তালগাছই পারে বজ্রপাত থেকে সুরক্ষা দিতে- সেই গাছ এখন জলাশয় মাঝ খানে

 

শাহাদাত হোসেন, রাউজান প্রতিনিধি:

গভীর ভাবে মাটি খনন করায় তাল গাছ এখন জলাশয় মাঝ খানে এক পায়ে দাড়িয়ে সব গাছ ছাড়িয়ে উঁকি মারে আকাশে।এমন দৃশ্য চোখে পড়ে রাউজানের পূর্ব রাউজান এলাকায়। এক পায়ে দাড়িয়ে তাল গাছকে নিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন কবিতা।একসময় গ্রাম গঞ্জে, বাড়ি আঙ্গিনায় থেকে শুরু করে আনাচে কানাচে,রাস্তার দু’পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো তাল গাছের নয়নাভিরাম দৃশ্য চোখে পড়তো। কালের পরিবর্তনে ও কিছু মাটি খেকোর কারণে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের এ তালগাছ। তালগাছ সব অঙ্গ থেকে নানারকমের জিনিস তৈরী করা হয়।তালগাছের কিছুই ফেলার মতো না।সব কিছু লাগে কাজে। যেমন তালগাছের তাল পাতা দিয়ে ঘর ছাওয়া, হাতপাখা,তালপাতার চাটাই, মাদুর, আঁকবার পট, লেখবার পুঁথি, পুতুল ইত্যাদি বহুবিধ সামগ্রী তৈরী করতো।এমনকি তালের কাট দিয়ে বাড়ি, নৌকা, হাউস বোট ইত্যাদি তৈরি করতো শিল্পীরা।এছাড়াও পাড়া-মহল্লায় ঘরে ঘরে তাল রস দিয়ে তাল পিঠাসহ নানারকমের পিঠা বানানো হতো। ​​তালের রস এবং ​তালের ফল ছিল বাঙালির জন্য সুস্বাদু খাদ্য।পাকা তালের পিঠা আর কাঁচা তালের শাঁস খেতে দারুণ সুস্বাদু ছিল।তাছাড়া তাল পিঠা দিয়ে আত্মীয়ের, মেয়ের শ্বশুর বাড়িসহ নানান আত্মীয়তার বন্ধন রচিত হতো।এখন সেই আত্মীয়তা আর নেই।যেভাবে দিন দিন তালগাছ বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে নতুন প্রজম্মরা সেই তালের স্বাদ পাবে। তাদের কাছে সেটি গল্পের মতো হয়ে থাকবে।নুরুল আলম ও জাহাঙ্গীর নামে দুই কৃষক জানান, জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে কাঁচা তাল ফলের শাঁস খাওয়ার জন্য চারিদিকে হাক-ডাক পড়ে যেতো। চলতো শাঁস খাওয়ার তুমুল প্রতিযোগিতা। আবার শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে তালগাছের তলায় গেলেই পাকা তালের সুবাসে জুড়িয়ে মন।এমনকি ভাগ্যে থাকলে দুই-চারটি পাকা তালও পাওয়া যেতো।দূর থেকে শোনা যেত তালগাছ থেকে তাল পড়ার শব্দ।আরো শোনা যেত তালপাতার ডালে ঝুলাানো বাসা বাবুই পাখির কিচির-মিচির শব্দও।তখনকার সময়ে দ তালের মৌ মৌ গন্ধে ভরে উঠতো প্রতিটি বাড়ি।ঘরে ঝি-বউয়েরা পাকা তালের আটি থেকে হলুদ রস বের নানান রকমের পিঠা বানাত সুস্বাদু করে।বর্তমান প্রজন্মের স্বাদ আর মর্ম না বুঝলেও আগের প্রজন্মের অনেকেই হারিয়ে যান পুরনো স্মৃতিতে। তবে এখন আর আগের মতো বেশি বেশি তালগাছ চোখে পড়ে না,আর বাবুই পাখির বাসার হাজার হাজার বাবুই পাখির কিচির-মিচির শোনা যায় না। হালদা গবেষক ও পরিবেশবিদ ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশে বজ্রপাতে প্রাণহানীর সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এজন্য বাংলাদেশ সরকার, ২০১৬ সালের ১৭ মে দেশের জাতীয় দূর্যোগের তালিকায় বজ্রপাতের মৃত্যুকে অন্তর্ভুক্ত করেন এবং একে নতুন দূর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বজ্রপাতে মৃত্যুর অন্যতম কারণ হচ্ছে তালগাছের সংখ্যা কমে যাওয়া। আমাদের দেশে যে হারে তাল গাছ কাটা হচ্ছে, সেই হারে কিন্ত তালগাছ রোপণ করা হচ্ছে না। বজ্রপাতের মৃত্যু থেকে বাঁচার সবচেয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ হচ্ছে তালগাছ। ড. শফিক আরো বলেন, ​​তালগাছ বজ্রপাত গাছ হিসেবে পরিচিত। এটি একটি দীর্ঘজীবি উদ্ভিদ যা সাধারণত ৯০-১০০ ফুট উঁচু হয় এবং কমবেশি ১০০ বছর বাঁচে। এটি উঁচু বৃক্ষ হওয়ায় বজ্রপাত সরাসরি এই গাছের মাধ্যমে মাঠিতে গিয়ে আমাদের রক্ষা করে। বজ্রপাত প্রতিরোধের পাশাপাশি তালগাছ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, ভুমিক্ষয় রোধে, ভুমিধস, ভুগর্ভস্থ পানির মজুদ বৃদ্ধি, মাটির উর্বতা বৃদ্ধি ও পরিবেশের উষ্ণতা রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। বজ্রপাত ও ঘূর্ণিঝড়সহ সকল প্রকার প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তালগাছ রোপন কর্মসুচি হাতে নেয়া জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আজকের দিন-তারিখ
  • বৃহস্পতিবার (বিকাল ৩:১১)
  • ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ (বসন্তকাল)
পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১