চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী অভিনেত্রী শাবানাকে একনজর দেখার জন্য হতাশ নিজ গ্রামের মানুষ

 

রাউজান ( চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:
নিজ গ্রামের ছোট্ট শিশুরা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী অভিনেত্রী শাবানা দাদুকে একবার দেখতে চাই গ্রামের বাড়িতে। কবে আসবে শাবানা দাদু গ্রামের বাড়িতে এমন প্রশ্ন গ্রামের শিশু-কিশোরদের।১৯৫২ সালে চট্টগ্রামের রাউজানের ডাবুয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের গণিপাড়া গ্রামের গণি চৌধুরীর বাড়ির মৃত আবুল ফায়েজ চৌধুরী ও ফজিলাতুন্নেসা ঘরে জন্ম নেন একসময়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী অভিনেত্রী শাবানা।তাঁর প্রকৃত নাম আফরোজা সুলতানা রত্না।চলচ্চিত্রের পরিচিতি হয়ে উঠে শাবানা নামে।তাঁর শৈশব কেটেছিল গ্রামের বাড়িতে।গ্রামের বাড়ির পাশে রয়েছে শ্রোত ধারা সর্তাখান।সর্তাখালের হাঁটুপানি আর তুলাতলের শীতল বাতাসে খেয়ে পশ্চিম ডাবুয়া রাম সেবক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ডাবুয়া তারাচরণ শ্যমাচরণ উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছিল।পরে রাউজান আর আর এ, সি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস এস সি পরিক্ষা দিয়েছিল।শৈশবে শাবানা সংস্কৃতিমান ছিলেন।স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নাটক, নাচ,গান করতেন।পরে বাবার চাকরির সুবাদে তাকে ঢাকার গেন্ডারিয়ার মনিজা রহমান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ নিয়ে যাওয়া হয়।সেখানে কলেজ ভর্তি হন তিনি। সে সুবাদে চলচ্চিত্রে তাঁর প্রবেশ।পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানের তাকে চলচ্চিত্রে নিয়ে যান।
পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান হলেন শাবানার খালু। শাবানার বাবাও ছিলেন একসময় চিত্র পরিচালক। মাত্র নয় বছর বয়সে ১৯৬২ সালে ‘নতুন সুর’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন শাবানা ছোট্ট মেয়ের চরিত্রে।১৯৬৩ সালে তিনি উর্দু ‘তালাশ’ ছবিতে নাচের দৃশ্যে অংশ নেন।তারপর চলচ্চিত্র জগতে একের পর এক বিভিন্ন সিনেমায় অভিনয় করে দেশের স্বনামধন্য অভিনেত্রী হিসাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠে।দেশবিদেশে ছড়িয়ে পড়ে তাঁর সুনাম।কিন্তু হঠাৎ করেই চলচ্চিত্র জগতকে বিদায় নিয়ে শাবানা স্বামী সন্তানকে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।পরিবর্তন হয়েছে জীবনযাত্রা।তবে মাঝেমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে শাবানা সপরিবার নিয়ে ঢাকায় আসলেও শৈশব কাটানো জন্মস্থানে দির্ঘ সময় ধরে তাঁর গ্রামের বাড়িতে পদচারণা পড়ে না বললেই চলে।তাকে একনজর দেখার জন্য গ্রামের শিশু-কিশোর থেকে শুরু করেই গ্রামের মানুষেরা অপেক্ষার প্রহর গুনছে। গ্রামের ছোট্ট এক শিশু বলেন, কিছুদিন আগে গ্রামের বাড়িতে শাবানা দাদুর ছোট বোন এসেছিল।কিন্তু শাবানা দাদু আসেনি।আমরা শাবানা দাদুকে দেখতে চাই।শাবানা দাদু আপনি কবে আসবেন ড়গ্রামের বাড়িতে এমন প্রশ্ন”ছোট্ট শিশুদের।জানা যায়, কিংবদন্তী এই অভিনেত্রী শাবানা হজ্জ করা পর অনেকটা পর্দার আড়লে চলে যান।স্বামী ওয়াহিদ সাদিক ও তাঁর দুই মেয়ে সুমি, উর্মি ও ছেলে নাহিমসহ সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছে। গত তিন বছর পূর্বে দেশে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে চলচ্চিত্র পুরস্কার গ্রহন করেন।শাবানা মোট ১০ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭৭ সালে তিনি প্রথম পুরস্কার পান ‘জননী’ সিনেমার জন্য। এরপর ১৯৮০, ১৯৮২, ১৯৮৩, ১৯৮৪, ১৯৮৭,১৯৯০, ১৯৯১, ১৯৯৩ এবং ১৯৯৪ সালেও তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।
কিংবদন্তী এই অভিনেত্রী শাবানার পাঁচশতাধিক সিনামা অভিনয় করেছিলেন। প্রথমে বনবাসে রূপবান ও ‘ডাক বাবু’ সিনেমাতে সহ নায়িকা হিসেবে কাজ করা পর ১৯৬৭ সালে ‘চকোরী’ ছবিতে চিত্রনায়ক নাদিমের বিপরীতে তাঁর চলচ্চিত্রে নায়িকা হিসেবে আবির্ভাব ঘটে। এই ছবির পরিচালক ছিলেন এহতেশাম।শাবানার বেশ কিছূ উল্লেখযোগ্য সিনেমা: বেগম রোকেয়া, ঝড় তুফান, বানজারান, রাজনন্দিনী, জননী (১৯৭৭), সখি তুমি কার (১৯৮০), দুই পয়সার আলতা (১৯৮২), নাজমা (১৯৮৩), ভাত দে (১৯৮৪), অপেক্ষা (১৯৮৭), মরণের পরে (১৯৯০), অচেনা (১৯৯১), রাঙাভাবী (১৯৯৩), গরীবের বউ (১৯৯৪), অবুজ মন, মধু মিলন, চকোরী, স্বামী কেন আসামী, মাটির ঘর, রাজলক্ষী-শ্রীকান্ত, লাল কাজল, দস্যু রাণী, নুপুর। শাবানার তিন ভাই আবিদুর রেজা চৌধুরী, আবিদুর মোরসালিন চৌধুরী, আবিদুর সালেহিন চৌধুরী ও পরিবার পরিজন নিয়ে তাঁরাও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। গ্রামের বাড়িতে কেউ থাকেন না। মাঝেমধ্যে তাঁর চাচা-চাচাতো ভাই আসেন গ্রামের বাড়িতে।শাবানার ভাই-বোন রিজভি, রিপন, শাহীন ও রনজিনা। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে শাবানা সবার বড়।
শাবানার বাবা, চাচা ও জেঠা তিন ভাই। তাঁরাও ঢাকা শহরে বসবাস করেন। বছর একবার গ্রামে আসেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আজকের দিন-তারিখ
  • শনিবার (সকাল ১০:১৫)
  • ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
  • ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শরৎকাল)
পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০