বঙ্গবন্ধুর চোখে দেখা নয়া চীন।

“আমার দেখা নয়া চীন”-এর পাতা থেকে।

দুর্নীতি সমাজের ক্যানসার রোগের মতো।একবার সমাজে এই রোগ ঢুকলে সহজে এর থেকে মুক্তি পাওয়া কষ্টকর।আমাদের দেশের বিচারে একটা লোক আর একজনকে হত্যা করলে বিচারে তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়।ডাকাতি করলে বা চুরি করলে তাকে কয়েক বৎসর ধরে সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়।একটা লোক হঠাৎ রাগের বশবর্তী হয়ে আর একটা লোককে হত্যা করলো,যাকে হত্যা করলো তার সংসারটা খতম হয়ে যায়।কারন সেই লোকটার ওপর সমস্ত সংসার নির্ভর করে।

কিন্তু চোরাকারবারীকে ফাঁসি দেওয়া হয় না, ফাঁসি যদি কাহাকে দিতে হয়,তবে চোরাকারবারী ও দুর্নীতিপরায়ণ লোকদেরকেই
দেওয়া উচিত।একজন চাউলের চোরাকারবারী লক্ষ লক্ষ মন চাউল জমা রেখে লক্ষ লক্ষ লোককে না খাইয়ে মারে।
আর একজনকে হত্যা করলে যদি ফাঁসি হয়,
তবে হাজার হাজার লোকের যারা মৃত্যুর কারণ তাদের কি বিচার হওয়া উচিত?

ধরুন,একজন কাপড়ের চোরাকারবারির জন্য অনেক মহিলা ইজ্জত রক্ষা করার সামান্য কাপড় জোগাড় করতে না পেরে আত্মহত্যা করে।তবে তার বিচারে কি হবে?
সে তে লক্ষ লক্ষ নারীর ইজ্জত ও জীবন নষ্ট করেছে।
আমি জানি আমাদের দেশের এক স্বনামধন্য
মুসলিমলীগওয়ালা একমাত্র কাপড়ের চোরকারবার করে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করেছে।তবে ইলেকশনে দাঁড়াইয়া লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেও ভোট পান নাই।তার বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য সরকারি কর্মচারীরা চেষ্টা করেছিল,তখন তাদের বদলি
করে দিয়ে সেই চোরাকারবারিকে রক্ষা করা হয়েছিল।এমনকি শোনা যায় যে,ফাইলগুলি
পূর্ব বাংলা থেকে উড়ে করাচী চলে গিয়েছিল
এবং কোন এক মন্ত্রীর বাক্সের মধ্যে ফাইলগুলি আটকাইয়া রাখা হয়েছিল।
এতবড় যেখানে দুর্নীতি সেখানে সরকারি কর্মচারীরা কোন সাহসে বড় বড় চোরাকারবারিদের গায়ে হাত দেবে?

একদিন এক বাড়িতে আমি গিয়েছিলাম,নাম
বলবো না বা ঠিকানা দেব না।সে ভদ্রলোকের একটা ছিল আমার সাথে পড়তো।ভদ্রলোককে জিজ্ঞাসা করলাম আপনার ছেলে কোথায়? তিনি বললেন-ও চাকরী করে।
জিজ্ঞাসা করলাম- কি চাকরী করে?
বললেন-চাকরী বেশি ভাল না,তবে একশত টাকা বেতন পায়,আর কিছু উপরিও আছে।
উপরি মানে ঘুষও পায়।আমি আশ্চর্য হয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।তারপর নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বললাম-তবেতো বেশ ভালই আছে।

আমার দেশের এক নেতা আমাকে গর্ব করে বলেছিলেন যে- তার মেয়ের জামাই এক পয়সা বাড়ির থেকে না নিয়ে ব্যবসা করে লক্ষ
লক্ষ টাকা উপার্জন করেছে।
আমি একটু মুখপোড়া মানুষ,মনে যা আসে এবং তা সত্য হলে মুখের ওপর বলে দেই।
কাউকেও ভয় করি না।আর চক্ষুলজ্জা একটু কম।
বললাম-বিনা টাকায় ব্যবসা হয় এটাতো জানতাম না,তবে হয় আমাদের দেশের পীর সাহেবদের।ফুঁ দিয়া ধর্মের কথা বলে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বড় বড় ঘর করে ও জমি কেনে,কোন কাজকর্ম করে না।এটা একটা ব্যবসা।আর একটা ব্যবসা রাতে ঘরে সিং কাটা অথবা ডাকাতি করা।যাতে কোন অর্থের প্রয়োজন হয় না।
আর একটা ব্যবসা আছে যেটা বিনা টাকায় হয় সেটা বেশ্যাবৃত্তি করা।এছাড়া বিনা টাকায় কোন ব্যবসা হয় বলে আমার জানা নেই।
এখন আমাদের দেশে নুতন এক ব্যবসা হয়েছে পারমিটের ব্যবসা।মন্ত্রীদের দালালী করে যদি একটা পারমিট পাওয়া যায় তা বিক্রি করলে কিছু টাকা আসে।যদিও সে পারমিট বিক্রিতে গরিবের অনেক ক্ষতি হয়।তবু টাকা পাওয়া যায়।

জাতির জনক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
“আমার দেখা নয়া চীন”

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আজকের দিন-তারিখ
  • বৃহস্পতিবার (দুপুর ২:২৭)
  • ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ (বসন্তকাল)
পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১