ক্রান্তিকালের সুযোগ নিয়ে পরিবেশ অশান্ত করার চেষ্টায় বিরোধী দল: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে অনুভূতিটা কোথায়? অনুভূতিটা থাকতে হবে দেশের পথে। দেশপ্রেমটা থাকতে হবে। ক্রাইসিসের সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক অবস্থাকে ঘোলাটে করা আর ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করার প্রবণতাটা পরিহার করতে হবে।

বুধবার জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে মুজিবুল হক চুন্নু বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দায় সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানান এবং এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন কিনা জানতে চান।

উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা বললেন? আমার প্রশ্ন এখানে? দেশ যখন এমন ক্রান্তিলগ্নে পড়ে তখন আমাদের যারা বিরোধী দল আছেন আমি সবার কথা বলছি- তাদের মাঝে ওই উদ্বেগ আমরা দেখিনি।

তিনি বলেন, ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা শুধু মুখে বললে হবে না। নিজের থেকে পাশে দাঁড়াতে হবে। আমরা কিন্তু সবাইকে নিয়ে কাজ করি। আমরা যখন উন্নয়নটা করি। কোন এলাকাটা আমাদের ভোট দিল বেশি আর কোন এলাকা দিল না- সে বিবেচনা করি না। জনমানুষের জন্য আমাদের উন্নয়ন। গণমানুষের কথা চিন্তা করে আমরা কাজ করি। ঠিক তেমনি দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা বসে থাকিনি। অনেকে তো সমালোচনা করে যাচ্ছেন, বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু একমুঠ চালও দিয়ে বা হাত দিয়ে পানি থেকে কাউকে উদ্ধার করতে দেখিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সব সময় ঐক্যে বিশ্বাস করি। যারা আসবেন তাদের সঙ্গে আমরা কাজ করব। এতে কোনো সন্দেহ নেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধের ভয়াবহতা ও পণ্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে আমি খোলামেলা কথা বলেছি। যদিও অনেকে আমার সমালোচনাও করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, এভাবে কথা বললে মানুষ ভয় পেয়ে যাবে। ভয় নয়, মানুষকে সতর্ক করার জন্য এটা বলেছি। শুধু সতর্ক নয়, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি। তিনি বলেন, আমাদের মাটি অত্যন্ত উর্বর। আমরা ফসল ফলাব। খাদ্য উৎপাদন করব। আমরা ব্যবহার করব এবং আমরা সেটা করতে পারি। বাংলাদেশ পারে আমরা অনেক ক্ষেত্রে এটা বিশ্বকে বুঝিয়ে দিয়েছি। সেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা শুধু নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ কষ্টে ভুগছে। পণ্যমূল্য পরিবহণের জন্যও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যেখান থেকে খাদ্য বা তেল কিনতাম যুদ্ধের কারণে কিনতে পারছি না। বিকল্প জায়গা খুঁজে বের করছি। সেখান থেকে যাতে আমরা খাদ্য, ডিজেল, তেল, সার আনতে পারি সেই ব্যবস্থা করছি। এমনকি এলএনজি আমদানির জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছি এবং নিয়েছি।

এর আগে গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সেই সঙ্গে স্যাংশন। এই স্যাংশন দেওয়ার ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। সারা বিশ্বের অবস্থাই খুব টালমাটাল। শুধু বাংলাদেশ নয়। বরং বাংলাদেশ অনেক উন্নত দেশ থেকে এখনো পর্যন্ত ভালো অবস্থায় আছে বলে মনে করি।

‘ইউরোপ, আমেরিকা, গ্রেট ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশের অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়- প্রতিটি জায়গায় জ্বালানি তেলের অভাব, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সব জায়গায় লোডশেডিং। গ্রেট ব্রিটেনে বিদ্যুতের দাম ৮০ ভাগ বেড়েছে। তারা সবকিছু রেশন করে দিচ্ছে। সেই পরিস্থিতিতে আমাদের দেশে যাতে প্রভাবটা না পড়ে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি। সবার কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, আমাদের খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে। বারবার বলছি এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। যখন বিশ্বব্যাপী খাদ্যের অভাব, মূল্যস্ফীতি তখন আমাদের দেশে নিজেদের মাটি ও মানুষ নিয়ে চলার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছি।’

বাজার থেকে পণ্য গায়েব হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী তো আছেই। এই অসাধু ব্যবসায়ীরা নিজেদের আর্থিক লাভের কথা চিন্তা করে, মানুষের দুর্ভোগের কথাটা চিন্তা করে না।

