কৃষি ঋণের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ ৮ ব্যাংক

বিগত ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি ৮টি ব্যাংক। এর মধ্যে একটি সরকারি ও সাতটি বেসরকারি ব্যাংক রয়েছে। 

ব্যাংকগুলো হলো- রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক, বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংক লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, সোশ্যাল ইলসামী ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংক।

কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ এসব ব্যাংকগুলোতে যে পরিমাণ অর্থ অব্যবহৃত আছে তা কৃষি উন্নয়ন তহবিলে (বাংলাদেশ ব্যাংক অ্যাগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট কমন ফান্ড-বিবিএডিসিএফ) জমা দিতে হবে। যা থেকে মাত্র ২ শতাংশ হারে সুদ দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ও পল্লী ঋণ বিষয়ক হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, এই ৮টি ব্যাংক ঋণ বিতরণে ব্যর্থ হলেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩২ হাজার ৮২৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকার কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। সার্বিকভাবে যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দুই হাজার ১৮ কোটি বেশি। গত অর্থবছরে ব্যাংক খাতের কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার ৮১১ কোটি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এবারও নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। অনেক ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে। আবার কিছু ব্যাংক কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। এরকম ব্যাংকের সংখ্যা আটটি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ বেসিক ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ কোটি টাকা। কিন্তু গত অর্থবছরে ব্যাংকটি কৃষি ঋণ দিয়েছে ৪৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা; যা নির্ধারিত লক্ষ্য মাত্রার ৯৬ দশমিক ৯০ শতাংশ।

বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫২১ কোটি টাকা। ব্যাংকটি দিয়েছে মাত্র ১৭৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৩৩ দশমিক ৮১ শতাংশ।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৯৫৭ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে ৭৩২ কোটি ৮ লাখ। যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৭৬ দশমিক ৫০ শতাংশ।

চতুর্থ প্রজন্মের গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের লক্ষ্য ছিল ২২৬ কোটি। কিন্তু ব্যাংকটি বিতরণ করেছে ৭৬ কোটি ৬৭ লাখ বা ৩৩ দশমিক ৯২ শতাংশ।

কৃষি ঋণে ব্যর্থ চতুর্থ প্রজন্মের আরেক ব্যাংক মধুমতি। গত অর্থবছরে ৯০ কোটি টাকার কৃষি ঋণ দেবে বলে লক্ষ্য ঠিক করেছিল। কিন্তু দিয়েছে মাত্র ৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা। যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

ন্যাশনাল ব্যাংক ৭৬০ কোটি টাকার কৃষি ঋণ দেবে বলে লক্ষ্য ঠিক করেছিল কিন্তু দিয়েছে মাত্র ২৬৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ ব্যাংক লক্ষ্য অর্জন হয়েছে মাত্র ৩৫ শতাংশ।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের লক্ষ্য ছিল ৬১২ কোটি টাকার, বিপরীতে বিতরণ করেছে ১৭১ কোটি। যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ২৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

ইউনিয়ন ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৯২ কোটি। সেখানে তারা ৫০ কোটি ৮৬ লাখ টাকার কৃষি ঋণ বিতরণ করতে সক্ষম হয়েছে। হিসাব অনুযায়ী ব্যাংকের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ১২ দশমিক ৯৭ শতাংশ কৃষি ঋণ বিতরণ করতে সক্ষম হয়েছে।

দেশের অর্থনীতি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। মোট দেশজ উৎপাদনে কৃষি খাতের অবদান প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশ। এমন বাস্তবতায় কৃষি খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়াতে প্রতিবছর কৃষি ও পল্লীঋণ নামে নীতিমালা প্রণয়ন করে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নীতিমালার আওতায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য পৃথক পৃথক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে এ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নও তদারকি করা হয়। প্রথা অনুযায়ী এবারও কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণের নীতিমালা জারি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী রোববার চলতি অর্থবছরের নতুন কৃষি নীতি ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত অর্থবছরের তুলনায় এই বছর ব্যাংকিং খাতে কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়াবে ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এই লক্ষ্যমাত্রা ধরা হবে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। কম সুদে কৃষকদের হাতে ঋণ পৌঁছাতে এবার ক্ষুদ্র ঋণদাতা সংস্থার (এমএফআই) ওপর বেসরকারি ব্যাংকের নির্ভরশীলতা আরও কমিয়ে আনা হচ্ছে। আর এজন্য ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্তত ৫০ শতাংশ কৃষিঋণ বিতরণ বাধ্যতামূলক করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা এতদিন ছিল ৩০ শতাংশ।

এছাড়া কৃষিঋণের কত অংশ কোন খাতে দিতে হবে, তাও নির্ধারণ করে দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আসছে কৃষি নীতিতে মোট কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রার কমপক্ষে ৬০ শতাংশ শস্য ও ফসল খাতে, ১৩ শতাংশ মৎস্য খাতে এবং ১৫ শতাংশ প্রাণিসম্পদ খাতে এবং বাকি অর্থ অন্যান্য খাতে বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে।

অগ্রাধিকার খাত বিবেচনায় অন্য ঋণের চেয়ে কৃষি ও পল্লীঋণের সুদহার তুলনামূলক কম। গত অর্থবছরে সুদহার নির্ধারণ করা ছিল সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ। তবে সব কৃষক এই সুদহারে ঋণ পাননি। কারণ ব্যাংকগুলোর এনজিও বা ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান (এমএফআই) নির্ভরতার কারণে দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের ঋণ পেতে গুনতে হয়েছে ২৪ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ। এত বেশি সুদে ঋণ নিয়ে কৃষকরা প্রকৃত অর্থে লাভবান হচ্ছেন, নাকি আরও ক্ষতির মুখে পড়ছেন- সেটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে অনেকের মধ্যে।

চলতি অর্থবছরের অন্যান্য ঋণের সঙ্গে কৃষিঋণের সুদহারের সীমাও তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে কৃষিঋণের সুদহারও নির্ধারিত হবে ‘সিক্স মান্থস মুভিং এভারেজ রেট’ বা স্মার্ট পদ্ধতিতে। নতুন এ নিয়মে ছয় মাসের (১৮২ দিন) ট্রেজারি বিলের গড় হার ধরে ঠিক হবে রেফারেন্স রেট। এর সঙ্গে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ২ শতাংশ যোগ করে কৃষিঋণের সুদহার নির্ধারণ করতে পারবে। এ নিয়মে জুলাই থেকে কৃষিঋণের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। এতে ব্যাংকের মাধ্যমে সরাসরি কৃষিঋণ বিতরণ করলেও সুদহার ১ শতাংশের বেশি বাড়বে। তার পরও এনজিও-নির্ভরতায় বিতরণ করা ঋণের সুদের তুলনায় এটি অনেক কম।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনুমোদনপ্রাপ্ত এমএফআই প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষুদ্রঋণের সর্বোচ্চ সুদহার নির্ধারণ করা আছে ২৪ শতাংশ। ফলে ব্যাংকের এনজিওর মাধ্যমে কৃষিঋণ বিতরণের ফলে কৃষকদেরও ২৪ শতাংশ সুদ গুনতে হয়। যদিও এই সুদের হার ২৪ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত উঠছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আজকের দিন-তারিখ
  • শনিবার (সন্ধ্যা ৬:৪৪)
  • ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০