গভীর সমুদ্রে ধাতু উত্তোলন জীবজগতের জন্য হুমকি

যমুনা নিউজ বিডিঃ খনি থেকে ধাতু উত্তোলন করতে গিয়ে মানুষ পরিবেশ ও প্রাণিজগতের অনেক ক্ষতি করে চলেছে। সমুদ্রের তলদেশ থেকে ধাতু উদ্ধার করতে গেলেও সেখানকার পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হবে বলে পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে।

গভীর সমুদ্রের জন্য কে আইনকানুন স্থির করে? আন্তর্জাতিক সমুদ্রতল কর্তৃপক্ষ নামের জাতিসংঘের এক সংগঠন সেই দায়িত্ব পালন করে। ১৯৯৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ১৬৭টি দেশ গভীর সমুদ্রে খনন নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল।

এখনো পর্যন্ত সেই কর্তৃপক্ষ খনন নয়, শুধু পলিমেটালিক নডিউল নিয়ে গবেষণার অনুমতি দিয়েছে৷

এক জার্মান গবেষণা প্রকল্পের আওতায় বেশ কয়েক বছর ধরে ডিপ সি মাইনিং-এর প্রভাব জানার চেষ্টা চলছে। জিওমার রিসার্চ সেন্টার ও মাক্স প্লাংক ইনস্টিউট ফর মেরিন মাইক্রোবায়োলজি সেই প্রকল্পে অংশ নিয়েছে।

বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, যে সমুদ্রতলের জীবজগতের জন্য নডিউলগুলি অনেক প্রাণীর আবাস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ গবেষক হিসেবে তানিয়া স্ট্রাটমান বলেন, ‘আমরা দেখেছি, যে এই ম্যাংগানিজ নডিউলের সঙ্গে অনেক জীব যুক্ত থাকে৷ যেমন অনেকটা টিউলিপ ফুলের মতো দেখতে গ্লাস স্পঞ্জ৷ লম্বা শুঁড় ও মূল শরীর এমন নডিউলের গায়ে গা লাগিয়ে বড় হয়৷ নডিউলে নানা প্রজাতি আশ্রয় নেয়।’

এই গবেষণা প্রকল্পে সমুদ্রতলে কয়েক বর্গ মিটার জুড়ে খননের প্রভাব সিমুলেশন করা হয়েছে। বড় আকারে বাণিজ্যিক খননের মাত্রা অবশ্য একেবারেই ভিন্ন হবে। ‘মাইনিং ইমপ্যাক্ট’ প্রকল্পের মাটিয়াস হেকেল বলেন, ‘প্রতি বছর কয়েক হাজার বর্গ কিলোমিটার ধ্বংস হতে পারে। সমুদ্রতল থেকে পাঁচ থেকে ১০ সেন্টিমিটার উপরের সক্রিয় প্রাণী ও উদ্ভিদ জগত সম্পূর্ণ মুছে যাবে ও ধ্বংস হয়ে যাবে৷ সেখানেই মূল প্রভাব ঘটবে৷ সেই এলাকায় যে কোনো ধরনের পুনর্গঠন বা উদ্ধারের জন্য হাজার হাজার বছর সময় লাগবে।’

যন্ত্র কাজে লাগালে গভীর সমুদ্রের অনেক মাইক্রো অরগ্যানিজম ও প্রাণী নষ্ট বা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এমনকি ছোট আকারের গবেষণা প্রকল্পের কারণেও সেখানকার পরিবেশ বদলে গেছে। তানিয়া স্ট্রাটমান বলেন, ‘আমরা দেখলাম, যে এমনকি ২৫ বছরেরও বেশি সময়ে আমাদের বিশ্লেষণ করা বেশিরভাগ ক্ষেত্র পুরোপুরি ধাক্কা সামলে উঠতে পারে নি৷ ফলে নডিউল উধাও হবার পর এমনকি যে সব অংশ সামলে উঠতে পারবে, সেগুলির কয়েক দশক বা কয়েক শতাব্দী সময় লাগতে পারে, আদৌ যদি তা সম্ভব হয়।’

মাইনিং শুরু হলে এমনকি মহাসাগরের জটিল খাদ্য শৃঙ্খলায়ও বিঘ্ন ঘটতে পারে।

তাহলে কি ডিপ সি মাইনিং টেকসই করে তোলার কোনো উপায় রয়েছে? মাটিয়াস হেকেল মনে করেন, ‘নতুন করে গড়ে ওঠে না বলে টেকসই নয়৷ বিষয়টি এতই সহজ৷ আমার মতে, সমাজ হিসেবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যে সেটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য কি না।’

সত্যি এক উভয় সংকট বটে৷ গভীর সমুদ্রের নডিউল যদি নাগালের বাইরে থাকে, তাহলে আরও নির্মল জ্বালানি উৎপাদন করার জন্য ধাতু কোথা থেকে আসবে?

প্রথমত, হাতে যা আছে সেগুলির পুনর্ব্যবহার একটা পথ৷ ব্যাটারি ও অন্যান্য ডিভাইস থেকে দামী ধাতু বার করে নিতে হবে। বেশ কয়েকটি কোম্পানি সেই রিসাইক্লিং প্রক্রিয়া আরও উন্নত করার উদ্যোগ নিচ্ছে। সেইসঙ্গে আমরা ভোগ কমিয়ে দামী ধাতুভরা ডিভাইসগুলি আরও দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করতে পারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আজকের দিন-তারিখ
  • শুক্রবার (দুপুর ১:১৪)
  • ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ (বসন্তকাল)
পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১