই চিনতেছে জানতেছে এবং আলহামদুলিল্লাহ ভালো সেলস হচ্ছে এবং বিজয়ী থেকে ফ্রী ট্রেনিং গুলো নিয়ে আমি বিজনেসের আইটেম আরো বাড়িয়েছি।

প্রতিবেদকঃ নারী হিসেবে ব্যবসা করতে এসে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার সন্মুখীন হয়েছেন কি?


উত্তরঃ আমাদের সমাজে সবসময়ই সব পুরুষের চোখে নারীরা ছোট হয়ে থাকে। নারীরা কিছু করবে নারীর টাকা ইনকাম করবে এটা সব পুরুষ মেনে নিতে পারেনা।।

পেইজ টাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথ টা সহজ ছিল না অনেক কষ্ট এবং নানাবিধ ঝামেলার সম্মুখীন ও হতে হয়েছে। সমাজ বড় অনড় সব কিছু এতো সহজে মেনে নিতে চায় না। এতো লেখা পড়া করে কেনো অনলাইন এটা ভালো না, মা তখন বলতো তুই কর কারো কোনো কথা পাত্তা দিস না। ইনশাআল্লাহ মায়ের দোয়া আছে আর কি? নেমেছি পথে আর কাজ করে যাচ্ছি।

তবে আবার নতুন করে এক আলোর দেখা পেলাম তা হলো নারী জাগরনের নতুন উজ্জ্বল মুখ তানিয়া ইশতিয়াক খান আপুর বিজয়ী নামে একটি চমৎকার সংগঠনে। যা আমাকে নতুন করে একটা পরিচিত দিয়েছে। আমি খুব আনন্দিত যে এখন বিজয়ীর একজন সদস্য হতে পেরে। মানুষের জীবনে প্রাপ্তির শেষ নেই, তাই বিজয়ীর মাধ্যমে আরো ভালো কিছু পেতে এবং ছোট এই স্বপ্ন টাকে আরো বড় করতে এই পথ চলা। আজ একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে তৈরি করা র জন্যে চেষ্টা করছি। সফল নারী উদ্যোক্তা হতে অনেক সময় লাগবে, সফল হতে পারবো কিনা তা সময় বলে দিবে। একজন উদ্যোক্তার পিছনের অনেক ঘটনা থাকে এটাই সত্যি।যেহেতু বিজয়ীর সাথে আছি তাই সকল বাধা অতিক্রম করে আমি সামনে এগিয়ে যাবোই যাবো।

প্রতিবেদকঃ উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি কার সহযোগিতা ও উৎসাহ পেয়েছেন এবং কিভাবে পেয়েছেন?

উত্তরঃ আমার উদ্যোক্তা হওয়ার পিছনে আমার মায়ের। আর আমার স্বামীরও পেয়েছি।তারপর বিজয়ীতে আসার পর তানিয়া ইশতিয়াক খান বিজয়ীর ফাউন্ডার আপুর সাপোর্ট পেয়েছি।আপু এতো সুন্দর করে আমাদের মটিভেট করেন তা বলার মত না।আপুর অনেক সাপোর্ট আমাদের চাঁদপুরের নারীদের উপর। চাঁদপুরের নারীদের আপন আলোয় আলোকিত করার লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে বিজয়ী।

প্রতিবেদক- নতুন নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কি?

উত্তর- আমি এইটুকুই বলব কেউ কিছু করতে চাইলে প্রথম প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিজয়ী কে বেছে নাও। অবশ্যই সফল হবে।আর জীবনে কান কথা না শুনে চলবে সেই জীবনে সাকসেস আসবেই ইনশাআল্লাহ।

এগিয়ে যাও… সফলতা আসবেই…

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আজকের দিন-তারিখ
  • শনিবার (সন্ধ্যা ৭:০১)
  • ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১১ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০