পুরোদমে ডিম ছাড়ার জন্য পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতসহ পাহাড়ি ঢলের অপেক্ষায় হালদার মা মাছ

শাহাদাত হোসেন, রাউজান প্রতিনিধি:
বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদায় কার্পজাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউস) মা মাছ ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুমে বৃষ্টিপাত হলেও মা মাছ ডিম ছাড়েনি। তবে অল্প পরিমাণে নমুনা ডিম ছেড়েছে। গত ১৭-১৮ মে হালদা নদীর কিছু কিছু অংশে এই নমুনা ডিম পাওয়া যায়। জানা যায়, গত দু’বছরে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল না হওয়ায় হালদা নদীতে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে ডিম ছাড়েনি মা মাছ।২০২২ সালে মা-মাছ তিন দফায় নমুনা ডিম ছাড়লেও পূর্ণাঙ্গ ডিম ছাড়েনি। এবারো মা-মাছের ডিম ছাড়া নিয়ে হতাশ স্থানীয় মৎস্যজীবিরা।গত ২০২১ সালে হালদা নদীতে ডিম ছাড়ার সময় ঘূর্ণিঝড় আম্পানে নদীর পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় ডিম ছাড়ে কম। সে বছর হালদা নদীতে মা মাছের ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে মাত্র ৮ হাজার ৫০০ কেজি।২০২২ সালে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল না হওয়ায় ঐ বছর ৬ হাজার ৫০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করেন ডিম সংগ্রহকারীরা। এ বছর কাপ্তাই লেকে পানিপ্রবাহ কমে গেলে হালদা নদীতেও পানি কমে যায়। ফলে জোয়ারের সময় কর্ণফুলী নদীর লবণাক্ত পানি সংযোগস্থল দিয়ে মিঠা পানির নদী হালদায় প্রবেশ করছে।এতে হালদার পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পায়। যার কারণে এবং বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল না হওয়ায় ডিম ছাড়তে বিলম্ব করছে মা মাছ। গত বৃহস্পতিবার হালকা বৃষ্টিপাত হলে সামান্য নমুনা ডিম ছাড়ে মা মাছ। এখনো পুরোদমে ডিম ছাড়েনি মা মাছ। হালদা গবেষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ২০মে শনিবার নৌকা নিয়ে হালদা নদীর বিভিন্ন স্পট থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে সরাসরি হালদা নদীতে বসে পরীক্ষা করে দেখা গছে পূৃর্বের চেয়ে হালদা নদীর পানিতে লবণাক্ততা কমেছে। বর্তমানে হালদায় ০.৫ পিপিটি লবণাক্ততার উপস্থিতি রেকর্ড করা হয়েছে। অর্থাৎ বর্তমানে লবণাক্ততা আদর্শ মানের মধ্যে রয়েছে। পাশাপাশি পানির পিএইচ এর গড় মান ৭.৬ আদর্শ মানের (৬.৫-৮.৫) মধ্যে রয়েছে। তবে পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। হালদা নদীর উপর পিএইচডি অর্জনকারী এই গবেষক বলেন, বর্তমানে চতু্র্থ জোঁ অর্থাৎ অমাবস্যার জোঁ চললেও বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল নেমে না আসায় হালদায় বর্তমানে মা মাছের ডিম ছাড়ার অনুকুল পরিবেশ নেই। অনুকূল পরিবেশ না পেলে এই জোঁ’তে মা মাছ পূর্নাঙ্গ ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা নেই। সেক্ষেত্রে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ী ঢল নামলে হালদার জলজ বাস্তুতন্ত্রে ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হবে। আগামী মাসের অর্থাৎ জুনের প্রথম সপ্তাহে (১ থেকে ৬ জুন) পূর্ণিমার জোঁ অথবা সর্বশেষ অমাবস্যার জোঁ’তে (১৫ থেকে ২০ জুন) পুরোদমে ডিম ছাড়বে মা মাছ।রাউজান উপজেলা মৎস্য অফিসের সূতে, বিগত ১৫ বছরে হালদায় মাছের ডিম সংগ্রহের ১লাখ ৪৯ হাজার ৬৯০ কেজি। পরিসংখ্যান দেখা যায়,২০০৭ সালে  হালদা নদী থেকে  ২২হাজার ৩১৪ কেজি,২০০৮  সালে ২ হাজার ৪০০ কেজি,২০০৯  সালে  ১৩  হাজার ২০০ কেজি, ২০১০ সালে ৯ হাজার কেজি,  ২০১১ সালে ১২ হাজার ৬০০ কেজি, ২০১২ সালে ২১ হাজার ২৪০ কেজি, ২০১৩ সালে ৪ হাজার ২০০ কেজি, ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ কেজি, ২০১৭ সালে ১ হাজার ৬৮০ কেজি ও ২০১৮ সালে ২২ হাজার ৬৮০ কেজি ২০১৯ সালে ৭ হাজার কেজি, ২০২১ সালে ৮হাজর ৫০০কেজি ২০২২ সালে ৬ হাজার ৫০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়। এই বছরও ডিমের পরিমাণ কমবে বলে ধারণা করছেন ডিম সংগ্রহকারীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আজকের দিন-তারিখ
  • বুধবার (রাত ১:০৮)
  • ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০