রাউজানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্রায় হারিয়ে গেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য হাতে ভাজা দেশি মুড়ি

 

শাহাদাত হোসেন, রাউজান(চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য হাতে ভাজা দেশি মুড়ি রাউজান থেকে বিলুপ্তির পথে।এখন হাতে ভাজা মুড়ি স্থান দখল করে নিয়েছে মেশিনের তৈরি মুড়ি।আগে একসময় রাউজান উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে-গঞ্জে হাতে ভাজা মুড়ি পাওয়া যেত।চাহিদা ছিল বেশি। এখন আধুনিকতার পরিবর্তনের ছোঁয়ায় হাতে ভাজা মুড়ি শিল্পটি আগের মত গ্রাম-অঞ্চলে দেখা যায় না। হঠাৎ উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়্যার্ডের জানিপাথর গ্রামের কানু ডাক্তার বাড়িতে চোখে পড়ে মুড়ি হাতে ভাজার দৃশ্যটি। এ গ্রামে দুই ঘরে হাতে ভাজা মুড়ি পাওয়া যায়। ওই গ্রামের ধনরঞ্জন দাশ প্রকাশ ভেট্টার স্ত্রী উষা রাণী দাশ’র হাত দিয়ে মুড়ি ভাজার কাজে খুব পারদর্শী। এ কাজে তার হাত যশ ভালো। মুড়ি ভাজার অভিজ্ঞতা প্রায় ৫০ বছর তার। উষা রাণী দাশ বলেন,শশুর বাড়িতে শাশুর-শ্বাশুড়ি কাছ থেকে দেখা ও শেখা। মুড়ি ভাজাও একটি শিল্প। ভাতের চাল আর মুড়ির চাল এক রকম না। ধান সংগ্রহ করে প্রথমে পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হয়। পরে আধাসিদ্ধ তারপর পুরোপুরি সিদ্ধ করে লবণ দিয়ে রোদে শুকিয়ে তা দিয়ে মুড়ির চাল তৈরি করা হয়। এরপর সেই চাল থেকে তৈরি হয় হাতে ভাজা মুড়ি।হাতে ভাজা মুড়ি সু-স্বাদু ও স্বাস্থ্য সম্মত। তিনি বলেন, অনেক কষ্টে মুড়ি ভেজে হাট-বাজারে নিয়ে মুড়ি বিক্রি করে স্বামী ধনরঞ্জন দাশ প্রকাশ ভেট্টা।প্রতিদিন ১০-১২ মণ মুড়ি ভাজে। প্রতি কেজি মুড়ি বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। ওই গ্রামের জুনু দাশের স্ত্রী গীতা দাশও মুড়িভাজার কাজে পারদর্শী।মুড়িও ভাজে ভালো। তিনি জানান, এক মণ চালের মুড়ি তৈরি করতে ৬-৭ ঘণ্টা সময় লাগে। বর্তমানে বাজারে ধানের দাম বৃদ্ধি, পোড়ানোর কাজে ব্যবহৃত লাখড়ি দামও বেশি হওয়ায় মুড়ি উৎপাদন খরচ বেশি পড়ে।বাপদাদার পেশা হিসেবে দরে রেখেছি।এখন কালের পরিবর্তনে বেশকিছু কারখানায় মুড়ি উৎপাদিত হওয়ায় হারিয়ে গেছে সু-স্বাদু হাতে ভাজা দেশি মুড়ি।শহর থেকে শুরু করে গ্রামের প্রত্যেকটি ছোটখাটো দোকানগুলোতে পৌঁচ্ছে দিচ্ছে মেশিনের তৈরি মুড়ি। ফলে এ শিল্পটি আজ একেবারে হারানোর পথে। স্থানীয় ইউপি সদস্য ফিরোজ উদ্দিন বলেন,ছোট বেলায় হাতে ভাজা মুড়ি দিয়ে রমজান মাসে ইফতার করতে মজা লাগতো। একসময় গ্রামের সব বাড়িতে হাতে ভাজা মুড়ি পাওয়া যেত।হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা থাকলেও বাজারে পাওয়া যায় না। তাই গ্রামের মানুষের মুড়ির দরকার হলে দোকান থেকে এক প্যাকেট কিনে নিয়ে চাহিদা পূরণ করেন।ডা. বিজয় দাশ বলেন, গ্রামের হাতে ভাজা মুড়ি খেলে স্বাস্থ্য ঝুকি নেই। আর রাসায়নিক সার যুক্ত মুড়ি খেলে শরীরে লিভার, কিডনি, যকৃত ধীরে ধীরে অকেজো হওয়ার সম্ভবনা অনেক বেশি।ফলে স্বাস্থ্য ও স্বাদের বিবেচনা করে ক্রেতা সাধারণের উচিত সু-স্বাদু হাতে ভাজা দেশি মুড়ির স্বাদ নেওয়ার জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আজকের দিন-তারিখ
  • শুক্রবার (দুপুর ১:২৮)
  • ১৩ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১০ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
  • ২৯শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শরৎকাল)
পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০