মোঃ হানিফ উদ্দিন সাকিব
স্টাফ রিপোর্টারঃ
কয়েক ধাপে স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যদের হাতে নারকীয় নির্যাতনের শিকার হওয়া গৃহবধূ জেসমিন আক্তার (৩০) বাকরুদ্ধ হয়ে এখন মৃত্যুশয্যায়। সারাদেহে অসংখ্য নির্যাতনের ভয়াবহতা নিয়ে শুধুই চোখের জল ফেলছেন, দু’একটা শব্দ করতে চাইলেও তা অগোছালো । কেউ কথা বললে কোন সারা দিচ্ছেন না। খাওয়া দাওয়া একপ্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। জেসমিনের স্বজনদের দাবী- স্বামী সহ তার পরিবারবর্গের ভয়াবহ নির্যাতনে জখম হওয়া স্থানসমূহে বারবার চিকিৎসা দেওয়া এবং মাথায় আঘাত জনিত কারনে রক্তক্ষরণ হওয়ায় দুই ধাপে মাথা অপারেশন করেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় আমরা এখন দিশেহারা ।
ঘটনাটি ঘটেছে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলা ৯নং বুড়িরচর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড আহম্মদ মিয়া বাজার সংলগ্ন শুন্যেরচর গ্রামে।
স্থানীয় গ্রামবাসী এবং নির্যাতিত ভুক্তভোগী পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১০ বছর আগে উপজেলার বুড়িরচর ৩নং ওয়ার্ডের শুন্যেরচর গ্রামের মৃত হোসেন আহমেদ এর ছেলে আবুল কাশেম নাসির (৪৮) এর সাথে সুখচর এলাকার মৃত আওরঙ্গজেবের মেয়ে জেসমিন আক্তার (৩০) এর বিয়ে হয়। ৩ বছর পর কন্যা সন্তান হয়ে মারা যায়। কোনো একসময় নাকি জেনেছে স্ত্রীর স্বাস্থ্যে সমস্যায় আর সন্তান হবেনা। ওদিকে স্ত্রীর পরিবার থেকে নিজের নামে জমি কবলা চেয়ে সেটাও পাচ্ছেনা আর শুরু হয় স্ত্রীর উপর স্বামী কাশেমের অবর্ণনীয় পাশবিক নির্যাতন। জানা যায়, আবুল কাশেম এর আগেও বিয়ে করেছে, সেখানে দুই মেয়ে রয়েছে এবং ঐ স্ত্রীকেও নানান অপবাদ দিয়ে নির্যাতন করে তাড়িয়ে দিয়েছে।
ধারাবাহিক এ নির্যাতন এবং জমি চাওয়া প্রসঙ্গে নির্যাতিতা জেসমিন আক্তারের বড় ভাই আবু তাহের জানান , কাশেম আগের বিয়ের বিষয়টি আমাদের কাছে গোপন করেছে, পরে জানলেও আর করার কিছু ছিল না। বিয়ের পর কয়েকবার আমাদের থেকে টাকা নিয়েছে, আমার বোন অসুস্থ হওয়ার পর চিকিৎসার নাম করে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেখে চলে যায়। এবং পরবর্তীতে বাড়িতে গেলে নানান ছুতানাতায় মারধর শুরু করে। ১৭ মে এবং এর আগে ভগ্নিপতি আবুল কাশেম, তার ভাই হামিদ উল্যাহ বাবলু সহ বড় ভাই বাহারের ছেলে হায়দার আলি মিলে আমার বোনকে নির্দয় ভাবে লাঠি,রড দিয়ে পিটিয়েছে, চুল টেনে ছিড়ে ফেলেছে। আশপাশের লোক ডেকে নাটকীয় কৌশলে সাড়ে ৪ ভরি গহনা জোর করে রেখে দিয়ে পরে আমার মামা সম্পর্কীয় এনায়েত মাস্টারকে দিয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় আমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। পরে হাতিয়া হাসপাতালে আমরা চিকিৎসা (রেজি: ০২/১৮০১) করায়। এখানে স্বামী পরিবার নানাভাবে থ্রেট করলে এলাকায় এনে ডাঃ জাফরের মাধ্যমে চিকিৎসা দি,অবস্থার অবনতি ঘটলে পরে নিউরো সাইন্স হাসপাতাল(রেজি: NINS607722) এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দু’ধাপে মাথা অপারেশন করতে হয়। জেসমিনের ভাই আবু তাহের আরও জানান, গত ২০ জুলাই দ্বিতীয় অপারেশন শেষে বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলের পুরাতন ভবনের নিউরোলজি বিভাগের ২০৪ নং ওয়ার্ডে মৃত্যুশয্যায় আমার বোন। এ পর্যন্ত আমাদের সাড়ে ৪ লাখ টাকা খরচ হয়েও এখনো সুফল না পেয়ে আমরা হতাশ।
এ ঘটনায়, জেসমিন আক্তার নিজে বাদী হয়ে গত ১৩ জুন নোয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট- ৪নং আমলী আদালতে মামলা ( সিআর মামলা নং ১৯৬/২০২২) দায়ের করে। মামলায় অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন নির্যাতিতার ভাই আবু তাহের।
নির্যাতিতার পরিবার বর্তমানে কবির হাট উপজেলার ৩নং ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
এদিকে, গত ১৭ মে সর্বশেষ দিবাগত রাতে জেসমিনকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে পরবর্তী সকালে তার শ্বশুর পরিবার তাকে মামা সম্পর্কীয় যে এনায়েত মাস্টারের মাধ্যমে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়, সেই এনায়েত মাস্টার জানান, এরা বন্যপ্রাণীর চেয়ে খারাপ। এই জেসমিনকে আমি নিজে দায়িত্ব নিয়ে বিয়ে দিয়েছি অথচ মেয়েটিকে তারা নরপিশাচের মতো মারলো, খোঁজ খবরও তো নিলো না। তিনি বলেন, কাশেম এখন আমাকে ফোন দিয়ে বিভিন্ন লোভ লালসা দেখায়, যেনো তাদের পক্ষে থাকি।
আহম্মদ মিয়ার বাজার এলাকার মেহেরাজ মাস্টার জানান, শুনেছি তাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে গন্ডগোল হয়েছে। তিনি বলেন, ফোনে এতো কথা বলা যায়না সামনাসামনি বিস্তারিত বলবো..।
ইউনুস নামের একজনে বলেন, কাশেমেরগো বাড়িতে মহিলাকে পিটতে আমরা দেখি নাই, তবে শুনেছি। পরে এই ইউনুস তার নিজের নাম্বার থেকে নির্যাতিতার স্বামী কাশেমের পক্ষে বিভিন্ন লোক দ্বারা কথা বলায় এই প্রতিবেদক’এর সাথে ।
মুরাদ নামের একজনে বলেন, সন্তান হবেনা শুনে স্ত্রীর প্রতি কাশেমের মন উঠে গেছে।
রবিবার সকালে স্থানীয় মেম্বার ইমামুল হোসেন রিমন’কে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গহনাদি’র বিষয়ে একবার সালিশ হয়েছে।