হাবিবুর রহমান, চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্রের নদের অব্যাহত ভাঙনের মুখে নয়ারহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ খাউরিয়া স্কুল এন্ড কলেজটি। ইতিমধ্যে মুল ভবনটি নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। ভাঙ্গন রোধে জিও ব্যাগ ফেলানো হলে ও থামছেনা ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গন। প্রতিষ্ঠানটি রক্ষা করা না গেলে ওই ইউনিয়নের প্রায় ৭শতাধিক শিক্ষার্থীর ভবিষৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। নষ্ট হয়ে যাবে ৭শতাধিক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন এবং তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ, হারিয়ে যাবে রঙিন জীবন। যে কোনো মূল্যে ভাঙ্গন ঠেকানো জরুরী দরকার। তা না হলে প্রতিষ্ঠানসহ ওই এলাকার কয়েকশ পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়বেন বলে ও জানান এলাকাবাসী। প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিদ্যালয়টির জন্য ওই এলাকায় জায়গা কিনে একটি টিনসেট ঘর করা হয়েছিলো। কিন্তু আকস্মিক ঝড়ে সেটিনও দুমড়ে মুচরে যায়। তবে নদী ভাঙ্গন রোধে নানামুখী পদক্ষেপ নিলেও ভাঙ্গনের ঠিক সামনেই ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলোন করছেন বালু দস্যুরা। যার ফলে তীব্র ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে ওই এলাকার প্রতিষ্ঠানসহ কয়েকশ বসতবাড়ি।
গত বন্যায় ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গনে দক্ষিণ খাউরিয়া স্কুল এন্ড কলেজটির মুল ভবন নদীগর্ভে চলে গেছে। সম্প্রতি এবার ও পানি বৃদ্ধির ফলে টিনসেটের অন্য আরেকটি ভবন ও নদীতে ভেঙ্গে যায়। এখন ভাঙ্গনের দ্বার প্রান্তে এসে দাঁড়িয়ে আছে প্রতিষ্ঠানের অপর আরেকটি ভবন। ভাঙ্গন ঠেকানো না গেলে যেমকোনো সময় অবশিষ্ট সেই ভবনটি ও নদীতে বিলিন হতে পারে। দক্ষিণ খাউরিয়া স্কুল এন্ড কলেজটিতে বর্তমানে ৭ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। শ্রেণি কক্ষের অভাবে ঠিকমতো হচ্ছে না পাঠদান কার্যক্রম। এতে ব্যহত হচ্ছে ওই এলাকার লেখা-পড়ার মান। বেড়ে চলছে বাল্যবিয়ের সংখ্যা। শিক্ষার্থী আকিবুল, রাসেলসহ অনেকে জানায়, গত বছর থেকে ভাঙ্গছে স্কুল এন্ড কলেজটি। প্রতিবার বন্যার আগে এবং পরে ভাঙ্গন দেখা দেয়। যার ফলে দুইটি ভবন নদীতে চলে গেছে। এই জন্যে আমাদের ক্লাস করতে সমস্যা হয়। স্কুল সহ আশে-পাশের বাড়িগুলোকে রক্ষা করা দরকার। শাহ্আলম নামে এক অভিভাবক বলেন, নদীতে ভবন ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে আপাতত এখানে ক্লাস ঠিকভাবে হচ্ছেনা। যার ফলে দেখা যায় ছেলে মেয়েরা স্কুল যেতে চায় না। এখন ভাঙ্গন একটু কমেছে। তবে হয়তো সামনের বন্যায় এই ভবনটি রক্ষা করা যাবে না। দক্ষিণ খাউরিয়া স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক জহুরুল ইসলাম বলেন, এখানে ক্লাস নেওয়া সমস্যা হচ্ছে। আর যেকোনো সময় এই ভবনটি ও নদীতে চলে যাবে। প্রতিষ্ঠানটির জন্য জায়গা কিনে ঘর তৈরি হচ্ছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে হয়তো সেখানে ক্লাস নেওয়া যাবে।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন,বর্তমান যে ভবনটি আছে সেটি নদীর উপরে আছে। তবে জিও ব্যাগ দেওয়ার কারণে কিছুটা ভাঙ্গন কমেছে। প্রতিষ্ঠানটি স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। নয়ারহাট ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন,বর্তমানে ভাঙ্গন কমেছে। তবে এরপর ভাঙন শুরু হলে ভবনটি রক্ষা করা যাবেনা। সাথে ওই এলাকার বাড়ি-ঘর ও রক্ষা হবে না। তবে বিদ্যালয়ের ভবনটি যদি নিলামে না দেওয়া হয় তাহলে প্রতিষ্ঠানে ভালো কমিটি করে দিতে হবে যাতে মালামাল নয়ছয় না করতে পারে। শক্তিশালী কমিটির মাধমে বিদ্যালয়টি অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবু তাহের বলেন, আপাদত অবশিষ্ট ভবনটির জানালা খুলে নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। নিলামের ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠান রক্ষা করার চেষ্টা চলছে। ভাঙ্গন ঠেকাতে ইতিমধ্যে জিও ব্যাগ ফেলানো হয়েছে। বালু উত্তোলন বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপরে ও যদি নির্দেশ না মেনে বালু উত্তোলন করে তাহলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুএকদিনের মধ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।