চাঁদপুর জেলায়” শিল্প ও সাহিত্যকলায় এবং সংগীতে নারী আদিকাল থেকে ১৯৮০ শতক পর্যন্ত”

মাহাবুবুর রহমান সেলিম

নারীর অগ্রযাত্রা সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে, বিশেষ করে শিল্প,-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আদিকাল থেকে চাঁদপুরের বিভিন্ন কর্মকান্ডে অবদান রেখে আসছেন। বিভিন্নভাবে সমাজের সর্বস্তরে নারীর সাফল্য ও অগ্রযাত্রা সামনে রেখে সকল প্রকার গোড়ামী এবং সামন্ততান্ত্রিক ধ্যান ধারণা উপড়ে ফেলে প্রগতি ও জাগরণের জয় গান গেয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। নারী উন্নয়নের মাধ্যমে ভৌগলিক অবস্থানে সামাজিক অগ্রগতি ও নতুন বিন্যাস ঘটে। ফলে দূর দূরান্ত থেকে আগত সকলের সাথে তাৎক্ষণিক সম্পর্ক এবং যোগাযোগ এমনকি পারিবারিক বন্ধন গড়ে ওঠে। তাই সামাজিক সম্পর্ক, বিনিয়োগের ব্যাপ্তি, গভীরতা, গতিপ্রভাব এবং আর্থিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পায়। সমাজে নারী উন্নয়নের চলমান অগ্রযাত্রায় নারীদের অবস্থান ও মানসিকতার ব্যাপক পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও গণসচেতনতা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। যা শিল্প সাহিত্যে ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতির সূচকে দৃষ্টান্তমূলক মাইলফলক। স্বেচ্ছাব্রতী নারী জাগ্রত চেতনায় ও নতুন উদ্দীপনায় সফলতার দ্বারপ্রান্তে সর্বদাই অবস্থান করছে। আত্মপ্রত্যয়ী আলোকিত চাঁদপুরের উজ্জ্বল নারীকূল বিকশিত পূর্ণতায় এবং জীবন মনের কর্মকৌশলে বিশাল জীবন সাগরে রূপালী ইলিশের মতো উৎফুল্ল এবং আত্ম প্রকাশিত বিচরণ। অনেক ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান পদচারনা এবং একে অন্যের পরিপূরক। আমাদের নারী সমাজ বিজ্ঞানের বিশাল অগ্রযাত্রায় মধ্যযুগীয় ধ্যান-ধারণা এবং সকল সংকীর্ণতা থেকে বেরিয়ে এসে নব সভ্যতার দ্বারপ্রান্তে উন্নীত হয়েছে।
জোছনা ভরা নীল আকাশ, ডাকাতিয়া নদীর তটে জীবন রং বদলায় জীবন ক্যানভাসে, জীবন উৎসুক মমতায় ভরা জীবন সফলতায় বিমূর চাঁদপুরের মেয়ে মমতা ঘোষ। চাঁদপুরের বিখ্যাত গবেষক ড. মনমোহন ঘোষ এর জীবনসঙ্গিনী এবং কবি সত্যেন্দ্রনাথ তার মাতৃকুল। তার লিখায় ফুটে উঠেছে নতুন আশার আলোয় শুভদৃষ্টি। ডাকাতিয়ার কাশ বনে মৌন মুখর প্রকৃতি, সকল অপপ্রয়াস ছিন্ন করে লেখক এগিয়ে যায় তার আসল গন্তব্য। তার রচিত গ্রন্থ “শুভ দৃষ্টি”, “মৌন মুখর” ও “গীতাংশুক” ইত্যাদি।

অনুভূতির প্রকাশ ও বঞ্চনা যাতে থাকে ধ্বনি মাধুর্য এবং প্রকৃতির নানা ছোঁয়া। সেইসাথে ব্যক্তিগত সামাজিক জীবনের কর্মময় ব্যবস্থা, শব্দ শৈলী এবং পরিবর্তনগুলোর নানা পর্যবেক্ষণ হৃদয় জুড়ে, আর স্বপ্নের সুখের গলিতে। শ্রীমতি প্রতিভা রায় চৌধুরী তৎকালীন অনুশীলন সমিতির সংগঠক এবং বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সদস্য। এবং ওই সংগঠনের মহিলা সাব কমিটির সহকারী সম্পাদিকা। ১৯৪৬ সালে তিনি বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী দলের প্রাদেশিক কমিটির নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। তিনি সম্পাদনা করতেন মাসিক” অঙ্গনা” নামক একটি পত্রিকা। তার একটি বড় পরিচয় তিনি ছিলেন তৎকালীন চাঁদপুরের বিপ্লবী নেতা হরি কুমার রায় চৌধুরীর স্ত্রী।
