নিউজ ডেস্কঃ
উত্তরায় গার্ডার দুর্ঘটনার সময় নির্মাণাধীন বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ক্রেন চালাচ্ছিলেন মূল চালকের সহকারী রাকিব হোসেন (২৩)। অথচ এর আগে রাকিবের ক্রেন চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল না এমনটিই জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) র্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ক্রেনের মূল চালক ছিলেন আল আমিন। তার হালকা যানের লাইসেন্স থাকলেও ভারী যানের লাইসেন্স ছিল না। এছাড়া, ঘটনার দিন ওই ক্রেন চালাচ্ছিলেন মূল চালক আল আমিনের সহকারী রাকিব হোসেন। আর মূল চালক আল আমিন বাইরে থেকে নির্দেশ দিচ্ছিলেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, গত সোমবার বিআরটি প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না গেজুবা গ্রুপ কোম্পানির (সিজিজিসি) তত্ত্বাবধানে ক্রেন দিয়ে প্রজেক্টের গার্ডার উত্তোলনের কাজ চলাকালীন ওই দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়। দুর্ঘটনায় ঘাতক ক্রেনের চালক বা অপারেটর মো. আল আমিন ও হেলপার রাকিব হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিজিজিসি হতে ভারী যন্ত্রপাতি সরবরাহের ওয়ার্ক অর্ডার পায় ইফসকন নামক একটি প্রতিষ্ঠান যার সত্ত্বাধিকারী গ্রেপ্তারকৃত মো. ইফতেখার হোসেন ও হেড অব অপারেশন গ্রেফতারকৃত মো. আজহারুল ইসলাম মিঠু। ভারী যন্ত্রপাতি ইফসকনের নিকট বড় ক্রেন না থাকায় তারা থার্ড পার্টি প্রতিষ্ঠান বিল্ড ট্রেড কোম্পানির কাছ থেকে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ক্রেনটি ভাড়া নেয়। এছাড়া, প্রকল্প এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চয়নের দায়িত্বে থাকা ফোর ব্রাদার্স গার্ড সার্ভিসের ট্রাফিক ম্যান আফরোজ ও রুবেল এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিজিজিসির সেফটি ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকার আলীকে প্রকল্প এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের এবং হেভি ইকুইপমেন্ট সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা সিজিজিসির প্রকিউরমেন্ট অফিসার মঞ্জুরুল ইসলামকে দায়িত্বে অবহেলার কারণে গ্রেপ্তার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা আরও জানিয়েছে, ক্রেনের মূল অপারেটর মো. আল আমিনই এ ঘটনায় ঘাতক। তার হালকা গাড়ি চালানোর অনুমোদন থাকলেও ভারী গাড়ি চালানোর লাইসেন্স নেই। ২০১৬ সালে ক্রেন চালনার প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর দুই-তিনটি নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করার পর চলতি বছরের মে মাসে বিআরটি প্রকল্পে ক্রেন অপারেটর হিসেবে কাজ শুরু করে। গ্রেফতারকৃত রাকিব তিনমাস পূর্বে ওই প্রকল্পের ক্রেন হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করে। তার ক্রেন চালনা করার কোন ধরণের প্রশিক্ষণ ছিল না। দুর্ঘটনার দিনে আল আমিন ও রাকিব দুপুর দুইটা থেকে ক্রেন চালানো শুরু করে। একটি গার্ডার স্থাপন শেষে দ্বিতীয় গার্ডার স্থাপনের সময় ক্রেনের ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত ওজনের গার্ডার উত্তোলনের জন্য ক্রেনটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গার্ডারটি প্রাইভেটকারের উপর ছিটকে পড়ে ওই দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়। দুর্ঘটনার সময় ক্রেন চালনা করছিলেন হেলপার রাকিব এবং ক্রেন অপারেটর আল আমিন ক্রেনের বাইরে থেকে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। দুর্ঘটনার পর অপারেটর আল আমিন হেলপার রাকিব ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।
গ্রেপ্তারকৃত জুলফিকার সিজিজিসির বিআরটি প্রকল্পের নিরাপত্তা প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন ২০২১ সালে। শিক্ষাগত যোগ্যতায় তিনি এসএসসি পাশ। তাকে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের নিরাপত্তা প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তার কোনো ধরনের বর্ণিত প্রকৌশলগত দক্ষতা নেই। প্রকল্পের বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকা হতে উত্তরার আজমপুর এলাকা পর্যন্ত নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন তিনি। দুর্ঘটনা সংঘটিত হওয়ার দিন ভারী গার্ডার স্থাপনের সময় নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে তিনি কোনো ধরণের নিরাপত্তা বেষ্টনী স্থাপন এবং পর্যাপ্ত ট্রাফিক নিয়োগ দেননি। এছাড়া, ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হওয়া সত্ত্বেও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য ডিএমপি ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা ছাড়াই ওই কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন। গ্রেপ্তারকৃত মঞ্জুরুল সাড়ে তিন বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানে প্রকিউরমেন্ট অফিসার হিসেবে কাজ করে আসছেন। চীনা ভাষায় দক্ষ হওয়ায় ওই কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন ঠিকাদারি কাজ পাওয়ার ব্যবস্থা করেন তিনি।
ভোরের কাগজ