মেহেদী হাসান,ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব শ্যামাপুজা ও দীপাবলী আগামীকাল সোমবার। এই দীপাবলী ঘিরে
অশুভ শক্তি দুর করে চারিদিক আলোকিত করতে দীপাবলীতে সন্ধা ও রাতে তারা প্রতিটি বাড়ী এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জ্বালানো হয় প্রদিপ।
জানাগেছে,দীপাবলি কথাটি এসেছে” দীপ” এবং “ওয়ালি”এই দুই শব্দের সন্ধি করে। দীপ কথার অর্থ প্রদীপ এবং ওয়ালি কথার অর্থ সারি । অর্থাৎ দীপাবলি কথার অর্থ প্রদীপের সারি ।
তাই দিপাবলির রাতে সারি সারি প্রদীপ জ্বালিয়ে বাড়ী এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চারপাশের সকল অন্ধকার দূর করা হয়।
শ্যামা (কালি) পুজা, দীপাবলি উৎসব উপলক্ষে প্রতি বছর কালি পুজার সময় আমাবস্যার রাতে সকল অন্ধকার দুর করতে এই প্রদীপ জ্বালানো হয়ে থাকে।
এ উপলক্ষে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে মাটির তৈরী প্রদীপ বেচা-কেনার ধুম পড়েছে। এক সময় এই মাটির প্রদীপের ব্যাপক প্রচলন থাকলেও; বর্তমান সময়ে আধুনিকতার কারণে এই যুগে ইলেক্ট্রনিক্স মরিচ বাতি ব্যবহার বেড়েছে।
রামায়ণ অনুসারে রামচন্দ্র পিতার আদেশ রক্ষা করার জন্য চৌদ্দ বছরের জন্য বনবাসে গিয়েছিল সীতার সঙ্গে। রাম সীতাকে ফিরে পাওয়ার জন্য রাবনের সঙ্গে লড়াই করে তাকে হত্যা করে হনুমান, বিভীষণ, বানর রাজা সুগ্রীব এবং অন্যান্য বানর সেনার সাহায্য নিয়ে তার প্রানের প্রিয়া সীতাকে ফিরে পান।
শ্রীরামচন্দ্রের চৌদ্দ বছরের দীর্ঘ বিরহে অযোধ্যাবাসী যখন কাতর হয়েছিলেন, তখন তিনি বনবাসলীলা শেষ করে অশুভ পরাশক্তিকে নাশ করার পর দামোদর মাসে (কার্তিক মাস) কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা তিথিতে তিনি অযোধ্যা নগরীতে তার প্রাণপ্রিয় ভক্তদের মাঝে ফিরে আসবেন। শ্রীরামচন্দ্রের আগমন বার্তা পেয়ে রাজা ভরত সমগ্র নগরে উৎসবের ঘোষণা দিলে সমগ্র নগরী আলোর উৎসবের সাজে সজ্জিত হয়ে ওঠে। সব অমঙ্গল, অকল্যাণ দ‚র হবে এই শুভ কামনায় পথে পথে, বাড়িতে বাড়িতে, গাছে গাছে সর্বত্রই মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখেন অযোধ্যাবাসী। শ্রীরামচন্দ্র অমাবস্যার অন্ধকারে প্রত্যাবর্তন করবেন, তাই সমগ্র অযোধ্যা নগরী আলোর প্রদীপ দিয়ে সাজানো হয়, যেন তাদের প্রাণপ্রিয় শ্রীরামচন্দ্র অমাবস্যার অন্ধকার দ‚র করে মঙ্গলময় আলোকে নগরীতে প্রবেশ করেন। যা পরবর্তীতে প্রতি বছর এই দিনটি দীপাবলী হিসেবে পালন করে আসছেন। তারা সেই দিনে প্রদীপ জ্বালানোসহ নানা শব্দবাজি বা ফটকা ফোটান এবং রং মশাল জ্বালান।
ফুলবাড়ী পৌর এলাকার পাল পাড়া গ্রামের অশোক কুমার পাল জানান, শ্যামাপ‚জা ও দীপাবলী উপলক্ষে প্রতি বছর তিনি মাটির তৈরি দিয়ার (প্রদীপ) তৈরি করেন এবং বিক্রি করেন। এবার তিনি ৫ হাজার দিয়ার তৈরি করেছেন।
তিনি আরও বলেন, মাটির তৈরি দিয়ার প্রতি’শ (১০০পিছ) ১০০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। তিনি ছাড়াও আরও অনেকেই এই মাটির তৈরি দিয়ার বানিয়ে বিক্রি করেন। তবে বর্তামানে ইলেকট্রনিক্স বিভিন্ন ধরনে মরিচ বাতি বাজারে পাওয়া যাওয়ার কারণে মাটির তৈরি দিয়ার বিক্রি কিছুটা কম হলেও এর কদর এখনও রয়েছে।
ফুলবাড়ী পৌর বাজারে মাটির তৈরি দিয়ার কিনতে আসা রিতা রানী রায় বলেন, তিনি ১০০ পিছ দিয়ার কিনেছেন। আগামী সোমবার সন্ধ্যায় এই দিয়ারে তেল দিয়ে তুলা কিংবা কাপড়ের সলতে বানিয়ে প্রদীপ প্রজ্জলন করবেন। তবে প‚র্বে বেশী করে প্রদীপ জ্বালালেও এবার কম জ্বালাবেন কারণ তেলে দাম বেশী।
ফুলবাড়ী কেন্দ্রীয় কালী মন্দিরের পুরোহিত সুধামা উপাধ্যায় জানান, এই দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ফিরে আসা এব সকল অশুভ শক্তিকে বিনাশ করে আলোয় আলোময় করতে এই প্রদীপ জ্বালানো হয়।
তিনি আরও বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারেও নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে শ্যামাপ‚জা ও দীপাবলী উদযাপন করা হবে।
প্রেরক:
মেহেদী হাসান
ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)প্রতিনিধি
মোবাইল:০১৭৭০০৭০১১১