তানোর(রাজশাহী) প্রতিনিধি: নানা সমালোচনা, অব্যবস্থাপনা ও বিভিন্ন অভিযোগের মধ্যে দিয়ে মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী প্লাটিনাম জুবিলি ২০২৩ উদযাপিত হয়েছে। মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রায় ৫৮০ জন শিক্ষার্থী সকাল সাড়ে আট টায় প্লাটিনাম জুবিলিতে অংশগ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা। এসময় খাবার না পেয়ে জুবিলি কর্তৃপক্ষের নিকট শিক্ষকসহ শিক্ষার্থীরা আবেদন করেও সাড়া দেয়নি খাদ্য বিতরণের দায়িত্বে নিয়োজিতরা। মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাইকে শিক্ষকদের খাবারের জন্য ঘোষণা দিলে শিক্ষার্থীরা খাদ্য বিতরণের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের অবরুদ্ধ করে ফেলেন ও দরজা এবং জানালায় লাথি দিতে শুরু করেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে প্লাটিনাম জুবিলি ২০২৩ আহবায়ক শিক্ষক আব্দুস সাত্তার সরকার ঘটনাস্থলে আসেন এবং শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুলতানা শাহীন ও সহকারি প্রধান শিক্ষক উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারণে শিক্ষার্থীরা খাদ্য বিতরণের দায়িত্বে নিয়োজিত দের অবরুদ্ধ করে। মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, স্কুল থেকে ৭৪ জন রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন। এর মধ্যে ৬৫০ জন বাকিরা সাবেক ও বর্তমান শিক্ষক। তারা অভিযোগ করেন,তাদের প্যাকেট খাবার দেয়ার কথা ছিল,কিন্তু তাদের ৫শ টি খাবার দিয়ে তা বন্ধ করে দেন। বাকি খাবার চাইতে গেলে প্লাটিনাম জুবিলির দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক আশরাফুল আলম কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সাথে রাগান্বিত হয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং তাদের বিভিন্ন প্রকার ভয়-ভীতি দেখান বলে অভিযোগ করেন তারা। এক পর্যায়ে খাবার না পেলে তোমরা ফিরে আসবে না মাইকে এই রকম ঘোষণা দেয়ায় স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রচন্ড উত্তেজনা ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকলে উপস্থিত হন প্লাটিনাম জুবিলির সদস্য সচিব মোহনপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মফিজউদ্দিন কবিরাজ,ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান, আশরাফুল আলমসহ জুবিলির নেতৃবৃন্দরা। এতে করে ছাত্রদের খাবারের জন্য নগদ ২০ হাজার টাকা দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। প্লাটিনাম জুবিলির কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জানা যায়, উক্ত প্লাটিনাম জুবিলির ৯৫০ জন রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন। যারা রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন তাদের অর্ধেকই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি। কারণ হিসেবে জানা গেছে তড়িঘড়ি অনুষ্ঠানের তারিখ ঘোষনা করা এমন ঘটনা ঘটেছে। অনেকের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র তড়িঘড়ি করে অনুষ্ঠান আয়োজনের কারণে প্রোগ্রামে যোগ দিতে পারেননি।
আর যারা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন টি শার্ট ও খাবারের প্যাকেটে স্থানীয় সংসদের নাম ব্যবহার হওয়ায় চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২ হাজার সালের এক সাবেক নারী শিক্ষার্থী জানান,অনেক আশা নিয়ে প্রাণের প্রতিষ্ঠানে জুবিলিতে অংশ গ্রহন করবো বলে পরিবারের ৪ সদস্য রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে নির্ধারিত দিনে মাইক্রো ভাড়া করে বহুদুর থেকে সময় মত এসে শুধুমাত্র ১টি খাবার প্যাকেট পেয়েছি। যা খাওয়ার উপযুক্ত ছিলনা। পরে স্বামী সন্তান নিয়ে হোটেল এ খেয়েছি আয়োজক কর্তৃপক্ষের কাছে এটা মোটেও আশা করিনি। অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন প্লাটিনাম জুবিলি অনুষ্ঠানটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে রুপান্তরিত হওয়ায় তারা অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। আরো জানা যায়, পুরো অনুষ্ঠানটি দলীল লোকদের দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় খাবার, ব্যাগ ও পানি সংকট হয়েছে।
এবিষয়ে প্লাটিনাম জুবিলি-২০২৩ যুগ্ম সদস্য সচিব ও জেলা মহিলালীগ নেত্রী অধ্যাপক রোকসানা মেহেবুব চপলা বলেন, প্রথম থেকে আমরা আয়োজক কমিটির কয়েকজন সদস্য বলছি প্লাটিনাম জুবিলি হবে অরাজনৈতিক অনুষ্ঠান,যেখানে সবার প্রানবন্ত উপস্থিতি নিশ্চিত হবে। তৈরী হবে বৃহৎ একটি এসোসিয়েশন যা ভবিষ্যতে অত্র স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে আলো ছড়াবে। কিন্তু হঠাৎ করে স্থানীয় সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন প্লাটিনাম জুবিলি প্রোগ্রামটি আহবায়কের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে নিজের মত করে দলীয় লোকজন নিয়ে দলীয় ভাবে তড়িঘড়ি অনুষ্ঠানের তারিখ ঘোষনা করেন। চাকুরীজীবি, প্রবাসী, ব্যবসায়ী ও কৃষকদের কথা চিন্তা করে আমরা অনুষ্ঠানের তারিখ পেছানোর জন্য বার বার এমপি মহোদয়কে অনুরোধ জানালে সেটা হয়নি, সেই কারনে আয়োজক কর্তৃপক্ষের কয়েকজন আত্মসম্মান নিয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। এখানে সফল রেজিস্ট্রেশনকারী শতকরা ৪০ শতাংশ প্রোগ্রামে আসেন নি। অনুষ্ঠানটি কাভারেজ দেওয়ার জন্য স্থানীয় সাংবাদিকদের চিঠি দেওয়া হলেও সাংবাদিকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন খাবারের দ্বায়িত্বে নিয়োজিত অধ্যাপক আশরাফুল আলম। এবিষয়ে প্লাটিনাম জুবিলি ২০২৩ আহবায়ক মো: আ: সাত্তার সরকার বলেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীরা খাবার পায়নি এটা খুবই দুঃখজনক।মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্লাটিনাম জুবিলি-২০২৩ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের চীফ হুইফ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন এমপি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি, রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যায় ভিসি অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার, রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল,
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড রাজশাহী চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন।