নারী উদ্যোক্তা পুষ্পিতা পুষ্প এর বিজয়ী হওয়ার গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

পৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’। নারী ও পুরুষকে এভাবেই দেখেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বর্তমানে নারীরা কোনো কাজেই পিছিয়ে নেই। তারা তাদের নিজ যোগ্যতায় এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ঘরে বাইরে সব পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করছে। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা। অনলাইন ব্যবসায়ের প্রবর্তনের ফলে নারীরা আরও বেশি পরিমাণে সফল উদ্যোক্তায় পরিণত হচ্ছে। তেমনি একজন পুষ্পিতা পুষ্প।” Four Fairy’s Beauty zone নামক একটি ব্রান্ড প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসা করছেন নারী উদ্যোক্তা পুষ্পিতা পুষ্প।

পুষ্পিতা পুষ্প সম্প্রতি মুখোমুখি হয়েছেন গ্রীন বাংলা নিউজের প্রতিনিধির।শুনিয়েছেন তার সফলতার গল্প। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন গ্রীন বাংলা নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক মূসা তপাদার।

প্রতিবেদক : আপনার বিজয়ী নারী উদ্যোক্তা হওয়ার এর শুরুর গল্পটা জানতে চাই-

উত্তরঃ–আসসালামু অলাইকুম, আমি পুষ্পিতা পুষ্প। চাঁদপুর এর মেয়ে কাজ করছি বিউটিশিয়ান, মেকআপ এবং হেয়ার স্পেশালিস্ট হিসেবে। আরো কাজ করছি অর্গানিক বিউটি প্রোডাক্ট নিয়ে। ছোট থেকেই খুব শখ ছিল নিজে কিছু করার বিশেষ করে মেকাপের প্রতি ছিল দারুণ ঝোক কিন্তু বিয়ে সংসার আর বাচ্চা নিয়ে কিছুই করা হলো না, বিয়ের পরও অনেক অনেক ইচ্ছে ছিলো নিজে কিছু করবো, নিজের একটা আলাদা পরিচয় গড়বো কিন্তু তা আর হয়ে উঠলো না।

হঠাৎ করে আম্মু চলে গেল না ফেরার দেশে। আম্মু চলে গিয়ে তিন বোন একটা ভাইয়ের সব দায়িত্ব আমার মাথার উপর দিয়ে গেল। যদিও আব্বু আছে আমার হাজব্যান্ড আছে তবুও খুব করে চাইলাম ভাই বোন গুলোর জন্য কিছু করা দরকার ওরা যেমন আম্মুর কাছে চাইতে পারতো তেমন যেনো আমার কাছেও চাইতে পারে নির্দ্বিধায়।
যেহেতু মেকাপ নিয়ে টুকিটাকি অভিজ্ঞতা ছিল তাই পেশা হিসেবে বিউটিফিকেশন কে পছন্দ করলাম।
তখন বিভিন্ন ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে যোগাযোগ করলাম। আর তার পরে আমাদের চাঁদপুর এর বিউটি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আফরোজা রুমি আপুর কাছে আমার বিউটিফিকেশন এর প্রথম হাতে খরি। তার পরে ইন্টারন্যাশনালি কোর্স করি এবং সার্টিফাইড মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করি। এবং ছোট পরিসরে একটা বিউটি পার্লার ওপেন করি যার নাম Four Fairy’s beauty zone.
আর অর্গানিক বিউটি প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করা শুরু করি আমার ক্লায়েন্টদের জন্য।


প্রতিবেদকঃ আপনার পন্য সম্পর্কে বলুন-

উত্তর- আমি স্কিনকেয়ার, মেকাপ, হেয়ার কেয়ার হেয়ার ট্রিটমেন্ট এবং সৌন্দর্য চর্চায় যা যা দরকার মোটামুটি সবগুলো সার্ভিস দিয়ে থাকি।

প্রতিবেদকঃ আপনার ব্যবসায়িক অবস্থান কীভাবে বেড়েছে, ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি-

