অস্বর্যা, অর্থাৎ যে নারী একাধারে অসামান্যা ও বুদ্ধিমতী। প্রতিটি নারীই মূলত কোনো না কোনো দিক থেকে অস্বর্যা। গতকাল ১৮ ফেব্রুয়ারি, হবিগঞ্জ সুরবিতান ললিতকলা একাডেমিতে মুক্তাঞ্চল সাহিত্য চর্চা কেন্দ্রের বসন্ত কুমারী গোপাল চন্দ্র সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় শাখার অস্বর্যাদের দ্বারা আয়োজিত হয় সাহিত্য বিষয়ক অনুষ্ঠান অস্বর্যা।
উক্ত অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বসন্ত কুমারী গোপাল চন্দ্র সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারি শিক্ষক জনাব রফিকুল বারী সজীব এবং জনাব আতাউর রহমান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক কর্মী জনাব সারওয়ার পরাগ ও সাংস্কৃতিক কর্মী জনাব শেখ ওসমান গণি রুমী।
আয়োজনের শুরুতেই ছিল সাহিত্য বিষয়ক আলোচলা সভা, কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা এবং স্বরচিত কবিতা পাঠ। একঘেয়েমি দূর করার জন্য আয়োজন করা হয়েছিল “মজার খেলায়, সাহিত্য মেলায়” নামক একটি বিশেষ পর্বের। এই পর্বে খেলার ছলেই জ্ঞান আহরণের সুযোগ পেয়েছিল সকলে। এই পর্বে দুইটি খেলা অনুষ্ঠিত হয় এবং দুইটি খেলায় তিনজন বিজয়ীকে তৎক্ষণাৎ পুরস্কৃত করা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নাচ,গান, কবিতায় মঞ্চ মাতিয়েছিল মুক্তাঞ্চল এবং বসন্ত কুমারী গোপাল চন্দ্র সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অস্বর্যারা। এছাড়াও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেবজ্যোতি দাশ টুটন, অরিত্র সাহা, এহসানুর তাশরীফ, Fusion three সহ আরো অনেকের গানের তালেই মন্ত্রমুগ্ধ হয়েছেন দর্শক শ্রোতাগণ।
এই অনুষ্ঠানের আয়োজকদের দূরদর্শিতা দেখে সত্যিই অবাক হতে হয়। আয়োজকদের কেউই স্কুলের গন্ডি পেরোয়নি। তাদের দূরদর্শী চিন্তাভবনার পরিচয় পাওয়া যায় তাদের বিশেষ আয়োজন সাহিত্য কর্ণার, মুক্ত পাতায় মনের কথা এবং মুক্ত পাঠাগারে। সাহিত্য কর্ণারটিতে ছিলো একদিকে স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের লেখালেখি, আঁকাআঁকি এবং অন্যদিকে বাংলা সাহিত্যের চিরায়ত কবি সাহিত্যিকদের যুগান্তকারী সৃষ্টি। যারা বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেন না, তাদের জন্য এই “সাহিত্য কর্ণার” ছিল একটি সুবর্ণ সুযোগ।
ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের সুপ্ত প্রতিভাকে তুলে ধরার এ ছিল এক মহতী উদ্যোগ। অনুষ্ঠানে অনেক স্কুল পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীই এসেছিল কেবল তাদের লেখাগুলো সাহিত্য কর্ণারে প্রদর্শন করা হয়েছে কি না দেখতে।
আমরা যেকোনো অনুষ্ঠানে কেবল মঞ্চে উপবিষ্ট মানুষজনেদের কথাবার্তাই শ্রবণ করি। কিন্তু একটি অনুষ্ঠান দর্শক অথবা শ্রোতাদের ছাড়া কখনো সফল হয়না। তাদের কথা আমরা কখনো জানতে চাইনা। যেকোনো অনুষ্ঠানের সার্থকতা নির্ভর করে দর্শকশ্রোতাদের সন্তুষ্ট করার মাঝে। তাই তাদের কথা, তাদের সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি জানার জন্য এবং সেসব থেকে পরবর্তীতে অনুপ্রেরণা পাওয়ার জন্যই ছিল “মুক্ত পাতায় মনের কথা” যেখানে সকলে নিজেদের অনুভূতি অভিজ্ঞতার স্বীকারোক্তি দিয়ে গেছেন এবং এই খাতাটি হয়তো ভবিষ্যতে কখনো না কখনো মুক্তাঞ্চল কর্তৃক প্রকাশিত হবে।
আমদের বই পড়তে হলে হয় বই কিনতে হয় নয়তো কোনো পাঠাগারের সদস্য হতে হয়। কিন্তু আজকের যুগে এসেও অনেকের জন্যই এভাবে বই পড়াটা দুঃসাধ্য ব্যাপার। অনেকের পরিবারই পাঠ্য বইয়ের বাইরে অন্য বই পড়ার বিষয়টিকে সময় নষ্ট, অর্থের অপচয় বা অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করেন। তাদের জন্য বই পড়াটা নিতান্তই ধরা ছোঁয়ার বাইরে কেবল একটি স্বপ্নমাত্র। আর তাদের সেই স্বপ্নকে গতকাল তাদের কাছে পৌছে দিয়েছে এই অস্বর্যারা। নিজেদের ব্যক্তিগত সংগ্রহের বই দিয়ে তারা সাজিয়েছে মুক্ত পাঠাগার। যেখান থেকে বিনামূল্যে যে কেউ ১৫ দিনের জন্য পছন্দসই বই নিতে পারবে এবং বই পড়া শেষ হলে নিজ দায়িত্বে সে বই ফেরত দিয়ে অন্য বই নিতে পারবে। অনেকেই প্রথমবারের মতো গল্প-উপন্যাসের ঘ্রাণ নিয়েছে এই মুক্ত পাঠাগারে। সেই সাথে ছোট-বড় প্রায় সকলেই হাতে বই আর মুখে হাসি নিয়ে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেছেন।