বিদ্যুৎস্পর্শে মা-বাবা-বোন মারা গেলেও বেঁচে আছে শিশুটি

মারুফ সরকার , স্টাফ রিপোর্টার:রাজধানীতে ঘটে গেল মর্মান্তিক ঘটনা। বৃহস্পতিবার রাতে তীব্র বৃষ্টির কারণে জমে থাকা পানিতে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎস্পর্শে একই পরিবারের তিনজনসহ চারজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তবে এ ঘটনায় অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছে পরিবারটির সর্বকনিষ্ঠ সদস্য ৭ মাসের শিশু হোসাইন।

বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টার দিকে মিরপুরে ঢাকা কমার্স কলেজ সংলগ্ন হাজী রোড ঝিলপাড় বস্তিতে এ ঘটনা ঘটে। এতে বিদ্যুতায়িত হয়ে আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন।

নিহতরা হলেন, সিএনজি অটোরিকশাচালক মো. মিজান (৩০), তার স্ত্রী মুক্তা বেগম (২৫), মেয়ে লিমা (৭) এবং তাদের উদ্ধার করতে যাওয়া, মোহাম্মদ অনিক (২০)।

স্থানীয়রা জানান, ঘটনার পর শিশুটিকে প্রথমে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার চিকিৎসা শেষে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। শিশুটি এখন ভালো আছে।

জানা গেছে, ওইদিন সিরাজিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার বিপরীত পাশে বাবার ভাড়া বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন মুক্তা। তাকে নিতে শ্বশুরবাড়ি আসেন স্বামী মিজান। রাতের খাবার শেষ করে সাড়ে ৯টার দিকে ভারী বৃষ্টির মধ্যেই দুই সন্তানকে নিয়ে চিড়িয়াখানা এলাকায় নিজেদের ভাড়া বাসার উদ্দেশে রওনা দেন মিজান ও মুক্তা। পথে বৃষ্টির পানিতে ডুবে থাকা বৈদ্যুতিক তারের সঙ্গে বিদ্যুতায়িত হয়ে মিজান, মুক্তা ও তাদের কন্যা সন্তান লিমা মারা যান। তবে বেঁচে যায় শিশুপুত্র হোসাইন।

সিরাজিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে চোরাই লাইনের মাধ্যমে পাশের ঝিলপাড় বস্তিতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া হয়েছে। মাদ্রাসার দেয়ালের ভেতর দিয়ে বৈদ্যুতিক তার নেওয়া হয়েছে, যাতে সিমেন্ট দিয়ে প্রলেপ দেওয়া রয়েছে। তারের কিছু অংশ সেই প্রলেপের ওপরও বেরিয়ে রয়েছে। মূলত বৃষ্টির পানিতে তারের এ অংশ ডুবে গিয়ে এখান থেকেই ঘটেছে বড় দুর্ঘটনাটি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই রোডের ফুটপাত দিয়ে দেয়াল ঘেঁষে বাসায় যাচ্ছিলেন মো. মিজান, তার স্ত্রী ও দুই সন্তান। মিজানের কোলে ছিল কন্যা সন্তান লিমা, আর মুক্তার কোলে ছিল সাত মাসের ছেলে হোসাইন। মাদ্রাসার দেয়ালের শেষপ্রান্ত ও ভাই ভাই সুপার কফিসপ অ্যান্ড কনফেকশনারির সামনের আসতেই তারা পানিতে ছটফট করতে থাকেন। দূর থেকে অনেকেই এ ঘটনার ভিডিও করতে থাকেন। সেসময় অনিক নামে একজন এগিয়ে আসলে পরে তিনিও বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যান।

সেখানকার দোকানদার মো. জামাল হোসেন সংবাদমাধ্যমকে জানান, তারা ছটপট করতে করতে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মারা যান।

নিহত মিজানের বাবা নাছির হাওলাদার সংবাদমাধ্যমকে, গত বুধবার রাতে মিজান বরিশাল থেকে এসেছে। এরপর বউ-বাচ্চাদের নিয়ে শ্বশুরের বাসা থেকে নিজেদের বাসায় ফিরছিল। নিজ গ্রাম বরিশালের ঝালকাঠি থানার বিকনার গ্রামে তাদের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে।

মিজানের শ্বশুর ও মুক্তার বাবা মো. লিটন মিয়া সংবাদমাধ্যমকে বলেন, মেয়ে ও জামাইয়ের সঙ্গে দুপুরে কথা হয়। তারা চিড়িয়াখানার দিকে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে ভাড়া থাকত। সেখানে যাওয়ার সময় আমার মেয়ে, জামাই ও নাতনি মারা যায়।

এদিকে এ দুর্ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, একটি শিশুকে পানি থেকে তোলা হচ্ছে। এ ছাড়া অন্য এক জায়গায় ৩ জন পড়ে আছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকেই বৃষ্টিতে অচল হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা। আর এতে রাজধানী বিভিন্ন সড়কে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। ফলে বিভিন্ন সড়কে যানবাহন চলাচলে দেখা দেয় ধীরগতি। যার পরিণতি ভয়াবহ যানজট। আর এতে ভোগান্তিতে পড়েন কর্মক্ষেত্র থেকে ঘরে ফেরা মানুষজন। লম্বা সময় ধরে একই স্থানে আটকে থাকে অসংখ্য যানবাহন।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বৃষ্টি থাকবে আরও দুই দিন। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারী বর্ষণের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, আগামীকাল শুক্র ও শনিবার রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আজকের দিন-তারিখ
  • শনিবার (রাত ৯:৪৫)
  • ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ২৫শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১