তানোরে কীটনাশক কোম্পানির যাতাকলে কৃষক কমছে জমির উর্বরতা

 

সারোয়ার হোসেন, তানোর: হরেক রকমের কীটনাশক কোম্পানির বাহারি নামের নানা জাতীয় রোগের দোহায়ে দেদারসে বিক্রি করা হচ্ছে, সরল সাদা পা ফাটা কৃষকরা কোম্পানির উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের মুখে বাহারি কথায় নিমিষেই কিনে জমিতে ব্যবহার করছে, রোগ বালাই আশার আগেই কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা কৃষকদের বুঝিয়ে দিচ্ছেন এখন এই রোগ আসবে, এজন্য এপ্রোডাক্ট ব্যবহার করলে ফলন ভালো হবে। এভাবে রাজশাহীর তানোরের কৃষকদের বুঝিয়ে বিভিন্ন কীটনাশক কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা নিয়োমিত দেদারসে বিক্রি করছেন। সারা দেশে বৈধ অবৈধ কত কোম্পানি আছে তার তো সঠিক হিসেব নেই, আবার তানোরের মত জায়গায় কত কোম্পানি তাদের কীটনাশক বিক্রি করছেন সেটিরও কোন সঠিক তথ্য বা তদারকি নেই। ফলে কৃষকরা প্রতিনিয়ত জেনে না জেনে এসব কীটনাশক জমিতে দিয়ে সর্বনাশ ডেকে আনছেন। অথচ এসব বেপরোয়া কোম্পানির কোনভাবেই লাগাম টানতে পারছেন না কৃষি দপ্তর যেমন, তেমনি ভাবে কৃষি দপ্তরের অসাধু কর্মকর্তা রা নানা সুবিধা দিয়ে বিক্রি করছেন মানহীন পণ্য।
সম্প্রতি তানোর উপজেলায় ইনতেফা নামের এক কোম্পানি কামারগাঁ ইউপির এক চাতালে কৃষকদের নিয়ে গোপনে মত বিনিময় করছেন। তারা গ্যারান্টি সহকারে বলছেন কোন কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিবেন না। তাহলে আপনাদের কপাল পুড়বে। কারন তারা সে ভাবে মাঠে আসে না। আর আমরা মাঠে না আসলেও কোন সময় কোন কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে জানা আছে। আমাদের প্রোডাক্ট ব্যবহার করে কৃষকরা লাভবান হয়েছেন।
ইনতেফা কোম্পানির রাজশাহী এরিয়া ইনচার্জ জাহিদুল কৃষকদের বলেন, উপজেলায় রোপা আমন ধানের মৌসুম। ধানের বয়স প্রায় ২ মাসের মত। এখন মাজরা পোকা ব্যাপক ভাবে দেখা দিবে। যাদের জমিতে দেখা দিয়েছে এবং দেয়নি সবাই দামার নামের কীটনাশক ব্যবহার করবেন কোন রোগ থাকবে না। অন্য কারো কথায় কান দিবেন। এরপর কারেন্ট পোকার আক্রমন শুরু হবে, এজন্য আক্রমনের আগে সাবা নামের এবং এর কিছুদিন পরেই পচন রোগ ধরবে, দুর করতে তারেদ নামের কীটনাশক ব্যবহার করতেই হবে। না করলে আপনারা পরে পস্তাবেন। রোগ আসার আগেই সতর্ক থাকতে হবে। সিনিয়র মার্কেটিং অফিসার তানোর এরিয়ার মোক্তার হোসেন ও মার্কেটিং প্রমোটর সাদ্দাম হোসেন জানান, ইনতেফা কোম্পানির কীটনাশক ব্যবহার করে কৃষকরা সুফল পাচ্ছেন। বাজারে ইনতেফার একচেটিয়া মার্কেট। ইনতেফা আবহাওয়ার সাথে তাল মিলিয়ে পণ্য তৈরি করে। আপনারা কৃষকদের নিজেদের পণ্য বিক্রির জন্য বাহারি কথা বলছেন, কৃষকদের নিয়ে সভা করছেন, কৃষি দপ্তরের অনুমতি আছে জানতে চাইলে তারা জানান, কৃষি দপ্তরের অনুমতি আমরা নিব কেন। বরং তারা মাঠে আসেনা আমরা সব সময় কৃষকের পাশে আছি। তানোরে আপনাদের পরিবেশক কত জানতে চাইলে, তারা জানান ১৭ জন। একটি কোম্পানির ১৭ জন ডিলার থাকলে অন্য কোম্পানির কত থাকবে।
