হাবিবুর রহমান, চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের চিলমারীতে দুর্গম চরে প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে মাত্র একজন শিক্ষিকাকে দিয়ে, এতে করে দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদানের খুবই সমস্যা হচ্ছে । যার কারণে ইতোমধ্যে স্কুল থেকে ঝড়ে পড়েছে অনেক শিক্ষার্থী। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬টি পদের মধ্যে ৫টি পদই শূন্য রয়েছে। স্থানীয়রা বলেন, দুই বছর থেকে এই স্কুলে একজন শিক্ষিকাকে দিয়ে স্কুলটি চলছে। যায় কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা অন্যত্র চলে যাচ্ছে। অনেকেই আবার পড়া-লেখা বাদ দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলেছেন, সামনের নিয়োগে বিদ্যালয়ের শূন্যপদে শিক্ষক দেওয়া হবে। তবে আপাতত খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। এ দিকে, যোগদানের কয়েক মাস পেরিয়ে গেলে ও প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিও) এখনো খোঁজ খবর নিতে যায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এমন অভিযোগ উঠলে নানা ব্যস্ততার কারণে প্রতিষ্ঠানে যেতে পারেননি বলে অযুহাত দেখান। উপজেলার অষ্টমীরচর ইউনিয়নে ১৯৯০ সালে স্থাপিত হয় দক্ষিণ নটারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। পরে ১৯৯৮ সালে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গনে প্রতিষ্ঠানটি সরিয়ে নেওয়া হয় একই ইউনিয়নের ডাটিয়ার চর এলাকায়। পরে প্রতিষ্ঠানটি ২০১৩ সালে জাতিয়করণ হলে, একসঙ্গে ৫জন শিক্ষক দিয়ে ভালোভাবেই পাঠদান চলছিল। ২০১৯ সালে এই প্রতিষ্ঠান থেকে ৩জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিল বলে জানান দায়িত্বরত শিক্ষক। এদিকে, ২ বছরে প্রতিষ্ঠান থেকে ৪জন শিক্ষক অবসরে গেলে লেখা-পড়ার গতি কমে যায়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ২শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে শিক্ষকের অভাবে প্রতিটি শ্রেণির সব বিষয়ে ক্লাস নিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে বলে জানান– ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা মোছাঃ রোজিনা খাতুন। ফলে শিক্ষার্থীরা পাশের মাদ্রাসাসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলে যাচ্ছে। আবার অনেক শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়েছে। দক্ষিণ নটারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, সহকারি শিক্ষিকা মোছাঃ রোজিনা খাতুন প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন। তার সুবিধার জন্য তিনি সম্প্রতি বিনা-পারিশ্রমিকে একজন খন্ডকালিন শিক্ষক নিয়েছেন। প্রধান শিক্ষক না থাকায় তিনি ভারপ্রাপ্ত হয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। বিদ্যালয়ের ২শতাধিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপস্থিতি ও অনেক কম ছিল। প্রথম শ্রেণিতে ৪৫ জনের মধ্যে ২৫, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৫০ জনের মধ্যে ১৮, তৃতীয় শ্রেণিতে ৩০ জনের মধ্যে ১০, চতুর্থ শ্রেণিতে ৩১জনের মধ্যে ১৩ এবং পঞ্চম শ্রেণিতে ৩১ জনের মধ্যে ১০ জন উপস্থিত ছিল। শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষক না থাকায় সব বিষয়ে ক্লাস হচ্ছে না, তাই অনেকেই স্কুলে আসে না। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রোজিনা খাতুন বলেন, ২ বছর ধরে শিক্ষক না থাকায় বিদ্যালয়ে একাই ক্লাস নিতে হচ্ছে। যায় কারণে পাঠদানে অনেক সমস্যা হচ্ছে। স্কুলে এখন ৫টি পদ শূন্য রয়েছে, এখন শিক্ষক নিয়োগ না দেওয়ার কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলে যাচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আরো বলেন, একা ক্লাস নিতে অনেক সমস্যা হওয়ায় শিক্ষা অফিসে কথা বলে অনির্দিষ্টকালের জন্য একজনকে খন্ডকালিন শিক্ষক হিসেবে নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি না থাকায় সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাকির হোসেন আহ্বায়ক হলে ও তিনি এখন স্কুলেই আসেননি। নিচ্ছেন না কোনো খোঁজ খবর ও। খন্ডকালীন শিক্ষক মোছাঃ মমতাজ খাতুন বলেন, প্রধান শিক্ষকের একা স্কুল চালাতে কষ্ট হয়। যার ফলে আমি বিনাপারিশ্রমিকে সময় দিচ্ছি। যাতে প্রতিষ্ঠানটি ভালো ভাবে চলে। এলাকার জহরুল ইসলাম বলেন, ২ বছর ধরে একজন শিক্ষক দিয়ে এই স্কুলটি চলছে। ফলে এখানকার অনেক ছাত্র-ছাত্রীরা ঝড়ে পড়ছে। এ ভাবে কি একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলতে পারে। এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মোহাম্মদ আলী বলেন, এখানে আর আগের মতো ক্লাস হয় না। ফলে ছেলে মেয়েরা আসতে চায় না। স্কুলে যদি পড়া-লেখা না হয় তাহলে আমাদের ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যৎ অন্ধাকার হয়ে যাবে। তাই এই স্কুলে দ্রত শিক্ষক দেওয়া হোক- এটাই আমাদের এলাকাবাসীর দাবি। জব্বার নামে একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্কুলের কমিটিতে যদি এটিও থাকে তাহলে তিনি কি করেন, একদিন ও স্কুল দেখতে এলেন না। প্রতিষ্ঠানটি ধংস হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ জাকির হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি। কেন স্কুলে যায়নি-এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ব্যস্ততার কারণে স্কুলে যেতে পারিনি। এ বিষয়ে কথা হলে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, জেলার মাসিক উন্নয়ন সভায় বিষয়টি জানতে পেরেছি। আগে জানা ছিল না। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা হয়েছে। আপাতত ২/৩ জনকে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে। তাদের বেতন উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে। যতদিন সরকারিভাবে কোনো শিক্ষক নিয়োগ না দেওয়া হয় ততদিন তারা ক্লাস নিবেন। তিনি আরো বলেন, কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে ও এ বিষয়ে কথা হয়েছে। সামনের নিয়োগে ওই প্রতিষ্ঠানে শূন্য পদ গুলোর মধ্যে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
মোঃ হাবিবুর রহমান।