দুই দেশের হেভিওয়েটদের দিকে তাকিয়ে ছিলেন সবাই। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড, দুই দেশের ক্রিকেটপ্রেমী মানুষ—সবাই। কিন্তু হেভিওয়েটদের বৈঠকের পর জানা গেল ক্রিকেট নিয়ে তাদের মধ্যে নাকি কোনো আলোচনাই হয়নি।
হেভিওয়েট বলতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ আর পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সারতাজ আজিজ। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি সম্মেলনে যোগ দিতে ইসলামাবাদ আসাতেই এই সিরিজটি নিয়ে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু বুধবারের পর কার্যত এই সিরিজের সব সম্ভাবনাই ভেস্তে যাওয়ার পথে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে সুসমা স্বরাজ যে সংক্ষিপ্ত বিবৃতি দিয়েছেন, তাতে ক্রিকেটের প্রসঙ্গই নেই।পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) প্রধান শাহরিয়ার খান বুধবার রাতেই জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি এই সিরিজের আর কোনো আশা দেখেন না। তিনি বলেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে তিনি যা জেনেছেন, তা হল, দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে ক্রিকেট নিয়ে যেহেতু কোনো কথা হয়নি, তাই এই সিরিজ আয়োজন অসম্ভবই।
২০০৮ সালে মুম্বাই হামলার পর থেকে দুই দেশের ক্রিকেট সম্পর্ক কার্যত স্থগিতই হয়ে আছে। ২০১২ সালে ভারতের মাটিতে অবশ্য দুই দেশের মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। গত বছর দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ডের মধ্যে একটি সমঝোতা-স্মারক স্বাক্ষরিত হলে দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। এই সমঝোতা-স্মারকে মোট ছয়টি সিরিজের কথা বলা হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী প্রথম সিরিজটিই হওয়ার কথা ছিল এ বছরের ডিসেম্বরে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাটিতে। কিন্তু বছরের শুরু থেকে সীমান্ত সমস্যাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ইস্যুতে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি হলে এই সিরিজ নিয়ে দেখা দেয় অনিশ্চয়তা।
অনিশ্চয়তার মধ্যেও সিরিজটি আয়োজনের লক্ষ্যে দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ডের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। পরস্পরের নির্ধারিত ভেন্যুতে দুটি দেশই খেলতে অস্বীকৃতি জানানোর পর নিরপেক্ষ ভেন্যু শ্রীলঙ্কায় সিরিজটি আয়োজনের পরিকল্পনাও করা হয়েছিল।
পাকিস্তান সরকার অবশ্য শ্রীলঙ্কায় সিরিজটি খেলার ব্যাপারে সবুজ সংকেত দিয়েছিল। কিন্তু ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ ব্যাপারে সারা না মেলায় ব্যাপারটি নিয়ে আবারও শুরু হয় অনিশ্চয়তা।
সম্প্রতি প্যারিসে একটি সম্মেলনে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর দেখা-সাক্ষাৎ ও অন্তরঙ্গ আলোচনা নতুন করে এই সিরিজের সম্ভাবনা জোরদার করলেও শেষ অবধি পুরো বিষয়টিই এসে ঠেকেছে ভেস্তে যাওয়ার মুখে।
সিরিজটি না হলে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড ভারতের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারে—এমন ইঙ্গিতও পাকিস্তানি গণমাধ্যম দিয়ে রেখেছে। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য ডন।