চাঁদপুরে বাণিজ্যিকভাবে আঙুর চাষ

 

এস আর শাহ আলম:

আঙুর বিদেশি ফল হলেও জনপ্রিয় এই ফলটি প্রথমবারের মতো চাষে সফল হয়েছেন চাঁদপুরের উদ্যোক্তা কামরুজ্জামান প্রধানিয়া। বাণিজ্যিকভাবে ফলনের লক্ষ্যে ওই উদ্যোক্তা ইতোমধ্যে ২০ শতক জমিতে আঙ্গুর চাষাবাদ শুরু করেছেন। উদ্যোক্তারা বলছেন, চাঁদপুরের মাটিতে আঙুর চাষ করে সফল হওয়া সম্ভব। এর মধ্যে চাঁদপুর জেলায় এটি চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা।

চাঁদপুর সদর উপজেলার চাঁদপুর-মতলব সড়কের পাশেই দেখা মিলছে ভিনদেশী এই রসালো ফলের ফলন। থোকায় থোকায় ঝুলছে ভিনদেশী রসালো ফল আঙুর। ক্ষেতের বাঁশের মাচায় ঝুলে থাকা সবুজ আঙুর দূর থেকে পথচারীদের নজর কাড়ছে। মাত্র ২০ শতক জমিতে বাণিজ্যিকভাবে আঙুর চাষাবাদ শুরু করেন উদ্যোক্তা কামরুজ্জামান প্রধানিয়া।

মূলত বাংলাদেশে অক্টোবর নভেম্বর মাসে আঙুর গাছ ছাটাই করলে মার্চ এপ্রিলে ফল পাওয়া যায়। এরপর আবার শীতের সময়ে ফলন আসে। সাধারণত আঙুর চাষের জন্য এমন জায়গা দরকার হয় যেখানে পরিমিত বৃষ্টি হবে, কিন্তু মাটিতে পানি জমে থাকবে না। আবার আবহাওয়া হতে হবে শুষ্ক ও উষ্ণ থাকে। আঙুর পাকার সময় বৃষ্টি হলে আঙুরের গুণাগুণসহ আকৃতি নষ্ট হয়ে যায়। আবার আঙুর পাখি খেয়ে ফেলে বলে এ নিয়ে সতর্ক থাকতে হয়। পরিমিত মাত্রায় সার ও যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে একটি আঙ্গুর গাছই বছরের পর বছর ধরে ফলন দিতে পারে।

উদ্যোক্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান প্রধানিয়া বলেন, ২০২১ সালে করোনা ভাইরাস যখন কমতে শুরু করে, তখন থেকেই আঙুর চাষ নিয়ে কাজ শুরু করি। আর আমার এই প্রজেক্টটি মাত্র ৬মাস ধরে শুরু করেছি। প্রথমে আমার ছাদ বাগান থকে বেশ কিছু জাত নিয়ে আঙুর চাষ শুরু করি। তবে ২০২৩ সাল থেকে আঙুর ফলনে বেশ ভালো ফলাফল পাই।

উদ্যোক্তা কামরুজ্জামান আরও বলেন, ৪৪টি আঙুর জাতের মধ্যে ১২০টি মাতৃ গাছে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। কিছু কিছু গাছে শোভা পাচ্ছে রসালো ফল আঙুর। এখানে ৬ মাস যাবত পরিচর্যা করা হচ্ছে আঙুর ফল গাছ। ভিনদেশী ফল চাষ করতে গিয়ে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। চাঁদপুরে গ্রিন লঙ, একেলো, বাইকো নুর, লোরাস, ভেলেজ, ডিকসন, সুপার নোভা, নারু সিডলেস জাতের আঙুর ফল চাষাবাদ করা হচ্ছে।

এদিকে জেলায় প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে আঙুর ফল চাষের খবর শুনে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। বেকারত্ব দূরীকরনে এই ফল চাষাবাদে তরুণদের মাঝে স্বপ্ন দেখাচ্ছে।

দর্শনার্থী মো. তানভীর হোসেন ও আমির হোসেন সরকার বলেন, চাঁদপুরের মধ্যে আঙুরে বড় বাগান আর কোথাও নেই। যার কারণে আমরা এই আঙুর বাগানটি দেখতে আসছি। এটি দেখে আমরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছি, যাতে এই ধরণের বাগান করতে পারি। যদিও আমরা বাড়ির আঙিনা এবং ছাদে আঙুরের চারা রোপন করে কোন সফলতা পাইনি। কিন্তু এখানকার দৃশ্য দেখে মনে আবারো উৎসাহ জেগেছে। উদ্যোক্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের কাছ থেকে বিভিন্ন পরামর্শ নিচ্ছি এবং আঙুরের চারাও নিচ্ছি। আশা

উদ্যোক্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান প্রধানীয়ার প্রকল্পে পরিদর্শনে আসা কল্যাণপুর ও আশিকাটি ইউনিয়নের কৃষি কর্মকর্তা আনিসুল ইসলাম ও সাদিকা বেগম বলেন, দো-আঁশযুক্ত লালমাটি, জৈবিক সার সমৃদ্ধ কাঁকর জাতীয় মাটি এবং পাহাড়ের পাললিক মাটিতে আঙুর চাষ ভাল হয়। জমি অবশ্যই উঁচু হতে হবে যেখানে পানি দাঁড়িয়ে থাকবে না এবং প্রচুর সূর্যের আলো পড়বে এমন জায়গা আঙুর চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে। আমাদের পক্ষ থেকে পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে।

চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সাফায়েত আহম্মদ সিদ্দিকী বলেন, চাঁদপুরে আগে কখনো আঙুরের চাষ হতো না। যেগুলো হতো, তা পরীক্ষামূলক জাত। এবার জেলায় প্রথমবারের মতোমিষ্টি আঙুর চাষ শুরু করেছেন উদ্যোক্তা কামরুজ্জামান। তার এই আঙুর চাষের বিষয়টি আমাদের অবগত রয়েছে। কৃষি বিভাগ যারা আগ্রহী তাদেরকে আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আজকের দিন-তারিখ
  • সোমবার (সকাল ১১:২৩)
  • ৭ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ৪ঠা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
  • ২২শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শরৎকাল)
পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১