যশোর বেনাপোল মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ গাছে বাড়ছে মানুষের মৃত্যুঝুঁকি

 

শাহাবুদ্দিন মোড়ল ঝিকরগাছা যশোর :

যশোর বেনাপোল মহাসড়কের দুপাশে অবস্হিত মৃত, আধা মৃত, রাস্তার উপর হেলে থাকা, রাস্তার উপর গোড়া সহ দাঁড়িয়ে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ গাছের কারণে দিন দিন মানুষের জান ও মালের ঝুঁকি বাড়ছে। রাস্তার গাছের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে প্রাণঘাতী দূর্ঘটনা। হচ্ছে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি।

যশোর বেনাপোল মহাসড়কের লাউজনি থেকে শার্শা পর্যন্ত চার শতের কিছু বেশি পুরনো রেইনট্রি গাছ আছে। এই গাছগুলোর বয়স ১৭৮ বছর। সবগুলো গাছই এখন বয়সের ভারে মৃতপ্রায়। ২০২০ সালের আম্ফান ঝড়ে এর মধ্যে প্রায় ১৫টি গাছ উপড়ে পড়ে। এছাড়া প্রায় ৫০ টি গাছ সম্পুর্ন ভাবে মরে শুকিয়ে গেছে। এই গাছের শুকনো ডাল পড়ে এবং গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে গত ৫ বছরে অন্তত ১০ জন মানুষ মারা গেছে, আহত হয়েছে বহু সংখ্যক। বিভিন্ন সময় ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়ে বেশ কয়েকটি বাড়ি ঘর মাটির সাথে মিশে গেছে। প্রাণহানি ঘটেছে গবাদিপশুরও। এখনও প্রতিনিয়ত এই গাছের কারণে যশোর বেনাপোল মহাসড়কে কোথাও না কোথাও দূর্ঘটনা ঘটছে। তাছাড়া অন্তত ১৫ টি রেইনট্রি গাছ এমনভাবে রাস্তার উপর হেলে আছে যে এর নীচে দিয়ে পরিবহন, কাভার্ড ভ্যান কিংবা মালবাহী ট্রাক গেলে গাছে বেধে যায়।

২০১৭ সালে যশোর বেনাপোল মহাসড়ক চারলেন করার একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। কিন্তু পরিবেশবাদীরা গাছ কেটে রাস্তা সম্প্রসারণের বিরোধিতা করে হাইকোর্টে একটা রীট পিটিশন দায়ের করেন। শোনা যায় তারা শতবর্ষী গাছের সংখ্যার মিথ্যা তথ্য এবং গাছের বর্তমান অবস্থার পরিবর্তে ফটোশপে এডিট করা ছবি দিয়ে কোর্টকে বিভ্রান্ত করেন। তখন কোর্ট ৬ মাসের জন্য গাছ কাটার উপর স্থগিতাদেশ দেন। এর ফলে দেশের বৃহত্তম স্থল বন্দরের ব্যস্ততম এই মহাসড়কটি চারলেনে উন্নীত করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে ২৮৮ কোটি টাকা খরচ করে রাস্তার দুপাশে গাছ রেখেই সড়কের পুননির্মাণ কাজ করা হয়। নতুন রাস্তা নির্মাণের পর দুপাশে গাছ থাকার ফলে এই মহাসড়কটি এখন সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম ক্ষেত্রে পরিনত হয়েছে।
এই মহাসড়কের পাশে অবস্হিত বেনেয়ালি গ্রামের শাহিন আহমেদ বলেন, বেনেয়ালি গির্জার সামনে সড়কের দুপাশে দুটি গাছ হেলে রাস্তার উপর গেটের মত হয়ে আছে। ফলে কোনো যানবাহন তার সঠিক লেনে চলতে না পারায় বিপরিতগামী গাড়ির সাথে সংঘর্ষ বাঁধে।

ট্রাকচালক আবু বক্কার বলেন, সারাদেশ গাড়ি চালিয়ে বেড়াই কিন্তু যশোর বেনাপোল রোডের মত রাস্তার ওপর গাছ আর কোনো সড়কে দেখিনি। গাছের জন্য এই রোডে গাড়ি চালাতে ভয় লাগে।

বাংলাদেশ ভারত চেম্বার অফ কমার্স এর পরিচালক মতিয়ার রহমান বলেন, পৃথিবীর কোথাও মহাসড়কের ওপরে গাছ নেই যেটা যশোর বেনাপোল মহাসড়কে আছে। পৃথিবী যেখানে এগিয়ে চলেছে সেখানে দেশের সর্ব বৃহৎ স্থল বন্দরের রাস্তাটি গাছের কারণে ৬ লেন না হওয়াটা দেশের অর্থনীতির জন্য অশুভ লক্ষ্মণ। তিনি মানুষের জান ও মালের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এই গাছগুলো দ্রুত অপসারণ দাবী করেন।

সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই গাছগুলো জেলা পরিষদের অধীন। তারা ইচ্ছা করলে এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সময়ের প্রয়োজনে গাছ কেটে রাস্তাটি ৬ লেন করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল বলেন, গাছ মারার বিপক্ষে হাইকোর্টের রায় আছে। সেখানে বিষয়টি নিষ্পত্তি হলে গাছ কাটার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

এদিকে এই ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো অপসারণ করে যশোর বেনাপোল মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত করার দাবীতে স্থানীয় জনগণ, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো গণস্বাক্ষর, মানববন্ধন, স্মারক লিপি প্রদান সহ বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আজকের দিন-তারিখ
  • বৃহস্পতিবার (সন্ধ্যা ৬:১২)
  • ১০ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ৭ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
  • ২৫শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শরৎকাল)
পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১