সম্পূরক প্রশ্ন করতে গিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকের রিপোর্ট, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির প্রতিবেদন এবং ওয়ার্ল্ড ফুড প্রজেক্টের রিপোর্টের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, বাংলাদেশে ৬৮ শতাংশ মানুষ খাবার কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। এই রিপোর্ট ওয়াল্ড ফুড প্রজেক্টের। সিপিডি বলছে, দক্ষিণ এশিয়ায় খাবারের দাম সবচেয়ে বেশি। যে ৪২টি দেশে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে বাংলাদেশ তার একটি। এমনকি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত বারবার বলছেন, দুর্ভিক্ষ হতে পারে সবাই যেন সাবধান হয়। প্রথম আলোর লিড নিউজ চাল, আটা, ভুট্টার দামে রেকর্ড। খোলা আটা জানুয়ারি ২০২০ সালে ছিল ৩০ টাকা, সেটা অক্টোবরে এসে দাঁড়িয়েছ ৫৫ টাকা। মোটা চাল ২০২০ জানুয়ারিতে ছিল ৩২ টাকা, সেপ্টেম্বর-২২ এ এসে দাঁড়িয়েছে ৫০ টাকা। ভুট্টা ২৪ থেকে হয়েছে ৩৪.৫ টাকা। পরে রুমিন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার কী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে তা জানতে চান।

উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি আগেই বলেছি ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার কিছু লোক থাকে। এবং সেসব লোকের কথাই মাননীয় সদস্য বলেছেন। যে পত্রিকাগুলোর নাম তিনি নিয়েছেন তার মধ্যে একটা পত্রিকা কিন্তু আমি কখনো পড়ি না। পড়ি না এই কারণে তারা সব সময় উল্টো দিকে থাকে। এরা কখনো বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক তা চায় না। একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তারা পছন্দ করে। পছন্দ করে এজন্য যে, তাদের একটু ভালো হয়, যাতে কোনোরকম কদর বাড়ে সেজন্য। আর যে প্রতিষ্ঠানটির কথা বলেছেন, এই প্রতিষ্ঠানটি কোনোদিনই কোনো হিসাবেই তারা কোন জায়গা থেকে হিসাব পায়- জানি না। এই হিসাব তাদের কখনই সঠিক হিসাব হয় না।

তিনি বলেন, আজকে সারা বিশ্বে যেভাবে পণ্যমূল্য বেড়েছে সেটা যদি দেখেন, সে তুলনায় বাংলাদেশ ভালো আছে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে তো দাম বেড়েছে, আমি তো অস্বীকার করছি না। আর দাম বেড়েছে বলেই না আমরা ভর্তুকি দিয়ে স্বল্পমূল্যে যারা ক্রয় করার সক্ষমতা রাখে না তাদের দিচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, হেডলাইন দিয়েছে সব দেশের থেকে বাংলাদেশে পণ্যমূল্য বেশি। কিন্তু ভেতরে যে ডাটা দিয়েছে সেখানে বাংলাদেশ হিসাবে আসে না। বাংলাদেশ কয়েকটা দেশ থেকেই ভালো অবস্থায় আছে। এরা কারসাজিটা এভাবেই করে। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে কিছু কিছু পত্রিকা এখন এমনভাবে একটা হেডলাইন করে যা বিভ্রান্তকর। ভেতরে জাতি দেখুক সেটা সঠিক নয়। সঠিক তথ্য তারা দেয় না। বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেয়।

সিপিডির নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে প্রতিষ্ঠানটির কথা উনি উল্লেখ করেছেন সে প্রতিষ্ঠান তো কোনো কিছুই ভালো লাগে না তাদের। তাদের ভালো লাগে কখন, যখন সেনা শাসন ছিল। যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল তাদের একটু কদর বাড়ত। এই আশায় তারা বসে থাকে এটাই বাস্তবতা।

শেখ হাসিনা বলেন, সারা বিশ্বের মানুষ ভুক্তভোগী। ইংল্যান্ডে বহু মানুষ কয়েক মাস ধরে মাংস কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই। তিনবেলা খাবার খেতে পারে না। ইউরোপের অবস্থাও এ ধরনের। শীত এসে যাচ্ছে, তারা গরম পানি পাচ্ছে না।

শেখ হাসিনা বলেন, এই যখন বিশ্বব্যাপী অবস্থা। বাংলাদেশের মানুষের জন্য সব রকম চেষ্টা করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের জনগণের জন্য কী করা যায় সংসদ সদস্য হিসেবে সদস্যদের সেটাই করা উচিত। আর যে পত্রিকা আর যে প্রতিষ্ঠান এরকম লিখছে, বলছে- তাদের সবাইকে আমার খুব ভালো চেনা আছে। আমাদের মতিয়া আপার ভাষায় বলতে হয়, একটা প্রতিষ্ঠান আছে তার প্রধানকে মতিয়া আপা নাম দিয়েছেন আসল নাম বাদ দিয়ে বলেছেন সেনাপ্রিয়। অর্থাৎ অস্বাভাবিক একটা পরিস্থিতিতে তাদের একটু দাম বাড়ে, মূল্য বাড়ে, এটাই বাস্তবতা।

যুগান্তর

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আজকের দিন-তারিখ
  • শুক্রবার (দুপুর ২:৫৯)
  • ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০