তানোরে নানা আয়োজনে বিজয় দিবস পালন

 

তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরে নানা আয়োজনে মহান বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে। দুই যুগের পাকিস্তানি শাসনের অবসান ঘটিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে স্থান করে নিয়েছিল যে বাংলাদেশ, তার ৫১তম বার্ষিকী উপযাপন করেছে নানা শ্রেনী পেশার জনসাধারন। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীন দেশের বহু অর্জনের মধ্যে রয়েছে আরও সমৃদ্ধ আগামী পথে যাওয়ার প্রত্যাশা। শহীদদের স্মরণ আর বিজয়ের আনন্দ উদযাপনে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে । উপজেলা পরিষদ চত্বর পৌরসভা বিভিন্ন সড়কে আলোকসজ্জা সহ লাল-সবুজের বর্ণিল সাজে পুরো উপজেলা। কর্মসুচির মধ্যে সকালের দিকে পরিষদ চত্বরের শহীদ মিনারে উপজেলা প্রশাসন, থানা প্রশাসন, আওয়ামীলীগ, তানোর পৌরসভার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলী জানিয়ে বীর শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এক মিনিট নিরবতা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে রাত্রি ১২ টা ১ মিনিটে ৩১ বার তোপধ্বনীর মাধ্যমে বিজয় দিবসের সুচনা করা হয়। এছাড়া পরিষদ চত্বরে স্বাধীনতার মহান নায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। সূর্যের আলো বাড়ার সাথে সাথে শেখ রাসেল মিনি স্টাডিয়ামে মাঠে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও প্রশাসন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মনো মুগ্ধকর ডিসপ্লেসহ নানা ধরনের খেলা ধূলা পুরুস্কার বিতরন করা হয়। দুপুরের আগে জাতির সূর্য সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বিকেলে উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভা কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাঝে ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যার দিকে মনোমুগ্ধকর সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। সকল অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন উপজেলা প্রশাসন। সংবর্ধনায় সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পংকজ চন্দ্র দেবনাথ তার বক্তব্যে বলেন, “লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সরকার নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন । সবাই পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।

“তাই আসুন, মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও চেতনা বাস্তবায়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরো বেশি অবদান রাখি, দেশ ও জাতিকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে আরো এগিয়ে নিয়ে যাই, গড়ে তুলি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ – মহান বিজয় দিবসে এই হোক প্রত্যাশা।”

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না তার বক্তব্যে বলেন “মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে জাতিরাষ্ট্র ‘বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা হল বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠতম অর্জন। এই অর্জনকে অর্থবহ করতে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সবাইকে জানতে ও জানাতে হবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমরা পৌঁছে দিবো- বিজয় দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।”

১৯৪৭ সালের অগাস্টে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগের পর বাঙালির নতুন সংগ্রামের সূচনা হয় পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে।বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার যে স্বপ্নযাত্রা শুরু হয়েছিল, দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম ও নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে তা পূর্ণতা পায়। পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। বিজয়ের পর ৫১ বছরে অনেক চড়াই-উৎরাই পার করে ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের দিকে যাত্রা করছে বাংলাদেশ।

স্বাধীনতার পর ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আখ্যায়িত করে যারা অপমান করেছিল, সেই তাদের কণ্ঠেই এখন বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা। দারিদ্র্য আর দুর্যোগের বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের পথে। বিদেশিদের ‘ষড়যন্ত্র’ মোকাবেলা করে নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি পদ্মা সেতুর চালু করেছে বাংলাদেশ। এই বিজয় দিবসের ১২ দিন পর উদ্বোধনের হচ্ছে মেট্রোরেলের মতো বড় প্রকল্প। পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পাবে আর কিছু দিনের মধ্যে। তিনি বলেন, “দেশে আজ গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজকে পরিপূর্ণতা দানের লক্ষ্যে সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ‘রূপকল্প ২০২১’ সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় একটি উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে ঘোষণা করা হয়েছে ‘রূপকল্প ২০৪১’। সরকারের গৃহীত জনকল্যাণমুখী কর্মসূচির ফলে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন অব্যাহত রয়েছে।”করোনাভাইরাস মহামারীর ধাক্কা কাটিয়ে উঠার আগেই রাশিয়া-ইউক্রেইন সংকটের ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ও মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতির ধাক্কা বাংলাদেশ কাটিয়ে উঠতে পারবে বলেও আশা প্রকাশ করেন । তিনি বলেন,এ সংকট মোকাবিলায় সরকার সাশ্রয়ী নীতি গ্রহণ, বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা প্রদানসহ ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আমি বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা এ সংকটও কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবো ইনশাল্লাহ। স্বাধীন হওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামের কথা তুলে ধরে আরো বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশকে ‘স্বল্পোন্নত’ দেশে উন্নীত করেন, আর আমরা মাতৃভূমিকে ‘উন্নয়নশীল’ দেশের কাতারে নিয়ে গেছি। স্বাধীনতার পর বিগত ৫১ বছরে আমাদের যা কিছু অর্জন, তা জাতির পিতা এবং আওয়ামী লীগের হাত ধরেই হয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের এই উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত থাকলে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে পরিণত হবে। এছাড়াও উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামজিক সংগঠনগুলো নানা আয়োজনে বিজয় দিবস উদযাপন করেছেন।

সারোয়ার হোসেন
১৬ ডিসেম্বর /২০২২ইং

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আজকের দিন-তারিখ
  • সোমবার (সকাল ১০:৩৩)
  • ৭ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ৪ঠা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
  • ২২শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শরৎকাল)
পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১