রাতে বউয়ের চেয়ে বেশী আপন মোবাইল ফোন ও চার্জার

 

সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে দিন দিন প্রযুক্তির উৎকর্ষের মাধ্যমে যে জিনিসটির সাথে আমরা সবচেয়ে বেশি সম্পর্কিত হয়ে পড়ছি, তা হলো মোবাইল ফোন ও চার্জার। আমাদের দৈনন্দিন কাজের শুরুটাই হয় মোবাইলের এলার্মের মাধ্যমে এবং দিন শেষে ঘুমোতে যাওয়ার সময়ও মোবাইল ফোন ও চার্জারই হয় আমাদের নিত্যসঙ্গী।

এর মাঝে দিনের একটা উল্লেখযোগ্য অংশই আমরা মোবাইল নিয়ে কাটাই। সেটা হতে পারে ফেইসবুকিং, ভিডিও স্ট্রিমিং, মিউজিক শোনা, ই-পেপার পড়া, যোগাযোগ,গেম খেলা সহ নানামুখী কাজের প্রয়োজনেই।

সবাই আমরা স্মাট ফোন ব্যবহার করি আর এই স্মাট ফোন ও চার্জ ছাড়া মোবাইল নিয়ে হয়তো পৃথিবী নামক গ্রহ থেকে আমরা বিছিন্ন হয়ে পড়ি। সারাদিন ফোন ব্যবহার করি আর রাতে হলে চার্জার দিয়ে ফোন চার্জ দিয়ে পরের দিনের জন্য পৃথিবীর সাথে সংযুক্ত হওয়ার ব্যবস্থা গ্রহন করি। অবাক করা বিষয় রাতে বিবাহিতদের বউ পাশে না থাকলেও সমস্যা নাই যদি পাশে না থাকে চার্জার। যা হউক বিবাহিত বা অবিবাহিত সবারই রাতের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস হল মোবাইল চার্জার।

রমিজ সাহেবের চার্জার বিহীন এক বিভীষিকাময় রাতের গল্প

রমিজ সাহেব একদিন অফিসের ট্রুরে সিলেট রওনা হলেন। যাত্রা পথে ঢাকা সিলেট পথে প্রচুর জ্যাম ছিল তাই অলস সময়ে গাড়িতে বসে মোবাইলে বিভিন্ন অপশনে গিয়ে নিজের অলস সময়টা পার করলেন।

হঠাত দেখেন আর মাত্র ২০% চার্জ আছে মাথায় তো আকাশ ভেঙ্গে পড়ার অবস্থা। মোবাইল চালানো বন্ধ করে রাখলেন আর অপেক্ষা করতে থাকলেন কখন হোটেলে যাবেন আর মোবাইলে চার্জ দিবেন। দীর্ঘ জার্নির পর অবশেষে হোটেলে এসে দেখেন ব্যাগে চার্জার নেই। এবার তো রমিজ সাহেব হতভম্ব হয়ে বউকে ফোন দেওয়ার জন্য ফোন হাতে নিয়ে দেখে মোবাইল টি বন্ধ হয়ে গেছে। কারন ডাটা ওপেন ছিল চার্জ শেষ। সকালে মিটিং এ দিকে বউকে জানানো হয়নি সে সিলেট পৌছেছে। এ তো মহা বিপদ বউ এমনিতেই সন্দেহ প্রবন, আসার সময় বলে দিয়েছে হোটেলে ফিরে ভিডিও কল দিও। যা হউক শনির ফেরে পড়েছেন রমিজ সাহেব। হোটেল বয়কে ডেকে বললো একটা চার্জারের ব্যবস্থা করে দিতে, হোটেল বয় ব্যবস্থা করে দিল বাট তাতে ঘটল আর বড় বিপদ চার্জার সেইম না হওয়াতে মোবাইলের চার্জার পোর্টটিও নষ্ট হয়ে যায়। রাতেই তড়িঘড়ি করে হোটেল থেকে বের হয়ে চলে যায় মোবাইল সার্ভিসিং এর দোকানে প্রায় সকল দোকান বন্ধের পথে। এর মধ্যে এক দোকানে গিয়ে মোবাইল টি ঠিক করতে দেয় দীর্ঘ প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয় দোকানি কারন অনেক দামী ফোন যন্ত্রাংশ পাওয়া যায়নি। হতাশ হয়ে অনেক দোকেনে যায় বাট ব্যর্থ হয়ে হোটেলে ফিরে আসে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে রমিজ সাহেবর বউ কল দিচ্ছে রমিজ সাহেবর বউ ফোন বন্ধ পাচ্ছে। বউয়ের সন্দেহ প্রবন মন সন্দেহের দানা বুনছে আর ফুলছে।
রমিজ সাহেব হোটেল বয় নং থেকে ফোন দিয়ে জানায় বিষয়টি বাট বউ তো বিশ্বাস করে না। বেচারা রমিজ সাহেব চিন্তায় র্নিঘুম রাত কাটিয়ে সকালে মিটিং এর সময় অতিক্রান্ত করে দুপুর পর্যন্ত ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিয়ে উঠেন। এ কি দুপুর ১২ টা বাজে মিটিং শেষ। অফিসের বস থেকে শুরু করে সবাই ফোন করে বাট রমিজ সাহেব তো ঘুমের রাজ্যে মোবাইল বিহীন পৃথিবী নামক গ্রহের বাহিরে।

