মোঃ হোসেন গাজী, হাইমচরঃ
প্রকৃতিতে শীতের আধিপত্য বেড়েই চলছে। বইতে শুরু করেছে উত্তুরে হাওয়া। বিকেল শেষে সন্ধ্যা হতেই আবছা কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাচ্ছে প্রকৃতি। ভোরের মিষ্টি আলো ধানক্ষেতের ওপর ছড়ানো শিশির কণা স্পর্শ করতেই মুক্তাদানার মতো চিক চিক করে ওঠে, হাটবাজারে টাটকা শাকসবজি,পাখির গুঞ্জন, ভোরে বৃক্ষে বৃক্ষে কুয়াশার রূপালি ফোঁটা, বৈকালিক মৃদু শীতল হাওয়া জানান দেয় ঋতুর পালাবদলে শীতের আগমনীবার্তা।
এই বার্তা রবি মৌসুম শুরুর জানান দিচ্ছে। এরই মধ্যে শীতকালীন সবজির চাষ শুরু করেছেন হাইমচরের চাষিরা। প্রতিবছর আগাম উৎপাদিত সবজি বাজারে তুলে বিক্রয়ে ভালো দাম পেয়ে থাকেন চাষিরা। তাই আগাম সবজি আবাদে আগ্রহী তারা। অন্যান্য ফসলের তুলনায় শীতকালীন সবজি চাষ লাভবান হওয়ায় কৃষকেরা এদিকেই ঝুঁকে পড়েছেন বলে জানান এলাকার চাষিরা।
শীতের শুরুতেই বাজারে বিক্রি করে বেশি টাকা আয়ের আশায় চাষিরা এখন জমিতে শীতকালীন শাকসবজির চারা বপন ও পরিচর্যার কাজ করছেন। এবারে হাইমচরের কৃষি প্রধান গ্রামগুলোতে শীতের সবজির বাম্পার ফলন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কৃষি সংশ্লিষ্ট সকলে।
হাইমচরের মাঠে মাঠে ঘুরে দেখা যায়, ভোর থেকে কৃষকরা নানা রকম সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। লাল শাক, মূলা শাক, পালং শাক, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলাসহ বিভিন্ন রকমের শাকসবজি চাষে দিনভর কাজ করে যাচ্ছেন কৃষকরা।
ক্ষেত থেকে টাটকা সবজি সংগ্রহ করতে অনেকেই ক্ষেতে আসছেন। আবার অনেকেই সকালে হাঁটতে বের হয়েছেন। কেউ কেউ আবার হাঁটতে বের হয়ে ক্ষেত থেকে টাটকা সবজি কিনছেন।
কৃষক বারেক মিয়া বলেন, প্রতিদিন তিনি তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে সারাদিন মাঠে কাজ করেন। শীত এলেই তারা দু’জনে মিলে চাষাবাদ করেন। এতে যা টাকা উপার্জন হয় তা দিয়ে কোনো মতে তাদের সংসার চলে।
বারেক মিয়ার মতো আরও অনেকেই বিভিন্ন জমিতে চাষাবাদ করেন। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে কয়েক মাস পানিতে জমি তলিয়ে যাওয়ার কারণে সেখানে তারা চাষাবাদ করতে পারে না। বর্ষা চলে যাওয়ার পরে আবার জমি উর্বর হওয়ায় সেখানে শীতকালীন সবজির ভালো ফলান হয়।
ফসলি জমিতে আগাম জাতের সবজি চাষ ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে। আর উৎপাদিত সবজি স্থানীয় বাজারে চড়া মূল্যে বিক্রি করে কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন।
দেশের মোট সবজি চাহিদার একটা অংশ চাঁদপুর ও আশেপাশের অঞ্চল থেকে যোগান হয়। হাইমচর সেখানে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। এ অঞ্চলে শুধু মাঠে নয়, চাষিদের ঘরের আঙিনায় ও বহু চাষির উঠান জুড়ে বাণিজ্যিকভাবে সবজি আবাদ ও উৎপাদন হচ্ছে।
এ বিষয়ে হাইমচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন বলেন এবার শীতকালীন শাকসবজিসহ সব রকমের ফসলের ভালো ফলন হচ্ছে। প্রান্তিক চাষিদের মাঝে শীতের শাকসবজির মানসম্পন্ন বীজ এবং সার দেওয়া হয়েছে। আশা করি এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ এবং উৎপাদন হবে।
তিনি আরও বলেন, এখন মাছ, গোশতের চেয়ে সবজির চাহিদা বেশি। বাজারে দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে কৃষকরা নিজেদের উদ্যোগে শীতকালীন শাকসবজি চাষ করছে।