প্রেস বিজ্ঞপ্তি
মাইজভাণ্ডারী গাউসিয়া হক কমিটি বাংলাদেশ’ নিউ ইংল্যান্ড শাখার আয়োজনে গত রোববার ম্যাসাচুসেটসের ওয়াটার টাউনের হিবারনিয়ান হলে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো ‘পবিত্র শোহাদা-ই-কারবালা’ মাহফিল।প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাইজভান্ডার দরবার শরীফ গাউসিয়া হক মঞ্জিলের সাজ্জাদানশীন ও ‘শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.) ট্রাস্ট (এস জেড এইচ এম ট্রাস্ট)’-এর ম্যানেজিং ট্রাস্টি হযরত শাহ্ সুফি সৈয়দ মোহাম্মদ হাসান মাইজভাণ্ডারী (মা.জি.আ.)। মাহফিল পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও বেইনের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ নোমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সংগঠনের সাধারন সম্পাদক জোবাইর হোসাইন সিকদারের সঞ্চালনায় প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্যের নর্থহ্যাম্পটন আল নূর ইসলামিক স্কুল-এর পরিচালক বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ও গবেষক শাইখ সাইফুল আযম আজহারী। মাহফিলে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ক্যামব্রিজের ইসলামিক সেন্টার অব রিঞ্জ এভেনিউ-এর খতিব আল্লামা মুফতি সৈয়দ ইআওয়ার রাজভি এবং ইসলামিক সেন্টার অব মেড ফোর্ডের খতিব হাফেজ আল্লামা আহসান ওয়ারিস।অনুষ্ঠানে হামদ ও নাত পরিবেশন করেন সিরাজুম মনির আমরিন সুলতানা জেনী, রেহনুমা আহমেদ আরশী। প্রধান অতিথিকে সাইটেশন প্রদান করেন প্রজেক্ট হোপ ফর সাউথইষ্ট এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ড. হাই ভ্যান হা। অতিথিবৃন্দের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন সংগঠনের সদস্যবৃন্দ যথাক্রমে-এ কে এম ওয়াহেদী, আহমেদ নবী, মহিউদ্দিন চৌধুরী,ফরিদ খান ও কাজী আবসার উদ্দিন।
প্রধান অতিথি হযরত শাহ্ সুফি সৈয়দ মোহাম্মদ হাসান মাইজভাণ্ডারী (মা.জি.আ.) তাঁর বক্তব্যে বলেন, আল কোরআনে ত্বরিকত চর্চার হাকিকতঃ রূহানী উৎকর্ষ সাধনের ভিন্ন ভিন্ন পথ ও পন্থার অস্তিত্বের ইঙ্গিত পবিত্র কোরআনেই রয়েছে। ‘ত্বরিকত’ মানে আল্লাহর দিকে বান্দার প্রত্যাবর্তনের পথ। এই পথের দুটি দিক রয়েছে। জাহের ও বাতেন। বাহ্যিক শরীয়ত পালনের মাধ্যমে বান্দা তার জাহেরকে পবিত্র করে আর সাথে সাথে আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমে হাকীকতে শরীয়ত ও ধর্ম পালনের নিগুঢ়তম উদ্দেশ্য সাধনে ব্রতী হয়। এই চর্চাই সুফি ত্বরিকার মৌলিক ভাব। ‘ত্বরিকত’ ইসলাম ধর্মে কোন নব আবিষ্কার নয়। ইসলামের প্রথম যুগে আধ্যাত্মিক সাধনার ছায়ায় ত্বরিকতের হাকিকত বর্তমান ছিল। হযরত রাসুল (সাঃ) সাহাবাদেরকে ধর্মীয় দিকনির্দেশনার অংশ হিসেবে আধ্যাত্মিক সাধনার তালীম ও তারবিয়ত দিয়েছেন। এমনকি ‘বাইয়াতে ইসলাম’ গ্রহণের পরও সাহাবাদের কাছ থেকে হযরত রাসুল (সাঃ) বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যাপারে পুনঃ বায়াত গ্রহণ করেছেন।তিনি আল কোরআন ও হাদিসের আলোকে মাইজভাণ্ডারীয়া ত্বরিকতের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরে বলেন, ইসলাম ধর্মে আধ্যাত্মিক সাধনার সূদীর্ঘ পথ পরিক্রমায় কোরআন ও হাদীসের মৌলিক শিক্ষাকে আশ্রয় ও আত্মস্থ করে অনেক ত্বরিকার আত্মপ্রকাশ ঘটে। যেমন, কাদেরিয়া, মুজাদ্দেদীয়া, নকশবন্দীয়া, চিশতিয়া ইত্যাদি। এরই ধারাবাহিকতায় উনবিংশ শতাব্দির মধ্যভাগে কোরআন ও হাদীসের শিক্ষাকে অনুসরন করে গাউসুল আযম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ্ মাইজভাণ্ডারী (কঃ)-এর আধ্যাত্মিক শক্তি ও শিক্ষাকে ধারন করে একটি ত্বরিকা প্রচারের সূচনা হয়।হযরত শাহ্ সুফি সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভাণ্ডারী (রহঃ) বলেন,“এই ত্রিবিধ বেলায়তী ধারা, নবুয়তী ধারার সমন্বয়ে অর্থাৎ জাহের বাতেন তা’লীমে এরশাদী সহ শরিয়ত,ত্বরিকত, হাকিকত ও মায়ারেফত প্রভাবে ও সংমিশ্রণে মাইজভাণ্ডারীয়া ত্বরিকারূপ মহা সাগরের উৎপত্তি।”
এই ত্বরিকার প্রথম বুজুর্গ ও প্রচারক গাউসুল আযম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ্ (কঃ) নিজগ্রাম ‘মাইজভাণ্ডার’ এর কারণে ‘মাইজভাণ্ডারী’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাই তাঁর অনুসৃত ও প্রচারিত আধ্যাত্মিক সাধন পদ্ধতি বা তরিকা ‘মাইজভাণ্ডারীয়া ত্বরিকা’ হিসেবে জনসমাজে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে।মাইজভাণ্ডারীয়া ত্বরিকার মানব কল্যাণকামী বৈশিষ্ট্যঃ এই ত্বরিকা সিলাসিলার দৃষ্টিকোণে কাদেরিয়া ত্বরিকার সাথে সম্পর্কিত। অন্যান্য ত্বরিকার আত্মিক ও আধ্যাত্মিক বৈশিষ্টগুলো মাইজভাণ্ডারী ত্বরিকায় একত্রিত হয়েছে।এই ত্বরিকার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, এ ত্বরিকা ইসলামী ভাবাদর্শকে পরিপূর্ণভাবে আত্মস্থ করার পাশাপাশি একই সাথে অসাম্প্রদায়িক, উদার ও সংস্কারমুক্ত, নৈতিক ধর্ম-প্রাধান্যসম্পন্ন, শ্রেণী-বৈষম্যহীন ও মানবদরদী।
অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ও গবেষক শাইখ সাইফুল আযম আজহারী পবিত্র শোহাদা-ই-কারবালার মর্মান্তিক ঘটনাবলী উল্লেখ করে বলেন, ইমাম হোসাইন (রা.) কারবালার ময়দানে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে ইসলামের বাগানকে উর্বর করে গেছেন। সেই কারবালার ময়দানকে কেন্দ্র করে মু’মিনদের উদ্দেশ্যে আল্লামা ইকবাল বলেছেন ‘নকশে ইল্লাল্লাহা বার সাহারা নবীস/সাত্রে উনুয়া সে নাজাতে মা নবীস’ ইমাম হোসাইন (রা.) ৬১ হিজরীর ১০ মহররম কারবালার ময়দানে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র তৌহিদী নকশা এঁকেছেন। সে নকশা আঁকার জন্য হোসাইনের কাছে কোনো কাগজ ছিল না, কারবালার জমিনকে তিনি কাগজ বানিয়েছেন। তাঁর হাতে সেদিন লেখার কোনো কলম ছিল না, নিজের কলবকে কলম বানিয়েছেন, তাঁর হাতে কালি ছিল না, নিজের বুকের তাজা রক্তকে কালি বানিয়ে এমন এক নকশা অঙ্কন করেছেন যা সত্য ও ন্যায়ের অনুসারীদের দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা, আর অনাগত মুসলমানদের মনজিলে মাকসুদে পৌঁছার আলোকবর্তিকা।ইমাম হোসাইন (রা.)-এর অন্যায়ের বিরুদ্ধে দুর্বার সংগ্রাম ও প্রতিবাদ স্মরণ করিয়ে দেয় বদর, উহুদ ও খন্দকের ইতিহাস। যেমন সংগ্রামী ছিলেন সাহাবায়ে কেরাম। দ্বীনকে বিজয়ী করতে কেমন ইস্পাত কঠিন মনের অধিকারী ছিলেন তাঁরা। যাদের সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন- তাঁরা ফুরসানুন নাহার, রুহবানুল লাইল- দিনে সৈনিক, রাতে দরবেশ। সেই মহাবীর সাহাবায়ে কেরামের শ্রেষ্ঠ উত্তরসুরী, সত্যের কাণ্ডারী, দুর্বার সেনানায়ক ছিলেন ইমাম হোসাইন (রা.)।