রমিজ সাহেব কিংকর্তব্যবিমুড় হয়ে ভাবছে বউ ও চাকুরি দুইটাই আজ হারালাম শুধু মাত্র চার্জারের জন্য।
সব কিছু হারিয়ে ঢাকায় ফিরেন রমিজ মিয়া। কিন্তু রমিজ মিয়ার হঠাত কি যেন হল একটু পর পর মোবাইল পকেট থেকে বের করে মোবাইলের দিকে তাকায় আবার রেখে দেয়ে। বিষয়টি রমিজ মিয়ার ভাই লক্ষ্য করে এবং রমিজ মিয়াকে জিজ্ঞেস করে কেন বার বার ফোন বের করে আর কি চেক করে, তখন রমিজ মিয়া বলেন তার কেন জানি বার বার মনে হয় মোবাইলে রিটোন বাজে বা ভাইব্রেশন হয়। আসলে তা হয় না, কিন্তু রমিজ মিয়ার মনে হয় একটু পর পর…

একটু পর পর পকেট সহ বিভিন্ন স্থানে হাতিয়ে দেখে তার মোবাইলটি আছে কি না। তার মনের মধ্যে হঠাত ভয় চলে আসে মোবাইলটি আছে না কি পকেট থেকে পড়ে গেছে না কি হারিয়ে গেছে।

পারিবারিক ভাবে ডাক্তারের শ্মরনাপন্ন হন রমিজ মিয়া, ডাক্তার সব কিছু শুনেন কেইচ স্টাডি করে জানান-
মনের উদ্বিগ্নতা ও বিষণ্নতা থেকে মাত্রাতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারকারীরা আকস্মিক রিংটোন বা ভাইব্রেশন বেজে উঠার শব্দ শুনতে পান। অর্থাৎ তাদের কাছে মনে হয় যে, কেউ বোধহয় কল করলো বা কোন নোটিফিকেশন আসলো। অথচ বাস্তবে এমন কিছু হয়নি।

অনেক ব্যবহারকারী অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের কারণে এমন সমস্যার কথা বুঝতেও পারেন না। মোবাইল থেকে দূরে থাকা এবং প্রয়োজন অতিরিক্ত ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন ডাক্তার সাহেব।
অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ফলে মনের মধ্যে সব সময় মোবাইল আছে কিনা, নাকি হারিয়ে গেলো এমন একটা ভয় তৈরি হয়। এই রোগের নাম নোমোফোবিয়া তথা নো মোবাইল ফোন ফোবিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

এই দিকে রমিজ মিয়ার বউ চলে গেছে বাপের বাড়ি তার কারন শুধু মোবাইল ফোন চার্জার বা সন্দেহ প্রবন মন না আরও একটি কারন হল বিয়ের ৮ বছর পার হয়ে গেলো বাট রমিজ মিয়ার সন্তান হয় না। বহু ডাক্তার দেখিয়েছেন ডাক্তার সাহেব জানান রমিজ মিয়ার সমস্যা আছে…

তাহলে সমস্যা টা কি মোবাইল ফোন ?
ডাক্তার জানায় রমিজ মিয়াকে অতিরিক্ত ফোন ব্যবহারের পর প্যান্টের পকেটে রেখে দেয়ার সময় মোবাইল যথেষ্ট উত্তপ্ত থাকার ফলে এটি অন্ডকোষের চারপাশের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ হয়। যার ফলে শুক্রাণু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার ফলে বাচ্চা প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। তাই বাচ্চা হচ্ছে না।
এজন্য প্যান্টের পকেটে বা শরীরের স্পর্শকাতর কোন অঙ্গের বেশি কাছে মোবাইল ফোন না রাখার পরামর্শ দেন ডাক্তার সাহেব।

রমিজ মিয়ার বউ চলে গেছে বাপের বাড়ি তার কারন আরেকটি পাওয়া গেলে যে রমিজ মিয়া কানে কম শুনেন..
বউ তাই মাঝে মাঝে রমিজ মিয়াকে কানা বলে ডাকত, ধেন্দা বলতো না কারনে তাতে রমিজ মিয়া মাইন্ড করত।
রমিজ মিয়ার ডাক্তার জানায় মোবাইলে দীর্ঘক্ষণ কথা বলা, উচ্চ আওয়াজে গান শোনা এবং কানে হেডফোন গুঁজে রাখার মাধ্যমে শ্রবণশক্তি হ্রাস হয়ে গেছে।
ডাক্তার সাহেব রমিজ মিয়াকে সাবধানে করে জানায় – বাঁচতে হলে কানে হেড ফোন ব্যবহার বন্ধ করতে হবে তা না হলে সংবাদ পত্রের শিরোনাম হতে হবে।

 

লেখকঃ ডাঃ আশিকুর রহমান খান,

সংবাদকর্মী, সদস্য – চাঁদপুর সাহিত্য ফোরাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আজকের দিন-তারিখ
  • মঙ্গলবার (বিকাল ৩:২৯)
  • ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৪ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০