শুরুটা করি প্রথম হোম সার্ভিস থেকে মানে আমার বাসায় সার্ভিস দিতাম তার পরে প্রতিষ্ঠান দেয়ার চিন্তা করলাম এবং প্রতিষ্ঠান দিলাম। ধীরে ধীরে পরিচিতি বাড়াতে শুরু করলাম এবং অনেক ভালো ফিডব্যাক পেলাম।
যেহেতু আমাদের নারী উদ্যোক্তা সংগঠন বিজয়ী থেকে প্রতি সপ্তাহে একটা করে ট্রেনিং থাকে, তো সেখান থেকেও ভালো কনজিউমার পাচ্ছি।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা হলো আমার ক্লাইন্ট দের আরো এডভান্স সার্ভিস দেয়া। আমার দ্বারা যাতে অন্যান্য নারীরাও কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারে সেই চেস্টা করা।

প্রতিবেদকঃ নারী হিসেবে ব্যবসা করতে এসে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার সন্মুখীন হয়েছেন কি?

উত্তরঃ আমাদের সমাজে সবসময়ই সব পুরুষের চোখে নারীরা ছোট হয়ে থাকে। নারীরা কিছু করবে নারীর টাকা ইনকাম করবে এটা সব পুরুষ মেনে নিতে পারেনা।।

বিজনেস টাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথ টা সহজ ছিল না অনেক কষ্ট এবং নানাবিধ ঝামেলা র সম্মুখীন ও হতে হয়েছে। সমাজ বড় অনড় সব কিছু এতো সহজে মেনে নিতে চায় না।বিশেষ করে বিউটিফিকেশনটাকে আমাদের সমাজ খুবই ঘৃণিতভাবে দেখে। লেখা পড়া করে কেনো এই কাজ করা এটা ভাল না। অনেক চড়াই উতরাই পার করে আজকে আমি সফল।

প্রতিবেদকঃ উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি কার সহযোগিতা ও উৎসাহ পেয়েছেন এবং কিভাবে পেয়েছেন?

উত্তরঃ আমার উদ্যোক্তা হওয়ার পিছনে আমার বোন দের সাপোর্ট ছিল সবচেয়ে বেশি । আর আমার স্বামীরও পেয়েছি। সাধারণত যখন একটা মানুষ নতুন উদ্যোগ শুরু করে তখন চারপাশের মানুষগুলো নানা ধরনের সমস্যা তৈরি কিন্তু আমার বেলায় ব্যাপারটা ছিল পুরোপুরি ভিন্ন বরং আমার চারপাশের মানুষগুলো আমাকে প্রচন্ড পরিমাণ মানসিক শক্তি আর সাপোর্ট দিয়েছিল । তারপর বিজয়ীতে আসার পর তানিয়া ইশতিয়াক খান বিজয়ীর ফাউন্ডার আপুর সাপোর্ট পেয়েছি বড় বোনের মতো।সুধু সাপোর্ট বলে কম হয়ে যাবে আমার প্রতিষ্ঠানকে দাঁড় করানোর জন্য দিনরাত কস্ট করেছে,সাথে ছিলেন আপুর হাজব্যান্ড আশিক খান ভাইয়া। আপু এতো সুন্দর করে আমাদের মটিভেট করেন তা বলার মত না।
চাঁদপুরের নারীদের আপন আলোয় আলোকিত করার লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে চাঁদপুরের প্রথম নারী উদ্যোক্তা সংস্থা বিজয়ী।

প্রতিবেদক- নতুন নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কি?

উত্তর- নতুন নারী উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে আমি এতোটুকুই বলবো যে প্রথমে হলো মনোবল ঠিক করবে যে আমি কি করতে চাই। কোন কাজ টা ভালো পারি এবং খুভ ভালোবেসে করতে পারবো।
আর যদি মনে করে যে আমি তো কিছু পারি না আমার কোন থিম দরকার যেটা নিয়ে কাজ করবো, তাহলে নির্দ্বিধায় চলে আসতে পারবে আমাদের বিজয়ীতে কারণ প্রতি সপ্তাহেই প্রায় বিজয়ীতে একটা ফ্রি ট্রেনিং প্রোগ্রাম থাকে কয়েকটা ট্রেনিং অ্যাটেন্ড করে যে কাজটা তোমার ভালো লাগে বা তুমি যেই কাজটাতে পারদর্শী সেটা নিয়ে কাজ শুরু করতে পারো।আল্লহামদুলিল্লাহ আমি বিজয়ীর এর একজন গর্বিত সদস্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আজকের দিন-তারিখ
  • মঙ্গলবার (দুপুর ১২:০৯)
  • ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ৯ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি
  • ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ (বসন্তকাল)
পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১