মোঃ মুছা তপদারঃ
ইলিশের বাড়ি খ্যাত ব্র্যন্ডিং জেলা চাঁদপুর। চাঁদপুরে একমাত্র পর্যটক স্থান বঙ্গবন্ধু পর্যটন কেন্দ্র (বড়স্টেশন মোলহেড)। শহরের বড়স্টেশন মোলহেড-এ অবস্থিত ‘চাঁদপুর পযর্টন কেন্দ্রের’ পাশেই ত্রিনদীর (মেঘনা, পদ্মাও ডাকাতিয়া) মিলনস্থল, যা অপরূপ সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে সবার কাছে। ত্রিনদীর এই মোহনায় স্থলের ঠিক প্রায় দেড় কিলোমিটার পশ্চিমে জেগে উঠেছে একটি আধা কিলোমিটার এলাকা নিয়ে বালুচর, গত ৫-৬ বছর যাবৎ এই পর্যটকদের কাছে মিনি কক্সবাজার নামে খ্যাতি অজর্ন করেছে।
বর্তমানে ভ্রমনপিপাসুদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ও বিনোদনের জায়গা হয়ে উঠেছে ইলিশের রাজ্য চাঁদপুর জেলার পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থলে জেগে ওঠা বিশাল বালুচর যা পর্যটকদের কাছে মিনি কক্সবাজার। তবে স্থানীয়রা চরটিকে মোহনার চর বা চাঁদপুরের সৈকত হিসেবেও চিনে থাকে।
প্রতিদিন শহর ও দূর দূরান্ত থেকে এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে এবং প্রচন্ড গরমে গায়ে একটু মুক্ত বাতাস লাগানোর জন্য শত শত লোকজন এখানে আসেন। পযর্টন কেন্দ্রে আসলে মন চাইবে এই চরে যেতে। এই চর যেনো সবাইকে ডাকে। এতে নদী ভ্রমণের পাশাপাশি মিনি কক্সবাজারও দেখা হয়। সতেজ হয় বিধ্বস্ত মন-প্রাণ।
মিনি কক্সবাজার যাওয়ার একমাত্র যাতায়াত ব্যবস্থা হল স্টিল বোর্ড। বিশাল মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে ওই চরে যেতে নৌকায় ২০ মিনিট সময় লাগে। মনের বিনোদনের তৃপ্তি মিটানোর জন্য এটি সকল পর্যটকদের উপযুক্ত স্থান। বিকালে সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য অবলোকন করে পর্যটকরা। নদী পাড়ি দিতে জনপ্রতি আসা যাওয়া বাবদ গুনতে হয় ১০০ টাকা। আর এক ঘন্টার জন্য গুনতে হয় ৫০০-৭০০ টাকা। যাত্রীদের জন্য এখানে ৬০-৭০ টি নৌকা সবসময় প্রস্তুত থাকে। ইঞ্জিন চালিত এক নৌকায় ২০ জন হলেই নৌকা ছেড়ে যায়। বড় স্টেশন মোলহেড থেকে দেড় কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত এ সুপ্রশস্ত বালুচর- যাকে সবাই বলে মিনি কক্সবাজার। কক্সবাজারের ছোঁয়াটা এখানে আসলে যেনো খানিকটা হলেও উপলব্ধি করা যায়।
এই মিনি কক্সবাজার যা ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে পদ্মার পাড় জুড়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু করে। যার পশ্চিমে পদ্মা ও পূর্বে মেঘনা নদী প্রবাহিত।
যারা প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমনবিলাসি তাদের জন্য চাঁদপুরের মিনি কক্সবাজার হয়ে উঠবে এক আদর্শ ভ্রমন। এখানকার প্রতিটি দেখা দৃশ্য আপনাকে করবে মুগ্ধ। এখানে বেসরকারি কয়েকজন তরুণদের প্রচেষ্টায় স্বপ্ন ট্যুরিজম এর উদ্যোগে কক্সবাজারের সি বীচের ন্যায় পর্যটকদের জন্য আছে বালু চরের উপর সারিবাঁধা ছোট ছোট বেঞ্চের ব্যবস্থা। প্রতিটি বেঞ্চের মাথার উপর দেওয়া আছে রঙ্গিন ছাতা। যেখানে হেলান দিয়ে শুয়ে দেখা যাবে নদীর পানি আর সেই সাথে ছোট ছোট ঢেউয়ের স্রোত। পানিতে রয়েছে কিছু শৈবাল ও আগাছা। চাইলে নদীর নৌকা বা ট্রলার ঘণ্টায় ভাড়া নিয়ে ঘুরে দেখতে পারেন পুরো পদ্মা জুড়ে। আরও দেখতে পাবেন নদীর বুক চিঁরে যাওয়া নানান গতির লঞ্চ, মালবোঝাই সাগরের জাহাজের ছুটে চলা এবং জেলেদের নৌকা বোঝাই করে ইলিশ ধরার দৃশ্য।
এছাড়া পর্যটকদের জন্য এখানে আছে একটি বাথরুম, খাবারের জন্য ছোট কয়েকটি খাবার দোকান ও নামাজের জন্য আছে একটি মসজিদের ব্যবস্থা।
প্রতিদিন এই মিনি কক্সবাজারে দূর দূরান্ত থেকে হাজারো পর্যটক এখানে এসে ভিড় জমায় পৃথিবীর বুকে সূর্যাস্ত দেখার জন্য।
মোহনা স্টিল বোর্ড মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাকির বেপারী জানান, আমরা সকল নিয়ম-নীতি মেনে এখান থেকে বোর্ডগুলো ছেড়ে যাই। সকাল ৭ টা থেকে বিকাল ৬ টা পর্যন্ত আমরা পর্যটকদের আনা ও নেওয়া করি। এই সিজনে যাত্রী খুব একটা বেশি হয় না, যাত্রী হয় শীতকালীন সময়ে, যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য আমাদের প্রত্যেকটি বোর্ডে রয়েছে ১৫ টি করে লাইভ জ্যাকেট ও ৫ টি করে রিং বয়া। ইতিমধ্যে আমাদের সমিতি সমবায় কর্তৃক নিবন্ধন হয়েছে, যার নাম্বার- ২ চাঁদ- ২২। যাত্রীদের আরও ব্যাপক নিরাপত্তার জন্য আমরা মাননীয় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও পৌর মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।