তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরে দীর্ঘদিন ধরে ভূয়া ডাক্তার সেজে রোগীদের চিকিৎসা সেবা ও গর্ভবতী নারীদের সিজারের মত কঠিন অপারেশন করে আসছিলো মহানগর ক্লিনিকের ম্যানেজার মামুনুর রশিদ।তার অপারেশনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ অন্যতম মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে গা ঢাকা দিয়েছেন তিনি। মামুনের বাড়ি আমশো গ্রামে। সে শুধু ক্লিনিক না মুন্ডুমালা সহ বিভিন্ন এলাকায় বাড়িতে গিয়ে দিতেন চিকিৎসা এই মামুন। তার এই ভিডি কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে টনক নড়ে। এরপর থেকেই মালিক হেলাল, ও মামুন গা ঢাকা দিয়েছেন। ভিডিওর পর থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে চলে রফাদফা। এদিকে শনিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পংকজ চন্দ্র দেবনাথ মহানগর ক্লিনিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও মালিক হেলাল কে ম্যানেজার মামুনের বিরুদ্ধে মামলা করতে বলেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তানোর পৌর সদরে দীর্ঘ দিন ধরে মহানগর ক্লিনিক নামের প্রতিষ্ঠান টি রমরমা ভাবে ব্যবসা করে আসছিল। ক্লিনিকের মালিক হচ্ছেন রাজশাহী শহরের হেলাল উদ্দিন । আগে ভাড়া হিসেবে সিনেমা হলের দক্ষিণে সাইদুরের বাড়িতে ছিল। পরে নিজস্ব ভাবে জায়গা কিনে মেডিকেল মোড়ের উত্তরে আমশো গ্রাম এরিয়ায় তিন তলা ভবন তৈরি করা হয়। এই ক্লিনিকে ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় পৌর এলাকার আমশো গ্রামের মামুন নামের ব্যক্তিকে।মামুন দীর্ঘদিন ধরে মহানগর ক্লিনিকে ম্যানেজারের ছত্রছাঁয়ায় থেকে ভূয়া ডাক্তার সেজে চিকিৎসার নামে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা জালিয়াতি করে আসছিলো। ক্লিনিকের সামনে ও উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ও মোড়ে মোড়ে শহরের বড় বড় ডাক্তারের নাম লিখে চিকিৎসা করানো হয় বলে সাইনবোর্ড লাগিয়ে রেখেছেন।
এছাড়া অল্প মূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয় মহানগর ক্লিনিকে বলে ঢাক ঢ়ল পিটিয়ে মাইকে প্রচার করা হয়ে থাকে। অথচ ডাক্তার তো দূরের কথা একটা ভালো মানের নার্স পর্যন্ত নেই এই মহানগর ক্লিনিকে। যদি জরুরী কোন গর্ভবতী রোগী আসে তাহলে মামুন নিজে গর্ভবতী রোগীদের সিজারিয়ান অপারেশন করতেন। এতে করে কোন সিজারিয়ান অপারেশন সফল হতো। আবার কোন রোগী মারাও যেতো। তবে সফল সিজারিয়ান অপারেশনের থেকে মৃত্যু হয়েছে বেশির ভাগ গর্ভবতী রোগীর। কিন্তু রোগীর স্বজনরা কেউ প্রতিবাদ করতে পারেনা। কেউ কেউ প্রতিবাদ করলেও তাদের রাতারাতি ম্যানেজ করে ফেলতেন ম্যানেজার মামুন। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বেশকিছু স্থানীয়রা জানান,
এই ক্লিনিকে রোগী আসার সাথে সাথে রোগীর স্বজনদের কাছে থেকে আগেই মুচলেকা লিখে নিতেন এই মামুন। যাতে করে রোগী মারা গেলে রোগীর স্বজনরা কোন প্রকার ক্লিনিককে দায়ী করে অভিযোগ করতে না পারে। সেই জন্য মুচলেকা টি লিখে নেয়া হতো। পাশাপাশি মামুনের বাড়ি স্থানীয় আমশো গ্রামে হওয়ায় ক্লিনিকে সাংবাদিক তো দূরের কথা সাধারণ মানুষকেও প্রবেশ করতে দেয়া হতনা। এমনকি এই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে কোন সাংবাদিক সংবাদ প্রকাশ করে তাহলে সেই সাংবাদিককে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি ও লাঞ্ছিত করতে ছাড়েন না ক্লিনিকের ম্যানেজার মামুন। তিনি এসব করে হয়েছেন অঢেল সম্পদের মালিক। কিনেছেন দামিদামি জায়গা জমিও।
তানোর মহানগর ক্লিনিকের পরিচালক হেলাল উদ্দিনের কাছে ক্লিনিকের ম্যানেজার হয়ে মামুন কি ভাবে অপারেশন করে, সে কি ডাক্তার অপারেশন করছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, না মামুন ক্লিনিকের ম্যানেজার সে অপারেশন করতে পারবে না। আপনার অনুমতি নিয়েই তো অপারেশন করেন প্রশ্ন করা হলে এড়িয়ে সাক্ষাতে কথা হবে। বিষয়টি নিয়ে তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি কামরুজ্জামান মিয়া জানান,ঘটনাটি শোনার পরে ক্লিনিকে গিয়ে দোষী ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি, তার পরেও কেউ বাদী হয়ে অভিযোগ দেয়নি, অভিযোগ পেলে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পংকজ চন্দ্র দেবনাথ জানান, এঘটনায় দশ হাজার টাকা জরিমানা ও মামুনের বিরুদ্ধে মালিক হেলালকে মামলা করতে বলা হয়েছে। এঘটনা ছড়িয়ে পড়লে হতবাক স্হানীয়রা। কারন মামুন এর আগে অনেক নবজাতকের ও গর্ভবতীর মৃত্যু হয়েছে।
এবিষয়ে সিভিল সার্জন আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান আমরা অল্প সময়ের মধ্যে মহানগর ক্লিনিকের বিরুদ্ধে আইনগত সকল ধরনের ব্যবস্হা নেওয়া হবে।