মাজহারুল রাসেল : নিষিদ্ধের কয়েক মাসের মাথায় এবার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার বাজারে ঢুকে পড়েছে ক্ষতিকর কেমিকেলে ভরা অখ্যাত সব রং ফর্সাকারী ক্রিম।অনলাইনে প্রকাশ্যে চলছে বিজ্ঞাপন। অথচ মনিটরিং নেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসটিআই’র।
এ সুযোগে ভুয়া বারকোড, কিউআর কোড আর সিল বসিয়ে এসব ক্রিম বিক্রি হচ্ছে আগের চেয়ে ৩ গুণ বেশি দামে! ক্ষতিকর রং ফর্সাকারী এসব ক্রিমের একজন ভুক্তভোগী হলেন, মোগরাপাড়া এলাকার হানিফ মিয়ার স্ত্রী রোকসানা বেগম। এখন সন্তানদের সামনেও যেতেও বিব্রত হন তিনি। মোগরাপাড়া চৌরাস্তার রাজুর ও শাওন কসমেটিক্সের দোকান থেকে কিনে ফর্সাকারী ক্রিম ব্যবহার করে মুখের দুপাশে রীতিমতো ঝলসে গেছে তার। রোকসানার এ অবস্থা গত ২ বছর ধরে। নিজেকে সাদা দেখানোর মোহে ব্যবহার করেন পাকিস্তানি ব্র্যান্ডের একটি ক্রিম। তাৎক্ষণিক ফর্সার অবাক মোহে টেরই পাননি মেরে ফেলছেন ত্বকের প্রাণ। প্রথমে ইনফেকশান হয় মুখে, এখন তা ছড়াচ্ছে চোখেও। শেষমেষ বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের টেস্টে ধরা পড়ে, মাত্রাতিরিক্ত মার্কারির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে ত্বকের ম্যালানিন উৎপাদন। চিকিৎসকরা বলছেন, এসব ক্রিমের ১ প্যাকেটেই থাকে এতো বড় ক্ষতির উপাদান।
উপজেলার বৈদ্যের বাজার ইউনিয়নের আরেক ভুক্তভোগী সদ্য ইন্টারমিডিয়েট শেষ করা শাহেলা পারভিন।তার অবস্থাও খারাপের দিকে যাচ্ছে ক্রমশ। বলেন, ওই একই ক্রিম মেখে ত্বক ভয়ানক পাতলা হয়ে গেছে তার।মুখে ব্রোনসহ নানা সমস্যাও তৈরি হচ্ছে। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ শাহেলা পারভিন কে বলেন, এই ধরনের ক্ষতিকর উপাদানের কারণে একবার ব্যবহারেই ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। অল্প পরিমাণ কিন্তু অনেকদিন ধরে ব্যবহার করা ফলেও দেখা দিতে পারে এসব সমস্যা। এখন প্রশ্ন হলো, কোন ক্রিম মেখেছিলেন ভুক্তভোগীরা ? সেটি হলো, পাকিস্তানি ব্র্যান্ডের চাঁদনী ক্রিম।!বিএসটিআই ল্যাবে এই ক্রিমে মার্কারি পাওয়া গিয়েছিল গ্রহণযোগ্য মাত্রার প্রায় শতগুণ বেশি।মার্কারির পাশাপাশি পাওয়া যায় হাইড্রোকুইনোনের ভীষণরকম উপস্থিতি। গত ৪ বছরে ২ বার গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে এমন ১৭টি রং ফর্সাকারী ক্রিম নিষিদ্ধ করে সরকার। তবে কঠোরতা শিথিল হওয়ার সাথে সাথেই আবারও এই ধরনের ক্ষতিকর ক্রিমে সোনারগাঁও উপজেলার বাজার সয়লাব। বিষাক্ত ওসব ক্রিম এখনও আছে বাজারে।
সোনারগাঁও উপজেলার কসমেটিক দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায় নিষিদ্ধ ১৭টি ক্রিমের মধ্যে ১৩টিই আছে। দোকানীরা জানালেন এগুলোরই চাহিদা এইখানে প্রচুর ।শুধু তাই নয়, আগে পাওয়া যেত ২ থেকে আড়াইশ’ টাকায়। এখন উল্টো দাম বেড়ে ৩গুণ! এখন আবার প্যাকেটের গায়ে বসেছে বারকোডও। স্ক্যান করে অবশ্য ধরা গেল কোড নকল। একটি আবার নাম ঠিক রেখে বদলেছে মোড়ক।চোখে পড়বে বিএসটিআইয়ের নকল সিলও।
ল্যাবপরীক্ষার পর ২০২২ এর জুলাইয়ে দেয়া গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, বিষাক্ত এসব ক্রিম যারা আনে, বানায় আর বাজারে ছাড়ে তাদের বিরুদ্ধে চালু থাকবে বিএসটিআইয়ের নজরদারি-মোবাইল কোর্ট। সোনারগাঁও উপজেলার বাজারে অভিযান তো দূর, বিএসটিআইয়ের নারায়ণগঞ্জ জেলা কর্মকর্তাদের মনে নেই ক্রিমগুলো নিষিদ্ধ। এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তারা লোকবল সংকটের কথাও জানান। নিষিদ্ধ ঘোষণা দিয়ে দেশজুড়ে আর নজর রাখতে পারছে না মাণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
এ সুযোগে সোনারগাঁও উপজেলার বাজার সয়লাব বিষাক্ত ক্রিমে।ওদিকে তাৎক্ষণিক ফর্সা দেখানোর মোহে জানা তথ্যটাই আড়াল করে এখন নিজেরাই লোক লজ্জার ভয়ে আড়ালে ভুক্তভোগীরা।ক্ষতি হয়ে যাওয়াদের দেখেও যারা সচেতন হবেন না, তাদের জন্য চিকিৎসকেরা একটাই কথা বলেন ক্রিম দিয়ে ফর্সা হওয়া যায় না।ত্বকের যত্নেই আসে ফেয়ারনেস।