একই নদী উজানে গড়াই এবং ভাটিতে মধুমতি

শামিম মৃধা(মাগুরা প্রতিনিধি) : গঙ্গা নদীর বাংলাদেশ অংশের প্রধান শাখা। একই নদী উজানে গড়াই এবং ভাটিতে মধুমতি নামে পরিচিত। একসময় গড়াই-মধুমতি নদী দিয়ে গঙ্গার প্রধান ধারা প্রবাহিত হতো, যদিও হুগলি-ভাগীরথী ছিল গঙ্গার আদি ধারা। কুষ্টিয়া জেলার উত্তরে হার্ডিঞ্জ সেতু-এর ১৯ কিলোমিটার ভাটিতে তালবাড়িয়া নামক স্থানে গড়াই নদী গঙ্গা থেকে উৎপন্ন হয়েছে। নদীটি কুষ্টিয়া জেলার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গণেশপুর নামক স্থানে ঝিনাইদহ জেলায় প্রবেশ করেছে। অতঃপর ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া সীমানা বরাবর প্রবাহিত হয়ে চাদর নামক গ্রাম দিয়ে রাজবাড়ী জেলায় প্রবেশ করেছে। এরপর ঝিনাইদহ-রাজবাড়ী, মাগুরা-রাজবাড়ী এবং মাগুরা-ফরিদপুর জেলার সীমানা বরাবর প্রবাহিত হয়ে মধুমতি নামে নড়াইল ও বাগেরহাট জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। মধুমতি পরবর্তী সময়ে পিরোজপুর জেলার মধ্য দিয়ে বলেশ্বর নামে প্রবাহিত হয়েছে এবং মোহনার কাছাকাছি হরিণঘাটা নাম ধারণ করে বঙ্গোপসাগর-এ পড়েছে।

গড়াই অত্যন্ত প্রাচীন একটি নদী। অতীতে এর নাম ছিল গৌরী। বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও ভূগোলবিদ টলেমি তদানীন্তন গঙ্গা প্রবাহের সাগর সঙ্গমে পাঁচটি মুখের কথা উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে ‘কম্বরী খান’ নামক মুখটিই প্রকৃতপক্ষে গড়াই বলে কেউ কেউ মনে করেন। গড়াই-মধুমতি নদীর গতিপথ দীর্ঘ এবং বিস্তৃত। অধিকাংশ গতিপথেই নদীটি এঁকে বেঁকে প্রবাহিত। উৎপত্তিস্থল থেকে কামারখালী পর্যন্ত বর্ষা মৌসুমে নৌকা ও অন্যান্য ছোট নৌযান চলাচল করতে পারে, কিন্তু শুকনো মৌসুমে এ অংশ অনাব্য হয়ে পড়ে। কামারখালী থেকে নিম্নাংশ মোটামুটি নাব্য, প্রায় সারা বছর এখানে নৌপরিবহণ সম্ভব হয়। কামারখালীতে পানির প্রবাহ সর্বোচ্চ ৭,৯৩২ ঘন মিটার, তবে উৎসমুখ শুকিয়ে যাওয়ায় কোনো কোনো সময় প্রবাহ শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। উৎসমুখ থেকে বড়দিয়া পর্যন্ত গড় প্রস্থ ৪৫০ মিটার। এর পর নদীটির বিস্তার ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং নিম্নাঞ্চলে গড়ে ৩ কিমি। নদীটির মোহনা থেকে কামারখালী পর্যন্ত অংশ জোয়ারভাটা দ্বারা প্রভাবিত। কুষ্টিয়া শহরের সন্নিকটে গড়াইয়ের মুখ শীতকালে বন্ধ: হয়ে যায়।

গড়াই নদী ভাঙন প্রবণ। এর প্রবল ভাঙনের ফলে কুষ্টিয়ার বিখ্যাত রেন-উইক কারখানা, গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প অফিস এবং কুষ্টিয়া শহরের বাণিজ্যিক এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া কুমারখালী বন্দর এবং জানিপুর বাজারও নদীভাঙন-এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছু গ্রোয়েন তৈরি করে উল্লিখিত শহর-বন্দরগুলি রক্ষার ব্যবস্থা করেছে।

চলার পথে গড়াই-মধুমতি বহু শাখা-প্রশাখার জন্ম দিয়েছে এবং অন্যান্য অনেক নদীর সংস্পর্শে এসেছে। কুমার, কালীগঙ্গা, ডাকুয়া, বুড়ি গড়াই প্রভৃতি গড়াইয়ের শাখা নদী। চন্দনা গড়াই-এর উপনদী। নবগঙ্গা, চিত্রা, কপোতাক্ষ, খুলনা-যমুনা, গলঘাসিয়া, এলেংখালী, আঠারোবাঁকী প্রভৃতি নদী কোনো না কোনো ভাবে গড়াই-মধুমতি নদীর সংস্পর্শে এসেছে।

গড়াই-মধুমতি বাংলাদেশের অন্যতম দীর্ঘ নদী। এর অববাহিকাও বিস্তীর্ণ। নদীটি কুষ্টিয়া, যশোর, ফরিদপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী প্রভৃতি জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে এইসব এলাকার সেচ ও কৃষির উন্নতি এ নদীর উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। কুমারখালি, জানিপুর, সেঁউরিয়া, গণেশপুর, কাতলাগাড়ী, খুলুমবাড়ী, লাংগলবন্দ, শচিলাপুর, নাকোল, লোহাগড়া, পাংশা, বালিয়াকান্দি, বোয়ালমারী, কাশিয়ানী, ভাটিয়াপাড়া, নাজিরপুর, পিরোজপুর, শরণখোলা, মঠবাড়িয়া, পাথরঘাটা এবং মোরেলগঞ্জ প্রভৃতি গড়াই-মধুমতি নদীর তীরবর্তী উল্লেখযোগ্য স্থান।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আজকের দিন-তারিখ
  • রবিবার (ভোর ৫:৩১)
  • ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৯শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০