আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা, প্রস্তুত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান

আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। এরপরই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন শুরু হবে। সম্মেলন ঘিরে সার্বিক নিরাপত্তাসহ বিশাল কর্মযজ্ঞের প্রস্তুতি একেবারেই শেষপ্রান্তে।

শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, উদ্যানের বাইরের অংশে প্রায় প্রতিটি দেওয়ালে শোভা পাচ্ছে ব্যানার ফেস্টুন। সকাল থেকেই নেতাকর্মীদের ভিড় প্রবেশ গেট ঘিরে। মূল মঞ্চের কাছে যেতেই দেখা যায় কর্মীরা বিভিন্ন নির্দেশক প্রস্তুত করছেন। মূলমঞ্চের বামে একটি কর্নার তৈরি করা হয়েছে। সেখানে একই সঙ্গে পতাকা টাঙানোর জন্য ৮০টি স্ট্যান্ড বসানোর প্রস্তুতি চলছে। কর্নারের বাউন্ডারির ব্যানারে শোভা পাচ্ছে কর্ণফুলী টানেল, পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল, চট্টগ্রাম বন্দর, ফ্লাইওভার, পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, ভাঙ্গা চৌরাস্তা, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছবি।

সাউন্ড সিস্টেমসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষাও চলছে। মাঠের বিভিন্ন জায়গায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ১২টি এলইডি স্ক্রিন রাখা হয়েছে। সেগুলোও ঠিকঠাক চলছে কিনা তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।

কাউন্সিলে আগতদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে ১০০টির বেশি ভ্রাম্যমাণ টয়লেটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সামগ্রিক প্রস্তুতি প্রায় শেষের পথে। খাবার পানি, তিনটি মেডিকেল ক্যাম্প ও জরুরি সেবার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সামগ্রিক শৃঙ্খলার দায়িত্বে কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ।

উদ্যানের লেকপাড়েও করা হয়েছে প্যান্ডেল। ওই প্যান্ডেলেও দেওয়া হয়েছে ৩টি বড় স্ক্রিন। সেখানে চেয়ারগুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছে যেন পেছনের কারও কোনো অসুবিধা না হয় স্ক্রিন দেখতে। নিরাপত্তার জন্য পুরো এলাকায় প্রায় শতাধিক সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে।

নৌকার আদলে তৈরি করা হয়েছে মূলমঞ্চ। সেই নৌকার মাঝখানে বসবেন সম্মেলনের প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। মঞ্চের পেছনের ব্যানারে শোভা পাচ্ছে পদ্মা সেতু। তারপর রয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট।

স্মৃতিসৌধের বাম পাশে শোভা পাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। তার বামে উড়ছে জাতীয় পতাকা। তার বামে আছেন বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি। এছাড়া বামে আরও আছে মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শামসুল হক এবং মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ছবি।

অন্যদিকে স্মৃতিসৌধের ডান পাশের একটি ছবিতে সাদা পায়রা উড়াচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার ডানে আছে বোন শেখ রেহানা ও বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্রী সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। তারও ডানে আছে জাতীয় ৪ নেতা- সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের ছবি।

এদিকে আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তিনি বলেন, সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগদান করবেন, সারা দেশ থেকে লক্ষাধিক নেতাকর্মী আসবেন। প্রধানমন্ত্রী সব সময় ঝুঁকির মধ্যেই থাকেন। ইতোপূর্বে অনেকবার তার প্রাণনাশের চেষ্টা হয়েছে, আল্লাহর অশেষ রহমতে তিনি বেঁচে গেছেন। এজন্য আমরা তার নিরাপত্তাটাকে সবসময়ই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে থাকি।

তিনি আরও বলেন, আগামীকালের নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে আমাদের ফোর্স ডিপ্লয়মেন্ট করেছি। আমাদের এসবি-র‍্যাবসহ সবাই মিলে এই ভেন্যুতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা রেখেছি। প্রত্যেকটা গেটে সার্চওয়ে ও সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছি। এছাড়া আমাদের ডগ স্কোয়াডের মাধ্যমে চারদিকে সুইপিং ও ম্যানুয়াল সুইপিং করা হয়েছে। এক কথায় আমরা নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা রেখেছি; যাতে আওয়ামী লীগ উৎসবমুখর পরিবেশে কাউন্সিল সম্পন্ন করতে পারে।

পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন র‍্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ হোসেনও। তিনি বলেন, এখানে বিভিন্ন পয়েন্টে র‍্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স ও পেট্রোল পার্টি থাকবে। ডগ স্কোয়াডের মাধ্যমে সুইপিং করা হবে। বোম্ব ডিসপোজাল টিম ও সাদা পোশাকে সদস্যরা মোতায়েন থাকবে এবং আমাদের কমান্ডো টিম প্রস্তুত থাকবে। অর্থাৎ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ও সম্মেলনের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য র‌্যাব সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে।

নিরাপত্তাজনিত কোনো আশঙ্কা রয়েছে কিনা- জানতে চাইলে খুরশীদ হোসেন বলেন, ন্যাশনাল যেকোনো ইভেন্ট বা এ ধরনের সম্মেলনে নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তাভাবনা করে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা চাই যেকোনো একটা অনুষ্ঠান যাতে মসৃণভাবে হতে পারে। যারা আসবে নিরাপত্তার সঙ্গে আসবে, আবার নিরাপত্তার সঙ্গেই চলে যাবে। কোনো অপশক্তি এসে যেন ঝামেলা করতে না পারে, এটাকে মাথায় রেখেই আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিকল্পনা করা হয়েছে।

যুগান্তর

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আজকের দিন-তারিখ
  • রবিবার (বিকাল ৫:৪২)
  • ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ২৬শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১