চুমাচুমি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়ে যত কথন

ময়না টিভি ডেস্কঃ বাংলা চুমা অর্থ (বিশেষ্যে) স্নেহ বা অনুরাগের বশে পরস্পরের ওষ্ঠাধর স্পর্শন বা চুম্বন। চুমাচুমি অর্থ একে অন্যকে চুম্বন, সৌহার্দ বিনিময়। প্রাচীন পার্বত্য ভাষায় চুমাচুমি অর্থ কেবল পরস্পরকে চুম্বন করে স্বাগত জানানো নয়, তাদের ভাষায় চুমাচুমি অর্থ ছিল আশীর্বাদ, সৌহার্দ, পারস্পরিক সহযোগিতা, সহযোগিতার মাধ্যমে উদ্দেশ্য সাধন।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চুমাচুমির মাধ্যমে পরস্পরকে স্বাগত জানানোর রীতি প্রচলিত। জুরাছড়ি রাঙ্গামাটি জেলার জুরাছড়ি উপজেলার একটি ইউনিয়ন। এটি জুরাছড়ি, কুসুমছড়ি এবং লুলাংছড়ি নামের ৩টি মৌজা নিয়ে গঠিত। যতটুকু জানা যায়, যক্ষা মহাজনের প্রপিতামহ এলাকাবাসীর সহযোগিতার মাধ্যমে এলাকায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এলাকাবাসী তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে পরস্পর সহযোগিতা বা পরস্পর ঐচ্ছিক দান ও স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যম স্কুল প্রতিষ্ঠার সব আয়োজন সম্পন্ন করতে সক্ষম হন।
এলাকাবাসীর সহযোগিতার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল বলে বিদ্যালয়টির নাম রাখা হয় চুমাচুমি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সবার উপস্থিতিতে অনাবিল পরিবেশে এটি উদ্ভোধন করা হয়। অতঃপর পরস্পর সৌহার্দ ও সম্প্রীতি নিদর্শক চুমাচুমির মাধ্যমে পরস্পরের আশীর্বাদ কামনা করে বিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করা হয়। তাই তার নাম চুমাচুমি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
আবার অনেকের মতে, সুমাসুমি শব্দটির অর্থ উপত্যাকা এবং চুমাচুমি হচ্ছে সুমাসুমি শব্দের বিকৃতরূপ। বিদ্যালয়টির নামে উপত্যাকা অর্থদ্যোতক সুমাসুমি শব্দটি বিকৃত হয়ে চুমাচুমি নামে ঠাঁই পেয়েছে। তবে অনেক তা ঠিক মনে করেন না। কারণ, লিখিত ভাষায় বিকৃতি সাধারণত বিরল। সুমাসুমি হলেও তাও পাহাড়ে পাহাড়ে চুমাচুমি বা সৌহার্দ মিলন। যেটাই হোক, চুমাচুমি নিয়ে হাসাহাসির করার কিছু নেই।
অনেকে চুমাচুমি নাম নিয়ে হাসাহাসি করে। যে ভাষার কিছু লোক সোনা (স্বর্ণ) বাল (বালক), বোদা (বোদ্ধা)-এর মতো সুন্দর-শালীন ও অর্থবহ শব্দকে গালি বানিয়ে তামাশা করতে পারে, হাত ধোন কথাটির অর্থ করে হাত শিশ্ন তাদের কাছে চুমাচুমির মতো উত্তম শব্দ নিয়ে হাসিহাসি করা খুবই ইজ্জতের বিষয়। জ্ঞান মানুষের ভেতর থেকে ভাষা হয়ে মুখে আসে।
মাতৃভাষার প্রতি এমন উপহাসকারীদের উদ্দেশ্য করে সপ্তদশ শতকের কবি আবদুল হাকিম বলেছেন:
যে জন বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী
সেজন কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।
এখনও পাহাড়ি লোকজনে সংস্কৃতি আমাদের সংস্কৃতির চেয়ে অনেক বিষয়ে মার্জিত ও ঈর্ষণীয়। তারা অন্তত মাতৃভাষা নিয়ে উপহাস করে না, মাতৃভাষাকে অবজ্ঞা করে না। আমার মা, মাতৃভাষা প্রতিবন্ধী হলেও আমার কাছে বিশ্বনন্দি।

সংগৃহিতঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আজকের দিন-তারিখ
  • শুক্রবার (সন্ধ্যা ৬:১৫)
  • ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০