সহিংসতার ভয় আর নয়

 

সহিংসতার ভয় মোকাবেলায় তরুণদের সাহস ও আত্মপ্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে আসার পাশাপাশি প্রয়োজন অবকাঠামগত উন্নয়ন ভাবনা, আজ এক জাতীয় সংলাপে এমনটিই আহ্বান করেন আলোচকবৃন্দ।

২৫ মে ২০২২, বুধবার, ঢাকার শেরাটন হোটেলে “সহিংসতার ভয় আর নয়”- বিষয়ক এই জাতীয় সংলাপের আয়োজন করে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং জাগো ফাউন্ডেশন। এই জাতীয় সংলাপের আলোচকরা “সহিংসতার ভয়” বিষয়ক জাতীয় পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি তুলে ধরেন এই ভয় কীভাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে এবং কীভাবে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই ভয়কে জয় করা সম্ভব।

 

আলোচকরা বলেন, সর্বক্ষেত্রে সহিংসতার ভয়মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতে অবকাঠামোগত উন্নয়নে এই বিষয়ে জোর দিতে হবে, সমাধানের কথা ভেবে উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে হবে।

 

জাতীয় সংলাপে আমাদের দেশে সহিংসতার ভয়ের সামগ্রিক পরিস্থিতি এবং স্থানীয়ভাবে এবং জাতীয়ভাবে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে এমন সমাধানগুলিকে সম্বোধন করা হয়েছে। তাছাড়া, বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগের যুবকরা যারা “সহিংসতার ভয়” ক্যাম্পেইনের অংশ ছিল তারা তাদের অভিজ্ঞতা অতিথিদের সাথে ভাগ করে নেয়। রংপুরের সাদমান নামের একজন অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশের গ্রামীণ জেলায় বাল্যবিবাহ নিয়ে তার উদ্বেগ সম্পর্কে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এটা কখনোই আমার মনে হয়নি যে সহিংসতা বা ভয় একটি ট্রিগার ফ্যাক্টর হতে পারে। আমরা যদি দীপ্তির মতো আমাদের আওয়াজ তুলতে পারি এবং যখনই আমরা কোনো সহিংসতা দেখি তখনই জরুরি নম্বর ব্যবহার করআর মাধ্যমে, আমরা আমাদের ভয়কে জয় করতে পারি”। স্থানীয় তরুণরা কীভাবে নীতিনির্ধারক ও সরকারের সঙ্গে কাজ করে এগিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজে বের করতে পারে সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে সংলাপে।

 

এই আলোচনায় আলোচক হিসেবে অংশ নেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মুহিবুজ্জামান। তিনি বলেন, “সরকার নারীদের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন এবং সকল সরকারি ব্যবস্থায় নারীদের সম্পৃক্ত করছেন। আমরা লিঙ্গ সংজ্ঞায়িত দায়িত্ব ভাগাভাগি পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা তরুণদের এই প্রক্রিয়ায় যোগ দেয়ার জন্য অনুযোগ ও উৎসাহিত করছি।”

 

আইনি ব্যবস্থার ভূমিকা নিশ্চিত করে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মিসেস তাসলিমা ইয়াসমিন অবকাঠামোগত ব্যবস্থার উন্নতির ওপর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, অবকাঠামোগত পরিবর্তন জরুরি। যেন ভয়ের ক্ষেত্রগুলোকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। পাশাপাশি জোর দিতে হবে সাপোর্ট সিস্টেম তৈরিতে।

সম্মিলিত এবং সমন্বিত উপায়ে যুবদের সচেতনে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

 

জনাব এম.এইচ. তানশেন, কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ, মালালা ফাউন্ডেশন বলেছেন, “আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতামূলক জায়গা দরকার। যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানসম্পন্ন শিক্ষক নিশ্চিত করতে হবে। উপরন্তু, সহিংসতার ভয়ে শিক্ষকদের পাঠদান পদ্ধতির উন্নতি করতে হবে।”

 

কামরুন নাহার, সদস্য, নারীপক্ষ বলেন, “আমরা মুক্তি চাই, রক্ষা চাইনা।” তিনি সহিংসতার ভয়কে চ্যালেঞ্জ করার প্রক্রিয়ায় যুবক এবং সরকারী কর্মকর্তাদের কাজ করার উপর জোর দেন।

তিনি আরো বলেন, “নারী হওয়ার জন্য আমাদের সাথে যা যা ঘটে বা ঘটতে পারে- সবই সহিংসতা। কী কী ঘটে তা নিয়ে কথা বললেও কী ঘটতে পারে সেই ভয় নিয়ে আমরা কথা বলি খুবই কম।”

 

মালেকা বানু, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ যুবকদের তাদের কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে উৎসাহিত করেছেন। তার মতে, তরুণরা যখনই কোনো সহিংসতার মুখোমুখি হয় তখনই তাদের এগিয়ে আসা উচিত এবং নিজেদের জন্য উঠে দাঁড়াতে হবে। তাদের সকল বৈষম্য এবং সহিংসতাকে সকল অবস্থাতেই চ্যালেঞ্জ করতে হবে।

 

কাশফিয়া ফিরোজ, পরিচালক, গার্লস রাইট, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, সংলাপটি পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, “এসডিজি-কে মাথায় রেখে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ আগামী ১০ বছরের কৌশলপত্র তৈরির সময় কিশোর-কিশোরী ও যুবদের সঙ্গে আলোচনা করে এবং তাদের মতামতের ভিত্তিতে আগামী ১০ বছরের জন্য সহিংসতার ভয় নিয়ে কাজ করার প্রত্যয় নির্ধারণ করে। প্রায় ১২ হাজার অংশগ্রহণকারীর উপর জরিপ পরিচালনার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, ৮১ দশমিক ৬ শতাংশ নারী গণপরিসরে বিভিন্ন রকম হয়রানির শিকার হয়। ৮৬ দশমিক ৮ শতাংশ নারী ও কিশোরী জানান তারা নিজ পরিবারেই বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছেন। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৭৪ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষক, সিনিয়র স্টুডেন্ট দ্বারা বিভিন্ন বিরূপ ও অশালীন মন্তব্যের শিকার হয়েছেন বলে দাবী করেন। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিরূপ মন্তব্যের শিকার হওয়ার কথা জানান অংশগ্রহণকারীদের ৫৭ শতাংশ, আর কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন অংশগ্রহণকারীদের ৫৬ শতাংশ। যা তাদের মনে দীর্ঘমেয়াদি ভয় সঞ্চার করে। জরিপ হতে প্রাপ্ত তথ্য থেকে আমরা জানতে পারি, ভয়ের কারণে অনেক সময় বাবা-মায়েরা মেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, খেলাধুলা, পিকনিকে অংশগ্রহণ করতে দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। সহিংসতা তো বটেই, সহিংসতার ভয় তরুণদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ। ভয় দূর করা সম্ভব হলেই তরুণরা তাদের সম্ভাবনার পূর্ণ বিকাশ করতে পারবে।”

 

এই জাতীয় সংলাপটি ছিল প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং জাগো ফাউন্ডেশনের প্রচারণার একটি অংশ যা বাংলাদেশের ৪টি বিভাগে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সাথে শুরু হয়েছিল, যেখানে যুবকদের “সহিংসতার ভয়” সম্পর্কে সংবেদনশীল করা হয়েছিল এবং টেকসই বৃদ্ধির জন্য এই সমস্যাটি কীভাবে প্রশমিত করা যায় সেই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আজকের দিন-তারিখ
  • শনিবার (দুপুর ১২:১৫)
  • ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১১ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০