চাঁদপুরে জাটকা নিধন থামছেই না, নদীতে নেই পর্যাপ্ত টহল, নদীর পাড়ে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে জাটকা

 

স্টাফ রিপোর্টার।। চাঁদপুরে কোন অবস্থাতেই নদীতে বন্ধ হচ্ছে না জাটকা নিধন। ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরের জেলেরা মানছে না কোন প্রকার বিধি-নিষেধ। দাদন দেওয়া আরদদাররা জেলেদের বাধ্য করছে জাটকা নিধনে।

তা, আবার নদীর পাড়েই বিক্রি হচ্ছে দেদারসে, কেউ বা বিক্রি করছে ডাক উঠিয়ে। জনৈক জেলে বলেন, “আমাদের কোন চিন্তা নেই সমস্যা হলে আরদদার আছে।থানা পুলিশ বরাবরই তারাই দেখেন। এদিকে আরদদাররা জাটকা পাচারের উদ্দেশ্যে রাতের দ্বিপ্রহরে পিকআপগুলো রেখে দেন রণ সাজে।

বয়োজৈষ্ঠ এক বৃদ্ধ বলেন, একেবারে শহরের সাথে ফাঁড়ি থানার ঘরের দরজায় মানে লঞ্চ ঘাটের একেবারেই পশ্চিম পাশে টিলা বাড়ী, পুরান বাজার রণা গোয়াল ও চালিতা তলি বাবুর্চি ঘাটে বেবাক দিন জাটকা মাছ উঠে, বেগ্গুনই সাজুই কিন্না লইয়া যায়, আমাগো আরদ্বার সাজু গাজী। এমনটিই জানালেন এই বৃদ্ধা।

পুরান বাজার ফাঁড়ি ও চাঁদপুর নৌ থানার দরজার টিলা বাড়ীতে ও পুলিশের নাকের ডগায় পসরা বিছিয়ে জাটকা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এটি আর নতুন সংবাদ নয়। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় জাটকা ইলিশ রক্ষায় পুলিশ বাহিনীসহ এত বাহিনী কাজ করছে কিন্তু সাজু গাজী ও আলী হোসেন কে কেউ খুঁজে পাচ্ছে না এটা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় বলে জানান সাবেক জনপ্রতিনিধিগণ।
জাটকা রক্ষার এই অভিযান যদি পরিকল্পিত মাফিক হতো তাহলে প্রতিনিয়ত এত জাটকা ইলিশ সহ জেলেদের আটক করা যেত না। এ সময়ে নদী থেকে আহরহিত এত জাটকা ইলিশ উদ্ধার করে কি লাভ এবং আহরণের পরে আটক ও জাটকা উদ্ধার এ দুটোই তো আর জাতির কোন কাজে আসবে না। তাহলে প্রশ্ন থেকে যায় অভিযানের ফলাফল কি?
স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক চাঁদপুর খবরের ৫ই এপ্রিল সংখ্যায় প্রথম ও দ্বিতীয় কলামের দিকে তাকালে বুঝা যায় জাটকা রক্ষা অভিযানের চিত্র কি রকম।

 

 

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় নদীতে এবং নদীর উপরে রয়েছে তাদের শক্তিশালী সোর্স। আবার কেউ টহল দিচ্ছে মোবাইল নিয়ে। কেউ কেউ বলেন পুলিশের সোর্সের চাইতেও জেলেদের সোর্স অনেক দক্ষ তাই জেলেরাই বিজয়ী হচ্ছেন বারংবার। পরাস্হ হচ্ছে জাটকা রক্ষার অভিযান।
টিলাবাড়ি এলাকা দিয়েও জাটকা নিধন হচ্ছে এবং কাদের নেতৃত্বে জাটকা নিধন হচ্ছে পুলিশ তাও ভালোভাবেই জানেন বলে জানান নদীর তীরবর্তী এলাকার অসহায় সচেতন মহল। তারা বলেন শুধু অজ্ঞাত কারণে নিচ্ছেন না কোন প্রকার আইনগত ব্যবস্থা। লোক দেখানো দু’ চারটি অভিযান করে মিডিয়াতে ফলাও করে দেন। ঢিলা বাড়ি, বিষ্ণুপুরের লালপুরে, সবজি কান্দি, হানার চরের নন্দীর দোকান, হরিণার উত্তর পাশে ননদেশ খার বাগান, আখনের হাট সহ শহর সংলগ্ন এলাকাগুলোই যদি জাটকা ইলিশ রক্ষার অভিযান নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারে তাহলে নদীর অথৈ দুর্গম এলাকার চিত্র কেমন হবে স্বাভাবিকভাবেই অনুমেয়।
এ সকল কারণেই এই অভিযান ব্যর্থ বলেই মনে হবে।

ফিশারী, নৌ পুলিশ, কোস্ট গার্ড,জন প্রতিনিধ সহ বিভিন্ন বাহিনী এত তৎপর থাকা সত্ত্বেও জেলেদের আটক করতে হয় নদী থেকে তাও আবার টনেটনে আহরিত জাটকা ইলিশ সহ। জেলেরা জাটকা ধরার পরে অভিযাণে অংশগ্রহণ করা বাহিনীগণ জাটকা উদ্ধার ও জেলে আটক করে কি লাভ হবে ?
এসব নিয়ে সভা ও বিভিন্ন সেমিনারে শতবার বলা হয়েছিল যারা জেলে কাট পাবে তাদের জাল ও নৌকা আটক রেখে তাদেরকে সেই সুবিধা দেওয়ার জন্য । দাবি উঠেছিল প্রয়োজনে আরও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার। পাশাপাশি আটককৃত জেলেদের জেলে কার্ড বাতিল করার। আজো আমলে আনা হচ্ছে না এসব প্রস্তাবও।