অর্থনীতি সামাজিক স্বচ্ছলতা নারীর একটা বড় স্বপ্ন। নারী মুক্তি আন্দোলন যার সাথে আবশ্যকীয় ভাবে জড়িয়ে আছে সকল সামাজিক মুক্তি আন্দোলনের পটভূমি, ইতিহাস এবং সজীব ধারণা সমূহ ও নীতি কৌশল। নারীর অগ্রযাত্রা নারী সমাজের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা বিশেষ করে গতিশীল কর্মকাণ্ডে উত্তরণের লক্ষ্যে, তারই আলোকে বাংলা ভাষায় প্রথম সচিত্র্য নারীর সাপ্তাহিক পত্রিকা “বেগম” আত্মপ্রকাশ লাভ করে ১৯৪৭ সালের ২০ শে জুলাই, তৎকালীন রাজধানী কলকাতা থেকে। “সওগাত” পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ নাসির উদ্দিন এর সুযোগ্যা কন্যা নুরজাহানের সম্পাদনায়। যদিও পত্রিকাটি প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদিকা ছিলেন বেগম সুফিয়া কামাল। নারীর জাগরণ, নির্যাতিত নারীর চিত্র তুলে ধরা সহ সকল কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে, তখন থেকেই বেগম পত্রিকাটি তার নিজস্ব অবস্থানে অনড় থেকে, আত্মপ্রত্যয়ী ও স্বেচ্ছাব্রতী মানসিকতা নিয়ে এক ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে। ১৯৫০ সালে পত্রিকাটির কার্যালয় স্থানান্তরিত হয় ঢাকায়। পত্রিকাটির সূচনা লগ্ন থেকে দীর্ঘ ছয় দশক পর্যন্ত অর্থাৎ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নুরজাহান বেগম সম্পাদনার কাজ চালিয়েছিলেন অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে। নানা কুসংস্কার আর গোঁড়ামির যাঁতাকলে পৃষ্ঠ নারীর সাফল্য অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখেন। এইসব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে নারী আসবে মুক্ত বাতাসে, খোলা আকাশে ও উন্নয়নের পথে। এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের পুরুষ যখন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী এবং অন্যদিকে নারী গৃহমূখী এ অবস্থায় “বেগম” পত্রিকা তার ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে এবং সামন্ততান্ত্রিক ধ্যান ধারণা থেকে মুক্ত হয়ে সকল সংকীর্ণতা পেরিয়ে আলোর মুখ দেখায়। ১৯৫৪ সালে ঢাকায় আসেন মার্কিন মহিলা সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও সমাজকর্মী মিসেস আইদা আনসেত। তিনি বেগম পত্রিকা অফিস পরিদর্শন করেন এবং এর কর্মকান্ডে অভিভূত হন। ১৯৫৪ সালের ১৫ই ডিসেম্বর পত্রিকাটির নামের আদলে প্রতিষ্ঠিত হয় পূর্ব বাংলার প্রথম মহিলা ক্লাব “বেগম ক্লাব” এই ক্লাবের সভানেত্রী ছিলেন বেগম শামসুন্নাহার আর সম্পাদিকা ছিলেন চাঁদপুর কন্যা নারী সাংবাদিকতার অগ্রদূত, সাহিত্যিক নুরজাহান বেগম। অবশ্য ১৯৭০ সালে ক্লাবটি বন্ধ হয়ে যায়। পিতা নাসিরুদ্দিনের সওগাত