শাহাদাত হোসেন, রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি::
মেজরকার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীতে ভরা প্রজনন মৌসুমেও এখনো ডিম ছাড়েনি মা মাছ। নদীতে মা মাছের আনাগোনা বাড়লেও ডিম ছাড়ার পরিবেশ অনুকূলে নেই। পরিবেশ অনুকূলে না থাকায় ভরা প্রজনন মৌসুমে অমাবস্যার জোতেও ডিম ছাড়েনি মা মাছ। তবে ডিম ছাড়ার সাম্ভাব্য সময় ছিল গত ১৮ থেকে ২২ এপ্রিল। কিন্তু এ জোতে ডিম না ছাড়ায় হতাশ হালদার পাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা।গত কয়েক সপ্তাহ ধরে শুনা যাচ্ছে হালদায় সমুদ্রের লবণাক্ত পানি প্রবেশ করেছে। এই সত্যতা যাচাই করতে গতকাল শনিবার বিকালে উরকিচর ইউনিয়নের অংশে হালদার পানি মুখে নিয়ে মিলে এর সত্যতা। হালদা গবেষকরা মনে করছেন বৃষ্টিপাতের অভাবে পানির উচ্চ তাপমাত্রা ও লবণাক্ততা থাকায় মা মাছ ডিম ছাড়েনি। তবে ভারী ব্রজপাতসহ পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল নেমে এলে ডিম ছাড়বে মা মাছ মনে করছেন তারা। অপরদিকে কখন ডিম ছাড়বে মা মাছ এ আশায় হালদার দুই পাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। তারা ডিম সংগ্রহ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছে হালদার পাড়ে। অনেক ডিম সংগ্রহকারী পুরাতন নৌকা নতুন করে তৈরি রেখেছেন। কেউ কেউ নতুন ভাবে নৌকা ও বাঁশের ভেলা তৈরি করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অপেক্ষা শুধু পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের বলে মনে করছেন ডিম সংগ্রহকারীরা। বর্তমান হালদার পরিবেশ নিয়ে জানতে চাইলে হালদা নদীর উপর পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনকারী হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন,হালদা নদীর বিভিন্ন স্পনিং স্পট থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে এবং পরীক্ষা করে দেখা যায় পানির বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক প্যারামিটারের (দ্রবীভুত অক্সিজেন, পিএইচ, কার্বনডাই-অক্সাইড, ক্যালসিয়াম, ট্র্যান্সপারেন্সি, খরতা, ও ক্ষারকত্ব ইত্যাদি) মান আদর্শ মানের মধ্যে রয়েছে।তার মতে কার্পজাতীয় মাছের প্রজননের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্যারামিটার যেমন পানির তাপমাত্রা, লবণাক্ততা,টিডিএস এবং ইলেকট্রিক্যাল কনডাক্টিভিটি এর মান আদর্শ মান অতিক্রম করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সাময়িক এই তাপমাত্রা ও সামান্য লবণাক্ততা হালদায় কার্পজাতীয় মাছের প্রজননে খুব বেশি প্রভাব ফেলবেনা। কারণ মেজরকার্প জাতীয় মাছ সর্বোচ্চ ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা এবং সহজে ৫ পিপিটি এমনকি সর্বোচ্চ ১৪ পিপিটি পর্যন্ত লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন পরিবেশ অনুকুলে থাকলে অর্থাৎ বজ্রপাতসহ পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢল এলে আগামী পূর্ণিমার জো’তে অর্থাৎ মে মাসের প্রথম সপ্তাহে মা মাছের ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী পূর্ণিমার জো’তো পরিবেশ অনুকূলে না থাকলে পরবর্তী অমাবস্যার জো অর্থাৎ (১৬-২১) মে অথবা পূর্ণিমার জো (১-৬) জুন অথবা (১৫-২০) জুন অমাবস্যার জো’তে কার্পজাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়বে।