পরিবেশ সুরক্ষায় সচেতনতা বাড়াতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের এগিয়ে আসা উচিত: আশিক খান

 

পরিবেশ মানবসভ্যতার এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সভ্যতার ক্রমবিকাশ থেকেই মানুষ ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছে তার পরিবেশ। মানুষের রচিত পরিবেশ তারই সভ্যতার বিবর্তনের ফসল। পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উদ্ভিদ ও প্রাণী জীবনের বিকাশ ঘটে। তাই পরিবেশ ও মানুষের মধ্যে রয়েছে এক নিবিড় যোগসূত্র। কিন্তু দিনদিন বিশ্বজুড়ে ঘনিয়ে আসছে পরিবেশ-সংকট। মানুষের সৃষ্ট যন্ত্রসভ্যতার গোড়াপত্তন থেকেই চলছে পরিবেশের ওপর মানুষের নির্মম কুঠারাঘাত। ফলে নষ্ট হচ্ছে প্রকৃতির ভারসাম্য। পরিবেশ দূষণের মাত্রা প্রকট হওয়ার কারণে মানবসভ্যতা আজ হুমকির সম্মুখীন। এ থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে চলছে নানা গবেষণা। এ লক্ষ্যে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্য জাতিসংঘ ৫ জুনকে ঘোষণা করেছে “বিশ্ব পরিবেশ দিবস” হিসেবে। ৩৬৫ দিন পরিবেশ দুষন করে ১ দিনে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করে পরিবেশ দূষন রোধ করা সম্ভব নয় বলে আমি মনে করি।

বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, শব্দ দূষণ, মাটি দূষণ, খাদ্য দূষণ, আর্সেনিক দূষণ, তেজস্ক্রিয় দূষণ, ওজোন গ্যাস হ্রাস, গ্রিন হাউস ইফেক্ট ইত্যাদি সবকিছুই পরিবেশ দূষণের অন্তর্ভুক্ত। বস্তুত মানব সৃষ্ট বিভিন্ন কারণই পরিবেশ দূষণের জন্যে বিশেষভাবে দায়ী।

ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য  বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তে পরিবেশ দূষন বন্ধে সচেতনতা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। পরিবেশ দূষণ রােধ করার জন্যে সারাবিশ্ব সচেতন হয়ে উঠেছে। পরিবেশ দূষণের ফলে বিশ্বের বিভিন্নস্থানে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল তার পরিপ্রেক্ষিতে দূষণ রােধ করার প্রচেষ্টা চলেছে। আমাদের দেশে এ ব্যাপারে সচেতনতার সৃষ্টি হচ্ছে। সরকার এ ব্যাপারে বিভিন্ন ব্যবস্থা ও কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। যেমন :

পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ (২০০২) ঘােষণা ও আইন করা হয়েছে।

টু-স্ট্রোক যানবাহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসব যানবাহনের নির্গত ধোঁয়ায় কার্বন-ডাইঅক্সাইড, সিসা, কার্বন এ মনােঅক্সাইডসহ ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ পরিবেশকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছিল।

পরিবেশ দূষণরােধে সিএনজি জ্বালানির ব্যবহার আরম্ভ করেছে।

মেয়াদ উত্তীর্ণ যানবাহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বনায়ন কর্মসূচির ব্যাপক সম্প্রসারণ করা হয়েছে।

পরিবেশ আদালত গঠন করা হয়েছে। এ আদালতের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দেশে পরিবেশ অপরাধের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা।

সরকার দেশের পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশােধন) বিল ২০০২’ এবং পরিবেশ আদালত(সংশােধন) বিল ২০০২’ নামে দুটি আইন পাস করেছে।

জলবায়ুর পরিবর্তন বিষয়ক আন্তর্জাতিক কর্মশালার আয়ােজন করেছে।

 

সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয় পরিবেশ দূষন রোধ করা। তাই আমাদের সর্বক্ষেত্র থেকে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করতে হবে। স্কুল কলেজ এর পাশাপাশি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান (মসজিদ, মন্দর, গীর্জা) থেকে দূষন বন্ধে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

পরিবেশ সুরক্ষা কুরআনের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও আজকাল সেগুলোর চর্চা খুব একটা হয় না। এ জন্য মসজিদ-মাদ্রাসা, মন্দির, গীর্জা থেকেই পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন শুরু করতে হবে।

পরিবেশ সুরক্ষার জন্য রাসূল (সা.) বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন।

– বৃক্ষরোপণের ব্যাপারে তিনি জোর দিয়েছেন।

– বৃক্ষ নিধন নিরুৎসাহিত করেছেন।

–  পবিত্রতা বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে নবী করিম গুরুত্ব দিয়েছেন। আমরা যেন সমাজটাকে পরিচ্ছন্ন রাখি এটাকে “ইমানের অঙ্গ “বলা হয়েছে। যেমন-আমরা যদি যত্রতত্র ময়লা না ফেলি বা পলিথিন ফেলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না করি তাহলে কিন্তু আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে।

একজন সাহাবি জানতে চেয়েছেন, হে নবি (সা.)! উত্তম কাজ সম্পর্কে আমাকে বলুন। রাসূল (সা.) বললেন, মানুষকে কষ্ট দেয় এমন যে কোনো বস্তু রাস্তা থেকে সরিয়ে ফেল।

এ হাদিসের ওপর যদি আমরা আমল করতে পারি তাহলে তো আমাদের রাস্তাগুলো ঝকঝক করত। ড্রেন নর্দমায় প্লাস্টিক আটকিয়ে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকতো না।

আসলে সচেতনতার অভাব।  এক্ষেত্রে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কর্নধরদের উদ্যোগী হওয়ার সময় এসেছে। আলেম, পন্ডিত সহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধানগন উদ্যোগ নিলে সব মহলেই সচেতনতা বাড়বে এবং পরিবেশ সুরক্ষার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বড় ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি।

সচেতনতায়,
আশিক খান,
প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আন্দোলন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আজকের দিন-তারিখ
  • রবিবার (সন্ধ্যা ৭:০৫)
  • ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৯শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০