পত্রিকা অফিসে নিয়মিত সাহিত্য সভা অনুষ্ঠিত হতো। এই সভায় যোগ দিতেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, আবুল মনসুর আহমেদ, ইব্রাহিম খাঁ, খাঁন মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন, মোঃ ওয়াজেদ আলী, কাজী মোতাহার হোসেন ও হাবিবুল্লাহ বাহার সহ অনেক সাহিত্য বিশারদ। এই সভায় নিয়মিত শ্রোতা ছিলেন নুরজাহান বেগম। এখান থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে নুরজাহান বেগম পত্রিকা সম্পাদনার কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করে সৃষ্টিশীল কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলেন। প্রতিনিয়ত পত্রিকাটি ডাকযোগে দেশের সর্বপ্রান্তে পৌঁছে দেয়া হতো। ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে পত্রিকাটি প্রকাশ সংখ্যা ছিল ২৫ হাজারের মতো। ১৯৯৬ সালে নুরজাহান বেগম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসাবে “নন্দিনী” সাহিত্য ও পাঠ্চক্রের সম্মাননা লাভ করেন। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক “বেগম রোকেয়া পদক “, ১৯৯৯ সালে গেন্ডারিয়া মহিলা সমিতি থেকে “শুভেচ্ছা ক্রেস্ট” ও ২০০২ সালে “অনন্যা” সাহিত্য পুরস্কার এবং ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক নারী সংগঠন “ইনার হুইল ডিস্ট্রিক্ট” ৩২৮ সম্মাননা পান। নুরজাহান বেগম বিয়ে করেন রোকনুজ্জামান খানকে (দাদাভাই)।।নারী জাগরণ, নতুন লেখক সৃষ্টি ও সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে নারীকে উৎসাহিত করা ছিল তার মূল লক্ষ্য। একটা সময় সমাজ সচেতন নারী হবেন গোঁড়ামি মুক্ত এবং প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন উদার ও মুক্ত মনের অধিকারিণী। সেদিন হয়তো বেশি দূরে নয়। ২০১৬ সালের ২৩ শে মে এই মহীয়সী নারী মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমানে “বেগম” মাসিক নিয়মে প্রকাশিত হয় পুরনো ঢাকার পাটুয়াটুলি থেকে। এবং বেগম পত্রিকাটি সম্পাদনা করছেন নুরজাহান বেগমের জ্যেষ্ঠ কন্যা ফ্লোরা রহমান।
সংগীত মূলতঃ গীত, বাদ্য ও নৃত্যের সমাবেশ। সুর, তাল ও লয়ের সাথে অর্থসমৃদ্ধ কথা। সুরের সাথে কথার ভাব ও অনুভব প্রকাশ করাই এবং তাল লয়ের সমন্বয়ে উৎপত্তি গীত বা সংগীত। বুদ্ধি ও আবেগের ভাষা সর্বতো ভাবে প্রকাশিত প্রকাশ করাই সঙ্গীতের মূল বিষয়বস্ত। বুদ্ধির ভাষার উপযোগী ও সুরের বিচিত্র তরঙ্গভঙ্গি হৃদয়ের অন্তস্থলে অনুভাব উৎপন্ন হয়। সেই অনুভাব অন্যের হৃদয়ে জাগ্রত হয়। এবং সুরের লীলা উজ্জীবিত হয়ে জীবন সঞ্চার করে।
চাঁদপুরের নয়নতারা, রাধারাণী সুশীলা, ও রাজলক্ষ্মী বৈষ্ণবী ছিলেন এই জেলার সেরা কীর্তন গায়িকা।
আকাশবাণীর কন্ঠ শিল্পী গীতা দত্ত ছিলেন চাঁদপুরের কৃতি সন্তান।
চাঁদপুরের অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ দত্তের কন্যা, অধ্যাপিকা পূরবী দত্ত একজন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী।
