লেখা পড়ার পাশাপাশি রঙিন মাছ চাষ করে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব চাষি নাঈম পাঠান

 

মোঃ হোসেন গাজী।।

মাছ চাষ অনেকেই শখ থেকে চাষ করে আবার কেউ বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে। বর্তমানে রঙিন মাছ সকলের কাছে জনপ্রিয়। কেননা এই মাছ বাড়িতে অ্যাকুরিয়ামে চাষ করা যায়। কিন্তু হয়তো অনেকেই জানেন না এই রঙিন মাছ অন্য মাছের মতো পুকুরেও চাষ করা যায়। বাড়ির পাশে ছোটখাটো পুকুরে এই মাছ লাভজনকভাবে চাষ করা যায়। অন্য মাছের মতো পরিচর্যা করলেই চলে। পড়ালেখার পাশাপাশি রঙিন মাছ বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা : মোঃ নাঈম পাঠান।

চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার ২নং উত্তর আলগী ইউনিয়নের ভিঙ্গুলিয়া গ্রামের এই তরুণ উদ্যোক্তা রঙিন মাছ চাষে সফল হয়েছেন। তিনি উত্তর আলগী ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মোঃ বশির উল্লাহ পাঠানের তৃতীয় পুত্র। এছাড়া তার বাবার রয়েছে ২০টি পুকুর। সেখানে ১২ জন শ্রমিক কাজ করেন। আর তাঁর অধিনে ৪ জন শ্রমিক কাজ করেন। তাদের দৈনন্দিন ৫০০ টাকা রোজে হাজিরা দেয়ার হয়। সে ২০১৯ সালের শুরুতে বাড়ির আঙিনায় একটি পরিত্যক্ত জমিতে ছোট্ট পরিসরে গড়ে তোলেন রঙিন ফিশ ফার্ম। পোনা কেনা, খাবার দেওয়াসহ নানা কাজে তার খরচ হয়েছিল ১০ হাজার টাকা। বছর ঘুরতেই মাছ বিক্রি করেছেন প্রায় এক লাখ টাকার। পরে সেই মাছ পুকুরে চাষ করেন।

বিভিন্ন জেলা থেকে রঙিন মাছ আমদানি করেন মোঃ নাঈম পাঠান। সেই পোনা বড় করে বিক্রি করেন তিনি। বাবার সাদা মাছ চাষই তাকে উদ্বর্ধ করেছে। সে এখন নিজেই হ্যাচারীর মাধ্যমে রেনু উৎপাদন করেন এবং মৎস্য প্রেমিদের কাছে পাইকারির-খুচরা বিক্রি করেন। নিজ বাড়িতে পরীক্ষামূলক রঙিন মাছের চাষ শুরু করলেও এখন তিনি বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করেন । এখন নাঈমের বাড়িতে সারি সারি চৌবাচ্চা। সেখানে আছে নানা রঙের মাছ। তার মধ্যে কই কার্প, কমেট কার্প ও গোল্ড ফিসের চাহিদা বেশি।
বর্তমানে তাঁর খামারে নানা জাতের মাছ রয়েছে, যার মূল্য প্রায় ৫ লাখ টাকা।

২২ বছর বয়সী মোঃ নাঈম পাঠান এইস এসসি পাশ করেছেন। ডিগ্রিতে ভর্তি হবেন। তিনি পড়া-লেখাও করেন। মাছ চাষও করেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছোট বেলা থেকেই তিনি দেখতেন তাঁর বাবা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করতেন। কিন্তু তাঁর বাবা রঙিন মাছ চাষ করেনি। বাবার সাথে এক আত্মীয়র বাড়িতে বেড়াতে যান। সেখানে অ্যাকুয়ারিয়ামের রঙিন মাছ চাষ দেখেন। তখন থেকে রঙিন মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। পড়ালেখার পাশাপাশি বাড়িতে পরীক্ষামূলক রঙিন মাছের চাষ শুরু করে লাভের মুখ দেখেন। নাঈম
বলেন, ২০১৯ সালের থেকে বড় আকারে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ শুরু করি। এর আগে বাবার সাথে মাছ চাষ করতাম। এখন আমি নিজে ৩টি চৌবাচ্চা স্থাপন করি। চৌবাচ্চায় পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা আছে। প্রথমে ১০ হাজার টাকার রঙিন মাছ কেনেন। পড়ে খামার গড়ে তুলতে মাছ, বিদ্যুৎ, অবকাঠামোসহ মোট ৫ লাখ টাকা খরচ হয়। বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে জাপান, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় মা মাছ আমদানি করছেন নাঈম। এই রঙিন মা মাছ পোনা ছাড়ছে। এই পোনা মাছ বড় করে তিনি বিক্রি করছেন। খামারে আছে অক্সিজেনব্যবস্থা।
মাছ বিক্রির জন্য তাঁকে হাটবাজারে যেতে হয় না। খামারের নামে রয়েছে ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল, গুগল বিজনেস। এসব ব্যবহার করে অনলাইনের মাধ্যমে তিনি ঘরে বসেই সারা দেশে রঙিন মাছ বিক্রি করছেন। বিকাশ ও ব্যাংক হিসাবে টাকা নিয়ে কুরিয়ারে বিশেষ ব্যবস্থায় মাছ অর্ডারদাতাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। এভাবে শতকরা ৯০ ভাগ মাছ খুচরা ও পাইকারি দামে তিনি বিক্রি করছেন।

তিনি বলেন, মাত্র ১০ হাজার টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে মাছসহ খামারে প্রায় কয়েক লাখ টাকা মূল্যের সম্পদ রয়েছে। বর্তমানে খরচ বাদে তাঁর মাসিক আয় ৫০-৬০ হাজার টাকা। এক-একটি রঙিন মাছের দাম ১৫ টাকা থেকে ৩৫ হাজার টাকা। এখন তাঁর খামারে প্রায় নানা জাতের মাছ রয়েছে, যার মূল্য প্রায় ৫ লাখ টাকা। আমার হ্যাচারীর কাজ চলমান রয়েছে। সামনে আমি আরো ১৫ থেকে ২০ প্রজাতির মাছ চাষ করব। বর্তমানে কই কার্প মাছ ৪-৫ ইঞ্চি ২০-৩০ টাকা। কমেট কার্প মাছ ৪-৫ ইঞ্চি ২০-৩০ টাকা ও গোল্ড ফিস মাছ ৩-৪ ইঞ্চি ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি করছেন।

নাঈম বলেন, ভবিষ্যতে খামারটি আরও বড় আকারে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। প্রয়োজনীয় মূলধন ও কারিগরি সমস্যার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে রঙিন মাছের আমদানি বাড়ছে। সরকার সহযোগিতা করলে দেশেই উৎপাদন করা সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আজকের দিন-তারিখ
  • মঙ্গলবার (রাত ৯:১৮)
  • ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৪ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০