সেই টি-টোয়েন্টিতেই চেনা জুনায়েদ

এ কোন জুনায়েদ সিদ্দিক! তিন বছরে এতটা বদলে গেছেন? ক্যামেরার সামনে বরাবরই লাজুক জুনায়েদ কাল ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে এত সপ্রতিভ কোন জাদুতে! কী দারুণ বলে গেলেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সঙ্গে তাঁর রোমাঞ্চকর সম্পর্কের কথা। জাতীয় দল থেকে দূরে থাকার হতাশার বর্ণনায় কী সাবলীল, সময়ের সঙ্গে বদলে যাওয়া ক্রিকেট-দর্শনেও কতটা পরিষ্কার!

জাতীয় দলে তামিম ইকবালের নিয়মিত ওপেনিং সঙ্গী ছিলেন, ছিলেন জেমি সিডন্সের প্রিয় ছাত্রদের একজন। কিন্তু ২০১২ সালের নভেম্বরের পর থেকেই বাংলাদেশের ক্রিকেট থেকে হারিয়ে যেতে থাকে জুনায়েদ সিদ্দিকের নাম। ফিটনেস, পারফরম্যান্স সবকিছুর অভাব মিলিয়ে নামটা এখন এতটাই বিস্মৃত যে জাতীয় দলের আশপাশেও নেই বাঁহাতি এই ওপেনার। ডাক পান না ‘এ’ দলে, ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্সে হঠাৎ হঠাৎ আলো ছড়ালেও মনে দাগ কাটে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার স্বপ্নটা তাই জুনায়েদ নিজের চোখেও অতটা রঙিন নয়।

ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে সিলেট সুপারস্টারসের ওপেনার দারুণ এক ফিফটি করে কাল আবারও ক্যামেরা ও মাইক্রোফোনের সামনে। কত দিন পর, সেটা জুনায়েদও ঠিক বলতে পারলেন না। তবে অনুভূতি প্রকাশে আড়ষ্টতা নেই, ‘যেকোনো পর্যায়ের ক্রিকেটেই একটা ভালো ইনিংস ক্যারিয়ারের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যারা দলের বাইরে আছি, তাদের জন্য প্রতিটি ম্যাচই চ্যালেঞ্জিং। চোট ছিল, ফিটনেসে সমস্যা ছিল। চেষ্টা করছি সেগুলো কাটিয়ে ক্রিকেটটা উপভোগ করতে।’
জুনায়েদের ক্রিকেট-দর্শনে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন বোধ হয় এটাই। খারাপ সময়ে আগে ‘রান করতেই হবে’ জাতীয় একটা চাপ নিয়ে নিতেন। এখন সেটা নেই। প্রতিটি বল, প্রতিটি ইনিংস উপভোগের চেষ্টা করেন। তবে উপভোগের তালিকায় সবার ওপরে রাখেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে। এই খেলাটা সামনে এলেই রক্তে তোলপাড় শুরু হয়। মনে হয়, ‘এটাই তো আমার ক্রিকেট!’

আসলে জুনায়েদের উঠে আসার গল্পটাই মূলত টি-টোয়েন্টি নির্মিত। ২০০৬-০৭ মৌসুমে কাই-অ্যালটেক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট লিগে ১১ ছক্কা আর চার বাউন্ডারিতে করা তাঁর ৬৪ বলে ১৩৪ রানের ইনিংসটা এখনো চোখে লেগে আছে সেই ম্যাচের দর্শকদের। ১৯ বছর বয়সী তরুণের সেঞ্চুরিতে মোহামেডানের ২২৬ রান সেদিন মোহাম্মদ আশরাফুলের আরেকটি সেঞ্চুরিতেও টপকাতে পারেনি সোনারগাঁ ক্রিকেটার্স।

সেই পাদপ্রদীপের আলোয় এলেন জুনায়েদ। তবে ওই টুর্নামেন্টের ম্যাচগুলো অফিশিয়াল টি-টোয়েন্টি ছিল না বলে সেঞ্চুরিটিও নেই রেকর্ডের খাতায়। এটা তাঁর একটা দুঃখও, ‘ওই রানটা এখনো কাউন্ট হয়নি। হলে হয়তো টি-টোয়েন্টিতে আমারই প্রথম সেঞ্চুরি থাকত (হাসি)। ওই ইনিংস থেকেই তো আমাকে সবাই চেনে!’ ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চিনেছিল যেমন কেপটাউন। পাকিস্তানের বিপক্ষে অভিষেক টি-টোয়েন্টিতেই ৭১ রানের ইনিংস জুনায়েদকে এনে দিয়েছিল ম্যাচসেরার স্বীকৃতি।
কালকের ফিফটি কি জুনায়েদের সেই দিন ফিরিয়ে আনবে? উত্তর অজানা। তবে এই আক্ষেপটা বের করে দেওয়ার একটা সুযোগ বোধ হয় করে দিল তাঁকে, ‘আসলে ভেতরে এত কষ্ট, এত দুঃখ জমেছে যে, যখন বলি সবই বলে ফেলি…।’

অপেক্ষার দিনগুলো যদি কিছু রানও জমিয়ে রাখত জুনায়েদের ব্যাটের জন্য!

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আজকের দিন-তারিখ
  • শুক্রবার (রাত ৮:৪৬)
  • ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০