বাউল সম্রাট পূর্ণ দাসের স্ত্রী মঞ্জু দাস একজন বিখ্যাত বাউল গায়িকা।
বিশিষ্ট উকিল সতীন্দ্রমোহন মজুমদারের সুযোগ্য কন্যা ইলা দত্ত বেতারের একজন বিশিষ্ট শিল্পী।
চাঁদপুরের আশা লতা রায় বেতারে পল্লীগীতি ও ভাটিয়ালি গানে যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছেন।
শিল্প-সাহিত্যে ভরপুর আমাদের এই চাঁদপুর। তারই অবদান কালী মোহন ঘোষের সুযোগ্য কন্যা শ্রীমতি সুজাতা ঘোষ রবীন্দ্র নিত্য নাট্যের একজন বিশিষ্ট শিল্পী।
বিশিষ্ট চিত্রাভিনেত্রী ও টেলিভিশনের নিত্য শিল্পী অঞ্জনা রহমান। তিনিও চাঁদপুরের নাম অনেক উজ্জ্বল করেছেন।
১৯২৮ সালে পুরান বাজারস্থ ভগবান চন্দ্র বসুর কন্যা নিভাননী উনি শিক্ষার্থী হিসেবে গিয়েছিলেন শান্তিনিকেতনে। পরবর্তীতে তার কর্মকান্ডে মুগ্ধ বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তাকে আদর করে ডাকতেন চিত্রা নিভা নামে। এই নামেই সর্বাধিক পরিচিত এবং তিনি ছিলেন নন্দলাল বসুর কৃতি ছাত্রী। এই চিত্র শিল্পী পোট্রেট অঙ্কনে অতুলনীয় পারদর্শী। তার অঙ্কিত রবীন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ নন্দলাল, ক্ষিতিমোহন, বিধুশেখর প্রভৃতি গৌরব কীর্তি।
চাঁদপুরের রেনুকা সেনের গাওয়া দুটি গান “যদি গোকুল চন্দ্র ব্রজে না এলো” এবং অতুল প্রাসাদের “পাগলা মনটারে তুই বাঁধ”। বিপুল সারা জাগিয়েছিল তৎকালীন সময়ে।
মতলবের বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী আতিকুল ইসলামের সহধর্মিনী হামিদা আতিক এবং আতিকুল ইসলামের বড় ভাই উপমহাদেশ খ্যাত নজরুল গবেষক, অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের স্ত্রী জাহানার ইসলাম ও ঢাকা বেতার কেন্দ্রের একজন নিয়মিত রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী।
মহাদেশব্যাপী বিস্তৃত এবং সহস্রাব্দ ব্যাপী সৃজনশীল চিত্রকলার অব্যাহত চলমান গতিসম্পন্ন সংস্কৃতিকেই পরিব্যপ্ত করে। যাতে প্রাধান্য পায় বিশুদ্ধ, বিমূর্ত এবং ধারণাগত পদ্ধতি। প্রকৃতির উপর প্রতিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি অথবা শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ হতে পারে। আদর্শিক, স্বতন্ত্র, শৈল্পীক অভিব্যক্তির বিশেষ উল্লেখযোগ্য ঐতিহ্য স্বরূপ।
বোয়ালিয়া গ্রামের সুকুমারী দেবী ছিলেন একজন স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে নান্দনিক আলপনা শিল্পী।
শ্রীনিকেতনের শ্রী কালিমোহন ঘোষ তাকে শান্তিনিকেতনে নিয়ে যান। আলপনা শিল্প ও চিত্রাঙ্কনে তার অসাধারণ নৈপুণ্য ছিল । এখানে এসে তার নান্দনিক গুণাবলীর জীবনাদর্শে মধূসুখ হৃদয়ে আর্থ সামাজিক অবস্থার প্রকৃত পর্যবেক্ষণ ফুটে উঠে তার অনন্য সাধনায়। তাঁরই সুনিপুন কর্মতৎপরতা ও সাহায্যে নন্দলাল বসু শান্তিনিকেতনে গড়ে তোলেন আলপনা বিভাগ। এতে শান্তিনিকেতনে চাঁদপুরের মান ও ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে
