সিরাজগঞ্জে রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি সাজছে বর্ণীল সাজে: বাড়ছে রবীন্দ্র ভক্ত ও অনুরাগীদের পদচারণা

তারিকুল আলম, সিরাজগঞ্জঃ ২৫ শে বৈশাখ রবিবার, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১ তম জন্মজয়ন্তী। এ উপলক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় জাতীয় পর্যায়ে কর্মসূচীর আলোকে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত শাহজাদপুরের রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে ৩ দিন ব্যাপী রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর আয়োজন করা হয়েছে। সেইসাথে কবির জন্মদিনকে কেন্দ্র করে কাছারি বাড়িতে চলছে ব্যাপক সাজসজ্জা। রংতুলির আঁচড়ে নানা আল্পনায় রঙিন হয়ে উঠছে কবির আঙিনা। বিচিত্র আলোকসজ্জায় বর্ণিল হয়ে উঠছে চারপাশ। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের মহামারির কারনে দুই বছর কোনরকম আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া নিরবে নিভৃতে চলে গেছে বাংলাসাহিত্যের মহারাজার জন্মদিন। দুইবছর পর এবার জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে কবির জন্মদিন উদযাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। এদিকে কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতেও কবির জন্মদিন ঘিরে তিনদিনব্যাপী চলবে নানা আনুষ্ঠানিকতা।
আগামীকাল রবিবার সকাল ১০ টায় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ৩ দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানমালা শুরু হবে। সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ এর সভাপতিত্বে স্থানীয় এমপি প্রফেসর মেরিনা জাহান কবিতা উপস্থিত থেকে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। এদিন রবীন্দ্র কাছারিবাড়ি অডিটোরিয়ামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেশের খ্যাতনামা শিল্পীদের পাশাপাশি আবৃতি, নৃত্য ও সংগীত পরিবেশন করবেন জাতীয় ও আঞ্চলিক বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীবৃন্দ। এদিকে, রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীকে ঘিরে কাছারিবাড়িকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় শাহজাদপুর সরকারি কলেজ মাঠে আয়োজন করা হয়েছে রবীন্দ্র মেলা। সুষ্ঠু, নির্বিঘ্নে ও উৎসবমূখর পরিবেশে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদাড় করা হয়েছে। রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীকে ঘিরে কাছারিবাড়ি রবীন্দ্র ভক্ত অনুরাগীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। রবীন্দ্র জীবনে ও সাহিত্য ভুবনে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাপুর এক অবিস্মরণীয় নাম। শাহজাদপুরের উন্মুক্ত উদার দ্বারে এসে নিখিল বিশ্বের সামনে কবিপ্রাণের গভীর বন্ধন সূচিত হয়। তাঁর চিত্তে ও কর্মবোধের সর্বোচ্চ সমন্বয় ঘটেছিলো শাহজাদপুরে এসেই যা তিনি স্বীকার করেছেন লেখনীর মাধ্যমেই। শাহজাদপুরের কাছারিবাড়ি রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত একটি ঐতিহাসিক স্থান ও পর্যটন কেন্দ্র।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, তিন তৌজির অন্তর্গত ডিহি শাহজাদপুরের জমিদারী একদা নাটোরের রানী ভবানীর জমিদারীর অংশ ছিল। ১৮৪০ সালে শাহজাদপুরের জমিদারী নিলামে উঠলে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর মাত্র তের টাকা দশ আনায় এই জমিদারী কিনে নেন। জমিদারীর সাথে সাথে ওই কাছারিবাড়িও ঠাকুর পরিবারের হস্তগত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। আগে এই কাছারিবাড়ির মালিক ছিল নীলকর সাহেবরা। ১৮৯০ সাল থেকে ১৮৯৬ সাল পর্যন্ত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারী দেখাশোনার কাজে শাহজাদপুরে যাতায়াত ও সাময়িকভাবে বসবাস করতেন। এখানে অবস্থানকালে কবিগুরু রচনা করেন: -কাব্য: সোনারতরী , বৈষ্ণব কবিতা, দুটি পাখি, আকাশের চাঁদ, পুরস্কার, যমুনা, হৃদয়, ভরা ভাদরে, প্রত্যাখ্যান ও লজ্জা। চিত্রা : চিত্রা, শীত ও বসন্তে, নগর সংগীত। চৈতালী : নদীযাত্রা, মৃত্যুমাধুরী, স্মৃতি বিলয়, প্রথম চুম্বন, শেষ চুম্বন, যাত্রী, তৃণ, ঐশ্বর্য, স্বার্থ, প্রেয়সী, শান্তিময়, কালিদাসের প্রতি, কুমার, মানষলোক, কাব্যপ্রার্থনা, ইছামতী নদী, সুশ্রুসা,অশিক্ষাগ্রহন, বিদায়। করুনা : নববিবাহ, রজ্জিতা, বিদায়, হত্যভাগ্যের গান, গতোনিক, বঞ্চনা, সংকোচ, মানষ প্রতিভা, রামকানাইয়ের নির্বুদ্ধিতা, ব্যবধান, তারাপ্রসন্নের কীর্তি, ছুটি, সম্পত্তি, ক্ষুধিত পাষাণ, অতিথি ইত্যাদি। ছিন্ন পত্রাবলী : ৩৮ টি ছিন্ন পত্রাবলী। প্রবন্ধ :পঞ্চভূতের অংশবিশেষ। নাটক : বিসর্জন। এই উল্লেখযোগ্য কবিতা গুলি কবি শাহজাদপুরে রচনা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আজকের দিন-তারিখ
  • শনিবার (রাত ৪:৩৪)
  • ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১১ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০