বয়স কত?

বয়স কত?
এই প্রশ্নটা প্রায়ই আমাকে আটকায় চরমভাবে কি করি বলুন তো; কি করে বলি আমার বয়স কতো? আমার জন্ম সাল ৫-২-১৯৯৭ ভোটার আইডি কার্ডে তাই জানি।

১০০ বছরের আমার কিছু সন্তান আছে; এবার বলুন আমার বয়স কত, কম করে হলেও ১১৫-১২০। আমার বয়সী আমার হাজার হাজার সন্তান আছে; তাহলে আমার বয়স ৪০ হবে প্রায়। ছোট ছোট নাতি-নাতনির সাথে যখন গল্প-গুজবে মেতে উঠি, তখন আমার বয়স ৮-৯। কোন বয়স্ক মানুষের জীবনের গল্প শুনতে কিংবা লিখতে গিয়ে আমার বয়স হয়ে যায় ৭০-৮০।

ফেইসবুক মেসেঞ্জারে হাজার হাজার মানুষ প্রশ্ন তোলে আমার বয়স কত? স্বাভাবিক ভাবেই এই প্রশ্নের সম্মুখীন হই বারংবার। কি করে বলি বলুন তো, আসলেই আমার বয়স কতো? আমার কোন বয়স শুনবেন? আমার তো বয়সের শেষ নেই; একেকবার একেক বয়স ধরা দেয়।

মনের আবার বয়স হয় নাকি? শুনেছি আত্মা একই দিনে সৃষ্টি। আত্মার খোরাক মেটাতেই তো বয়স পরিবর্তীত হয়ে যায় বারংবার। তাই আমি জানিনা আমার বয়স কত। বয়সের সীমা আমার জানা নেই, তবে এটুকু বলতে পারি এবং বলি যেখানে যেমন আমার বয়স সেখানে তেমন।

সমাজে বয়স কমানোর জন্য প্রতিযোগিতা করা হয়, তবে আমি ছিলাম তার বিপরীত। ছোটবেলায় বয়সের জের ধরে প্রচুর ঝগড়া হতো, কার বয়স কত হলো এর মিমাংসা সহজ ছিলো না মোটেও। একদিন গাঁয়ের ছেলে মেয়েরা এমনই এক ঝগড়া বাঁধে— কার বয়স কত তাই নিয়ে তুমুল হট্টগোল; দেখলাম সবাই চাচ্ছে নিজের বয়স কমাতে; একমাত্র আমিই স্রোতের বিপরীত, একমাত্র আমিই বলেছি ঠিক আছে আমার বয়স অনেক বেশি, আমি সবার বড়ো, এখন থেকে আমাকে বড় বলেই মেনে নিস। আমার মন্তব্য দেখে মা কাছে ডেকে নিয়ে বলে– তুই সঠিক, ছোট হতে শিখিস নি, বড় হয়েছিস সবার তরে। মায়ের এমন কথায় সেদিন অনেক অনুপ্রেরণা পাই।

বয়স কতো? যদি বলি আমার বয়স পানির মত, পানি যখন যে পাত্রে রাখা হয় সে পাত্রের রূপ ধারণ করে, ঠিক তদ্রূপ আমিও। আবার ধরুন আমি যখন কলম হাতে নেই লিখি কোন গল্প, কবিতা, উপন্যাস; যাকে নিয়ে লিখি তার সাথে আমার বয়সটা একদম মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়; না হলে লিখব কি করে বলুন?

বয়স তো হয় দেহের, আত্মার নয়। দেহের বয়স নিয়ে কেন যে এত টানাটানি, এত এত আলোচনা, ৪০-৫০ বছরের একজন পুরুষ ২৫-২৬ বছরের এক রমণীর প্রেমে পড়েছে, পড়তেই পারে তা নিয়ে ট্রল করার কি আছে? ৪০ বছরের এক নারী ২৫ বছরের এক যুবককে ভালোবেসেছে, বাসতেই পারে, তাতেইবা দোষের কি বলুন? কেন যে বয়সের এত বিচার হয়? প্রেম কেন বয়স দিয়ে মাপা হয়? সম্পর্ক হয় কেন বয়স দিয়ে? কেন ভালো-মন্দ বিচার হয় একটু বয়স দিয়ে? বয়স একটু বেড়েছে তাই বলে কি রঙিন শাড়ি পরা যাবে না? আর পরলে তা নিয়ে হাস্যকর পরিস্থিতি কেন? একটু বয়স বেড়েছে, তাই বলে তাদের এড়িয়ে চলি আমরা। আমার এক দাদী ছিল যখন সে চলতে পারতো, বলতে পারতো, দেখতে পারত– সব নাতি নাতকুর তাকে ঘিরে সময় কাটাতো। ছেলে, ছেলের বউরা তাকে কি আদর সোহাগ করত। যখন সে বৃদ্ধা ঘরে বসে থাকা ছাড়া কোন উপায় নেই, তখন সে সবার থেকে আলাদা, তার সামনে কোন আলোচনা, হাসাহাসি, আড্ডা দেয়া একদম বন্ধ। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া তার কাছে কেউ যায় না। অনেকে তার দৃষ্টির বাহিরে থাকে কে জানে কখন কোনটা চেয়ে বসে, বা বলে ওঠে তার কোন কাজের কথা, নয় শোনাবে তার ইতিহাস। বয়স্করা প্রচন্ড একাকিত্ব বোধ করে– তারা চায় কেউ না কেউ তার পাশে থাকুক, তার কথাগুলো শুনুক। অথচ আমরা করি তার বিপরীত। বয়স্করা শিশু থেকেও শিশু।

বয়স কত এমন প্রশ্ন যখন কেউ আমাকে করে আমার খুব হাসি পায়। কি হবে বয়সে দিয়ে, বয়সের ভারে নতজানু– এতো প্রাকৃতিক নিয়ম মাত্র। তবে মনের প্রফুল্লতা রাখতেই পারি। বলুন দেখি আমার বয়স জেনে কী হবে? কিছু সামাজিক কাগজপত্র কার্যক্রম আছে না হলে বয়স কখনো লিখতাম-ই না। বয়স কত এ প্রশ্নটা আমাকে অন্ধকার জগতে নেয়, আমাকে আটকায় খুব। কি করি বলুন তো বয়স নিয়ে? সংক্ষেপে তাই বলে দেই আমার জন্মসাল ৫-২-১৯৯৭।

লেখকঃ মতিয়ারা মুক্তা

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আজকের দিন-তারিখ
  • শুক্রবার (দুপুর ১:৫১)
  • ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০