শিল্পকলা মূলতঃ বিভিন্ন সমাজ ও সংস্কৃতিতে বিদ্যমান নানাবিধ মনের কর্মকান্ডকে বুঝায়। শিল্পকলায় সৃষ্ট বস্তুকে শিল্প-কর্ম বলে। অন্যদিকে যে ব্যক্তি শিল্পচর্চা করে শিল্প কর্ম সৃষ্ট করেন তাকে শিল্পী বলে। চাঁদপুরের আরেকজন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী অবলা বসু তিনি শান্তিনিকেতনের চিত্র শিক্ষিকা ছিলেন। তার অসাধারণ শিল্প কলা মূলক কর্মকাণ্ডের পরিধি নানা উন্নয়নে, নতুন জীবন চলার পথে, প্রকৃতির সাথে নতুন জীবন রং মিলিয়ে, নতুন উপাদানে, নতুন শিল্প কলার জন্ম দেয়।
চাঁদপুরের যারা চলচ্চিত্র জগতের সাথে জড়িত, তারা হলেন যহরত আরা, মালতি দে, অঞ্জনা রহমান, শুভ্রা দে, কাবেরী দে প্রমূখ।
চাঁদপুরের কিশোরী কন্যা ফাতেমা, বয়স ভিত্তিক জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় ১৯৮০ সালে পাঁচটি স্বর্ণপদক পেয়েছেন।
চাঁদপুরের আশিকাটিতে ১৮৯৩ সালে জন্ম হয় শ্রীমতি সুশীলা মিত্রের। পিতা ছিলেন গুরু চরণ ঘোষ। বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হন নোয়াখালীর কুমুদিনীকান্ত মিত্রের সাথে। অত্যাচার, অবিচার, অন্যায় ও পরাধীনতার গ্লানিতে জর্জরিত সমাজ এবং জাতিকে উত্তরণের লক্ষ্যে নিজেকে আত্মনিয়োগ করতে, অসহযোগ আন্দোলনের যোগ দেন। ফলে ১৯৩২ সালে তাকে কারাবরণ করতে হয়। এই সমাজ সচেতন নারী পরবর্তীতে নোয়াখালীতে প্রতিষ্ঠা করেন “সরোজ নলিনী মঙ্গল সমিতি”। এতে ছিলো শিশুমঙ্গল বিভাগ ও মাতৃমঙ্গল বিভাগ। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে, শক্তি- সামর্থ, শ্রম ও যোগ্যতার বদলে অভাবগ্রস্তদের জন্য নিজস্ব অর্থ, বিদ্যাবুদ্ধি এবং জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে, মানবিক কর্মকাণ্ডে আত্মনিয়োগ করেন। এছাড়া ১৯৪৬ সালের দাঙ্গায় তিনি দুর্গত মানুষের সেবায় সর্বোচ্চ ভূমিকা রেখেছিলেন ১৯৪৮ সালের কলকাতার এন্টালি এলাকায় আত্মিক উৎকর্ষ সাধনে এবং মানসিক প্রশান্তির আলোকে গড়ে তুলেন “মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি”।
১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিখ্যাত সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান “চাঁদপুর মহিলা সমিতি” এর সভানেত্রী ছিলেন শ্রীমতি পদ্মজিনী সিংহ রায়। তার সাথে আরও যারা যুক্ত ছিলেন এই মহতী ও সৃজাশীল কর্মকাণ্ডে তারা হলেন শ্রীমতি মনোরমা ব্রহ্মচারী, লাবণ্য সুর, লাবণ্য প্রভা সেন, রেনুকা রায় প্রমুখ। নানা রকম কর্মকান্ড বিশেষ করে চরকা, খাদি সহ নানা রকম হাতের কাজ শেখানো, প্রসূতি পরিচর্যা প্রভৃতি সমিতির কর্মসূচির আওতাভুক্ত ছিলো।
১৯২১ সালে এই সমিতির মহান উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় “চাঁদপুর মাতৃপীঠ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়”। পঞ্চাশের দুর্ভিক্ষের সময়কালীনে এ সমিতি বিশেষ সেবামূলক কর্মে নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখে। এতে বিশেষভাবে নিয়োজিত ছিলেন শ্রীমতি বিভাবতী ঘোষ ও শ্রীমতি সরজুবালা মহালানাবীস। পরবর্তী সময়ে ঐ সমিতির উত্তরসূরী “চাঁদপুর মহিলা সংসদ” এবং “চাঁদপুর আত্ম নিবেদিতা মহিলা সংস্থা”। এদের মূল কর্মকান্ড কুটির শিল্প বয়স্ক শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়নমূলক।