কামারগাঁ ইউপির পারিশো ধানী জমিতে এক কৃষক কীটনাশক স্প্রে করছেন, জানতে চাওয়া হয় কি পোকার আক্রমণ তিনি জানান এখনো পোকার আক্রমন শুরু হয় নি, কোম্পানির লোক এসে জমি দেখে বলল কারেন্ট পোকা ধরবে এখনি এই কীটনাশক দিতে হবে। নইলে ফলন পাবে না। তার কথামত স্প্রে করছি। কারন অনেক খরচ করে জমি রোপন করেছি।
কৃষকরা জানান, আমাদের সাথে এত প্রতারনা কেন করা হচ্ছে। আজ একোম্পানি কাল আরেক কোম্পানি, পরশু আরেক কোম্পানি এসে লেকচার দিয়ে পণ্য বিক্রি করছেন। তাদের স্মার্ট কথায় সরল সাদা কৃষকরা একাধারে কীটনাশক ব্যবহার করে জমির সর্বনাশ ডেকে আনছে। এত কোম্পানি কেন আসবে। এসব নামি দামি কোম্পানির মোড়কে ভেজাল কীটনাশকে ছড়িয়ে পড়েছে বাজার। কৃষি দপ্তর এসব বিষয়ে কোন নজরদারি নেই। অথচ কৃষি দপ্তরের উচিৎ যে কোম্পানির কীটনাশকের মান ভালো পরিক্ষা নিরিক্ষার মাধ্যমে যাচাই বাচাই করে মার্কেটে আনা দরকার। আর উপজেলার পাড়া মহল্লা থেকে শুরু করে আনাচে কানাচে শতশত কীটনাশকের দোকান গড়ে উঠেছে। রাখা হচ্ছে খোলামেলা জায়গায়।
বেশ কিছু কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা জানান, আমাদের কে মাসিক টার্গেট দেয় সেটা পুরুন না করতে পারলে বেতুন পাওয়া যায় না। যার কারনে আমাদেরকে মাঠে পড়ে থাকতে হয়।
আর কৃষকরা বলেন, যত কোম্পানি আছে তা বলায় মুসকিল, কখনো একোম্পানি এসে বলছে আমাদের পণ্য একশো পারসেন কাজ করে। এটা ব্যবহার করেন। আবার দোকানে গেলে আরেক অবস্হা। যাই যে ভাবে পারছে আমাদের ঠকিয়ে বানিজ্য করছেন। এতে করে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের কারনে জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। যদি কৃষি দপ্তর নির্দিষ্ট কোম্পানীর কীটনাশক ব্যবহার করতে বলত তাহলে আমাদের জন্য ভালো হত এবং আমরা প্রতারনার সীকার হতাম না।
কয়েকদি আগে কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ জানিয়েছিলেন, রোগ না আসার আগে কেউ যদি কীটনাশক ব্যবহার করে তাহলে কি বলার থাকে।
এবারে উপজেলায় ২২ হাজার ৬শো ১০ হেক্টর জমিতে রোপা আমব চাষ হচ্ছ। এখন পর্যন্ত ধানের অবস্হা ভালো আছে, রোগ বালা তেমন নেই, মাঠে সম সময় কাজ করা হচ্ছে। মাঠ দিবসসহ নানা পরামর্শ নিয়োমিত চলছে, যাতে কৃষকরা প্রতারণারর সীকার না হয়।তবে শনিবার একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেন নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পংকজ চন্দ্র দেবনাথ জানান, এসব বিষয়ে কেউ অবহিত করেনি। কোম্পানি কৃষকদের সাথে কিছু করতে হলে কৃষি বিভাগকে অবহিত করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে কৃষি অফিসারের সাথে আলোপ আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা গ্রহন করা হবে।

 

সারোয়ার হোসেন
১০ সেপ্টেম্বর /২০২২ইং

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আজকের দিন-তারিখ
  • শুক্রবার (সন্ধ্যা ৭:৪৬)
  • ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ (বসন্তকাল)
পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১