বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল্লাহ হত্যার ঘটনায় খুনি শনাক্ত খুনী আত্মহত্যা করেছেন ? না-কী হত্যার পেছনে রহস্য লুকিয়ে আছে

 

অনলাইন ডেস্ক-অবশেষে সকল জল্পনার অবসান ঘটিয়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ বীর মুক্তিযোদ্ধা, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও শহীদ জাবেদ মুক্ত স্কাউট দলের সভাপতি রফিকুল্লাহকে খুনের ঘটনায় খুনীকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। তবে আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, খুনী ঘটনার পর ট্রেনের নিচে পড়ে আত্মহত্যা করার পর চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ তাঁকে অজ্ঞাত শনাক্ত করে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করেছে। এ বিষয়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঘটনার পর পরই মডেল থানা পুলিশ ঘটনার আশপাশের বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করে। পাশাপাশি নিহত রফিকুল্লাহের কাছে থাকা মিরাজের জিজ্ঞাসাবাদের

পর পুলিশের বিভিন্ন সংস্থা ঘটনা উদ্ঘাটনে মরিয়া হয়ে কাজ করে। এক পর্যায়ে পুলিশ নিশ্চিত হয় এ ঘটনা নিহতের সাথে সখ্যতা রয়েছে এমন লোক ঘটিয়েছে। পরবর্তীতে তাঁরা খুনীকে শনাক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করে এবং তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতা নেয়। এরপর তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতায় চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ খুনীকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হন।

অপরদিকে ঘটনার পর সকল দিক থেকে একটি আওয়াজ হয় নিহত রফিকুল্লাহের সাথে চাঁদপুর শহরের কোনো এক তরুণের সাথে সু-সম্পর্কের রেশ ধরে ঐ তরুণ গত কয়েক মাস যাবত নিহত রফিকুল্লাহের বাসায় আসা-যাওয়া করতো এবং তরুণেই ঘটনার নেপথ্য নায়ক বা খুনী কিন্তু এই খুনীর ঠিকানা কারো জানা ছিলো না। অবশেষে তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ইমু থেকে ঐ তরুণের সকল কিছু সংগ্রহ করে তাঁকে পুলিশ সনাক্ত করতে সক্ষম হন।

জানাযায়, নিহত রফিকুল্লাহর খুনী চাঁদপুর শহরের পুরাণ বাজার এলাকার ৪নং ওয়ার্ডের দাসপাড়ার গনেশ দাসের বাড়ির বাসিন্দা। তাঁর নাম অমিত দাস বয়স ১৬, পিতা গৌতম দাস। সে শহরের গনি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্র।

এদিকে খুনী অমিত দাস ঘটনার দিন ঘটনা ঘটিয়ে পালপাড়া হয়ে মিশন রোড হয়ে রেললাইন দিয়ে শহরের গুচ্ছ গ্রাম এলাকায় চলে যায়। ঐ এলাকায় ঘটনার পর থেকে সারারাত আত্মগোপনে থাকে। এরপর ভোর রাতে খুনী অমিত শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের শেষ প্রান্তে চাঁদপুর রায়পুর সড়কের রেলক্রসিংর কাছাকাছি স্থানে অবস্থান নেয়।
অপরদিকে গত ২৫ সেপ্টেম্বর ভোরে মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেন আসার সময়ে রেলক্রসিংয়ের দায়িত্বে থাকা কর্মচারী দেখেন এক তরুণ রেল লাইনের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ট্রেনটি শহরের কোর্ট স্টেশন থেকে ছেড়ে ঐ এলাকা অতিক্রমকালে তরুণ হঠাৎ করেই ঝাপ দিয়ে ট্রেনের নিচে পড়ে যাওয়ায় তার দেহটি ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায়। পড়ে রেলওয়ে জিআরপি পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে এবং পিবিআই পুলিশ গিয়ে লাশের বিভিন্ন আলামত জব্দ করে রাখে। পরে লাশটির কোনো স্বজনের খোঁজ না পাওয়ায় বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করা হয়।