“চাঁদপুর মহিলা সংসদ” দীর্ঘদিন পরিচালনা করেছেন মাতৃপীঠ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শ্রীমতি পূর্ণিমা রক্ষিত এবং “আত্মনিবেদিতা মহিলার সংস্থা” পরিচালনা করেছেন চাঁদপুর মহিলা পরিষদের সম্পাদিকা ও মাতৃপীঠ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় শিক্ষিকা বেগম ফাজিলাতুন্নেসা। তিনি “আবু আপা” হিসাবে সর্বাধিক পরিচিতা। পিতা ছিলেন জনাব, শেখ সিদ্দিকুর রহমান চাঁদপুর গনি মডেল হাই স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক এবং ভাই ছিলেন শেখ মতিউর রহমান একজন প্রগতিশীল ব্যক্তিত্বসম্পন্ন বীর মুক্তিযোদ্ধা বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনে চাঁদপুরের সবচাইতে সক্রিয় এবং ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত চাঁদপুর কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। এবং ছোট ভাই ডাক্তার মোস্তাফিজুর রহমান আহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের জেলা সভাপতি।
বর্তমানে “মহিলা পরিষদ” চাঁদপুর জেলা তাদের অতীত ঐতিহ্য রক্ষা করে নানা সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত আছেন।
জনাব ফরিদুল্লাহ ডিএন হাই স্কুলের গেম টিচার এবং জেলা স্কাউট কর্মকাণ্ডে সর্বদাই নিবেদিত প্রাণ এবং সদা হাস্যজ্জল ব্যক্তি হিসেবে চাঁদপুরবাসীর হৃদয স্থান করে নিয়েছিলেন। ৭০ বছর বয়সেও তিনি ছিলেন যুবকের মত কর্ম উদ্দীপনাময় ব্যক্তি। তাঁর স্ত্রী বেগম ফয়জুন্নেসা “চাঁদপুর মহিলা পরিষদের” জন্ম লগ্ন থেকেই সভাপতি। একমাত্র মেয়ে চম্পা তৎকালীন সময়ে সেরা নৃত্য শিল্পী হিসাবে চাঁদপুরের বিশেষভাবে পরিচিতি লাভ করেন। এছাড়াও ছিলেন টেলিভিশনের নৃত্যশিল্পী। এবং এক ছেলের বউ চাঁদপুর কলেজের বাংলা বিভাগের স্বনামধন্য অধ্যাপক প্রখ্যাত জননেতা ও লেখক এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জনাব সৈয়দ আব্দুস সাত্তার সাহেবের সুযোগ্য কন্যা দীনা সাঈদ। তিনি একজন সংগীত শিল্পী এবং সংঘটক হিসাবে চাঁদপুরে অনেক সুনাম কুরিয়েছেন।
যখন ফরাক্কার করাল গ্রাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন নদী গুলো তার নাব্যতা হারাতে বসেছে। তারই আলোকে ১৯৭৬ সালে চাঁদপুর টাউন হলে প্রদর্শিত হয়েছিল “পদ্মার সংলাপ” নামে একটি নৃত্যনাট্য যা জনমনে দারুন সারা জাগিয়েছিল । এতে পদ্মার ভূমিকায় ইরা দে, হল ভর্তি উপচে পড়া দর্শকদের হৃদয়ে বিশেষ স্থান করে নিয়েছিলেন। মাহবুবুর রহমান সেলিমের সম্পাদনা ও পরিচালনায় এবং সদ্য প্রয়াত শাহজাহান বাবুলের বিশেষ সহযোগিতায় পরিবেশিত হয়েছিল এই ব্যতিক্রমধর্মী এবং বাস্তবমুখী এই নৃত্যনাট্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আজকের দিন-তারিখ
  • রবিবার (রাত ৩:২৫)
  • ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৯শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০