পুলিশের প্রচেষ্টায় বড় মাফের হত্যা মামলার আসামি ও গ্রেপ্তার হয়। গোয়েন্দাদের তৎপরতায় অনেক তথ্যই উদঘাটন হয়। শুধু জাটকা নিধনকারীদের হোতা আরদদারদের তালিকাটাই অজ্ঞাত কারণে আজো হচ্ছে না।
এক প্রতিবেদনে দেখা যায় জেলেরা বলেন পুলিশের কোন না কোন দুর্বলতার কারণেই জেলেরা বাধ্য হয়ে পুলিশের উপর আক্রমণ চালাতে সাহস পায়। তারা প্রশ্ন করে বলেন, বিকাশ বাবুর সাথেই যদি দেখা করতে হয় তাহলে আপনারা আসেন কেন? জেলেরা তেমন একটা শিক্ষিত না হলেও অন্তত এটা বুঝেন দুটো একসাথে হয় না।জনৈক আরদদার হান্নান বলেন, হয় শোষণ বিহীন শাসন নতুবা শুধু শাষন, আপনারা দুটাই করেন কেন?

সচেতন মহল মনে করেন দায়িত্বশীলদের অবহেলার কারণেই জাটকা নিধন বন্ধ হচ্ছে না। একদিকে জেলেদের খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি অপরদিকে জাটকা রক্ষাপ্রশাসনের প্রশাসনিক খরচ দুটো দিয়েও সরকার জাটকা রক্ষায় সফলতার মুখ দেখছে না।

এরা প্রতিনিয়তই নামছে জাটকা নিধনে আর আটক হচ্ছে জাটকা নিধনের পর।

 

ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরের সচেতন মহলের পরামর্শ হলো, উল্লেখিত এলাকায় দক্ষ নির্লোভ সোর্স লাগিয়ে বাকি দিনগুলোতে নির্দিষ্ট সময়ে অভিযান চালালে জাটকা রক্ষায় অপরিসীম সুফল বয়ে আনবে। ভোট ব্যবসায়ীদের আশায় বসে থাকলে শত শত বছর গুজরিয়ে গেলেও এর সুফল পাওয়া যাবে না এমনটাই মনে করছেন নদীর তীরবর্তী এলাকার সচেতন লোকজন। কারন, দিনশেষে তারাই ভোটার বা সার্পোটার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌ থানার অফিসার ইনচার্জ কামরুজ্জামান বলেন আমরা তো নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছি। জেলেদেরকে আমরা কঠোরভাবে দমন করছি। ইতিমধ্যে আমরা বিপুলসংখ্যক জেলে আটক করেছি এবং কারাগারে ও পাঠিয়েছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে কোন অবস্থাতেই ছেলেদেরকে নদীতে নামতে দেওয়া হচ্ছে না। যেখানেই নামার চেষ্টা করছে সেখানেই অভিযান পরিচালনা করছি । অভিযুক্ত আলী হোসেনের সাথে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান আমি প্রায় তিন বৎসর জাটকা নিধনের এ কাজ ছেড়ে দিয়েছি এখন সকলেই আমাকে শুধু শুধু অপবাদ দেয়। রণা গোয়াল ও পুরান বাজার চালিতাতলী বাবুর্চি ঘাটের অভিযুক্ত শাহজাহান সাজুরর কাছে একাধিকবার গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি এবং তার মুঠোফোনে চেষ্টা করেও বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
এদিকে বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবীলীগ চাঁদপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মানিক দেওয়ান বলেন এবার প্রচুর জাটকা ইলিশের আমদানি হয়েছে। জেলেরা প্রচুর পরিমাণ অহরহ মাছ ধরতেছে। সন্ধ্যা থেকে রাত দুইটা পর্যন্ত প্রচুর জাটকা মাছ ধরে। শত শত জেলেরা হাজার হাজার মণ জাটকা ধরছে।

তিনি বলেন চাঁদপুর হাইমচর নদী থেকে দৈনিক হাজার হাজার মন জাটকা নিধন করছে।তিনি আরো বলেন অভিযান হয় জাটকা নিধনের আগে ও পরে। জাটকা মাছ ধরার সময় অভিযান হয় না যদি হতো টনে টনে জাটকা জব্দ করা যেত না। মানিক দেওয়ান বলেন অভিযান হলো এরকম যেমন রোগ এক জায়গায় ঔষধ অন্য জায়গায়। শত শত জেলেদের আটক করে সাজার ব্যবস্থা করেও দমন করা যাচ্ছে না। কোন না কোন সাহসেই বা সের্ল্টারেই তারা নদীতে নামতে সাহস পাচ্ছে। শুধু যৌথ বাহিনীর সামনে পড়লেই তবে আর রক্ষা পায়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন সর্ষে ভূত থাকায় এ অভিযান সফল হচ্ছে না। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বিষয়টি যাচাই করে অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে সচেতন মহলসহ মৎস্যজীবী লীগের নেতৃবৃন্দ প্রত্যাশা করেন ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আজকের দিন-তারিখ
  • বুধবার (দুপুর ২:৪৯)
  • ১৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
  • ৩রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শরৎকাল)
পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০