অপরদিকে অমিত ঘটনার দিন বিকেলে বাসা থেকে বের হয়ে সারারাত বাসায় না যাওয়া এবং আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে খোঁজাখুজি করে না পাওয়ায় তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় নিখোঁজ একটি জিডি করা হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ অমিতকে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে শনাক্ত করার পর ঘটনার দিনের পোশাকসহ বিভিন্ন আলামত এবং সিসিটিভির ফুটেজের পোশাক ও পিবিআই পুলিশের কাছে থাকা ট্রেনের নিচে ঝাপ দিয়ে পড়া তরুনের আলামত নিয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়। এই অমিতই নিহত রফিকুল্লাহর খুনী।

পরবর্তীতে পুলিশ অমিতের পোশাকসহ লাশের ছবি ও অন্যান্য আলামত নিয়ে পুরাণবাজারস্থ অমিতের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে তাঁদের মাধ্যমে পুলিশ আরো শতভাগ নিশ্চিত আত্মহত্যাকারী তরুণ হলো অমিত এবং এই অমিত হলো বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল্লাহের খুনী।

এদিকে খুনের ঘটনার ১দিন পর নিহত রফিকুল্লাহের ভাতিজা মুহাম্মদ মারনুছ মাহমুদ তন্ময় বাদী হয়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নং-৫৩। তাং- ২৬/৯/২০২২ খ্রিঃ। যদিও উক্ত মামলার এজাহারভুক্ত কোনো আসামীর নাম দেয়া হয়নি। এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে পুলিশ হেফাজতে থাকা নিহত রফিকুল্লাহের সার্বক্ষণিক দেখা শোনার দায়িত্বে থাকা মিরাজ, খুনির পোশাকসহ বিভিন্ন আলামত দেখে পুলিশকে নিশ্চিত করেন এই সেই প্রকৃত খুনী।

মিরাজের তথ্য মতে, খুনী অমিতের সাথে ৩ থেকে ৫ মাসের মতো পরিচয় হয় নিহত রফিকুল্লাহের সাথে। খুনী অমিত মাঝে মধ্যে নিহত রফিকুল্লাহের নিকট আসতো এবং তারা দুজন একান্তেই আলাপ আলোচনা করে আবার অমিত চলে যেতো কিন্তু মিরাজ বেশ কয়েকবার অমিতের পরিচয় জানতে চাইলেও নিহত রফিকুল্লাহের অপারগতার কারণে জানতে পারেননি। তাই মিরাজ অমিতের পরিচয় জানার আগ্রহ দেখাননি। মিরাজের তথ্য মতে, অমিত প্রায়ই রফিকুল্লাহের নিকট থেকে টাকা নিতো। কিছু দিন পূর্বে অমিত নিহত রফিকুল্লাহের বাসায় এসে মিরাজের মোবাইল ক্রয়ের জন্য যোগানো ১৫হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে নিহত রফিকুল্লাহকে জানালে তিনি মিরাজকে অমিতের চুরি করে নিয়ে যাওয়া ১৫ হাজার টাকা জরিমানাও দেন। মিরাজের তথ্য মতে, খুনী অমিত পড়াশোনার পাশাপাশি শহরের একটি সংগীত প্রতিষ্ঠানে গান শিখতেন।

এদিকে নিহত রফিকুল্লাহের নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা অমিতকে শনাক্ত করার পর তাঁর এই আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা গুঞ্জন। নিকট স্বজন এবং সতীর্থরা এই ঘটনা নিয়ে নাম প্রকাশ করার না শর্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের পর খুনী নিজেই আত্মহত্যা করেছেন ? না-কী, হত্যার পেছনে কোনো বড় ধরনের রহস্য লুকিয়ে থাকায় খুনীকে হত্যার প্ররোচনায় প্ররোচিত করা হয়েছে।

এই ঘটনার বিষয়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রশীদের সাথে কথা হলে তিনি রহস্য উদঘাটনের কথা স্বীকার করে বলেন। এ বিষয়ে আরো অধিকতর তদন্ত চলছে। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, অমিত সরাসরি খুনী বা সে নিজে খুন করেছে এটি আমাদের চূড়ান্ত তদন্তে প্রতীয়মান হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আজকের দিন-তারিখ
  • বৃহস্পতিবার (সন্ধ্যা ৬:১১)
  • ১০ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ৭ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
  • ২৫শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শরৎকাল)
পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১